নোবেলজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে বেনজির আক্রমণ করল জামায়াতে ইসলামী। রবিবার সেন তাঁর শান্তিনিকেতনের বাড়ি থেকে সংবাদ সংস্থাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যাতে তিনি প্রতিবেশী বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে ‘বন্ধু’ মুহাম্মদ ইউনূসের উপরে আস্থা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এবং তাঁদের উপাসনালয়গুলি ভাঙচুরের কঠোর নিন্দা জানিয়েছেন অমর্ত্য সেন। জামায়াতে ইসলামীর মতো মৌলবাদী দলকে বাংলাদেশের মানুষ যে বারে বারে পরাজিত করেছে, সে কথাও বলেছেন অমর্ত্য। তার পরেই জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান সোমবার ফেসবুক পোস্টে অমর্ত্যকে আক্রমণ করে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। বাংলাদেশের ‘দেশপ্রেমিক’ জনগন তা সহ্য করবেন না বলেও দাবি
করেছেন শফিকুর।
সাক্ষাৎকারে অমর্ত্য বলেছেন, “ঢাকায় আমি অনেক সময় কাটিয়েছি। ওখানে আমার স্কুলের শিক্ষা শুরু করেছিলাম। ঢাকার পাশাপাশি মানিকগঞ্জে আমার পৈতৃক বাড়িতে অনেক বার গিয়েছি। নিয়মিত বিক্রমপুরে, বিশেষ করে সোনারঙে গিয়েছি। ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে এ সব জায়গার খুব গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ তার বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলি কী ভাবে মোকাবিলা করবে, অন্য অনেকের মতো তা নিয়ে আমিও উদ্বিগ্ন।” জামায়াতের আমির শফিকুর অবশ্য লিখেছেন, ‘ভারতের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সম্প্রতি বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত নাক গলানোর মতো কথা বলেছেন। জানি না তাঁর বিবেক কোথায়? বাংলাদেশকে সহনশীলতার সবক দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। তিনি যে দেশে এবং সমাজে বসবাস করেন, সেই সমাজের আয়নায় নিজেকে দেখার চেষ্টা করুন।’
দেশে হিন্দুত্ববাদী মৌলবাদীরা অমর্ত্য সেনকে তাঁর ‘সেকুলার’ দৃষ্টিভঙ্গির জন্য আক্রমণ করে থাকে। ইসলামী মৌলবাদী দল জামায়াতে ইসলামীর আমিরও একই অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন আমর্ত্যকে নিশানা করে। শফিকুর লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ টানা সাড়ে ১৫ বছর সেকুলারিজ়মের নামে চরম ভণ্ডামি প্রত্যক্ষ করেছে।’ অমর্ত্য বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের উচিত হবে না আগের শাসক দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। করলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে সব ভুলের অভিযোগ উঠেছে, তারই পুনরাবৃত্তি হবে। কিন্তু অমর্ত্যের এই পরামর্শ মেনে নিতে পারেননি জামায়াতের আমির, ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিনি পতিত স্বৈরাচারের পক্ষে খোলামেলা ওকালতি করছেন। যা বিস্ময়কর, অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়।’
বাংলাদেশের বাহিনীর প্রশংসা করে অমর্ত্য বলেছেন, তারা যে সেনাশাসনের পথে যায়নি, সেটা প্রশংসনীয়। বলেছেন, “বাংলাদেশে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন হয়েছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগতি লক্ষ্যণীয়। এখানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্র্যাক ও গ্রামীণ ব্যাংকের মতো বেসরকারি সংস্থারও ভূমিকা রয়েছে।” ইউনূসের প্রসঙ্গে অমর্ত্য বলেন, “ইউনূস এক জন পুরনো বন্ধু। আমি জানি, তিনি খুবই দক্ষ এবং অনেক দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য মানুষ। তিনি বাংলাদেশের সেকুলারিজ়ম ও গণতন্ত্র নিয়ে সরব। তাঁর উপরে আমার
আস্থা রয়েছে।”
অমর্ত্য ইউনূসের উপরে আস্থা রাখলেও দিল্লি প্রবাসী বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ ভাষণে এই সরকারকে তুলোধনা করেছেন। সোমবার প্রকাশিত এই অডিয়োয় হাসিনা বলছেন— দেশে সরকারের অস্তিত্ব আছে কি না বুঝতে পারছেন না মানুষ। তাঁদের একটাই কাজ, আওয়ামী লীগের কর্মীদের বাড়িঘর লুটপাট করা, নির্যাতন করা। শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর দলের ১৫-২০ হাজার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হাসিনা। তিনি বলেন— “সর্বত্র তারা আয়নাঘর খুঁজে বেড়াচ্ছে, আর গোটা দেশকে আয়নাঘরের মতো বন্দিশালায় পরিণত করেছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)