সুনামি আসছে!
আজ সকালে ঘুম ভেঙেছিল এই সতর্কবার্তায়। খবরের চ্যানেল, বন্ধু-বান্ধবদের হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাস জুড়ে একটাই কথা—‘শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামি আসছে। উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দারা অবিলম্বে উঁচু জায়গায় চলে যান।’
এই আতঙ্কের উৎসস্থল জাপান থেকে বেশ কিছুটা উত্তর দিকে, রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের উপকূলে। জাপানের আবহাওয়া দফতর প্রথমে হোক্কাইডো থেকে শুরু করে ওসাকার কাছে ওয়াকায়ামা পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে প্রায় ১০ ফুট উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ার সতর্কতা জারি করেছিল। হোক্কাইডোর নেমুরো উপকূলে প্রথম ঢেউটি পৌঁছয়, উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার। পরে ইওয়াতে প্রদেশের কুজি বন্দরে সর্বোচ্চ ১.৩ মিটারের ঢেউ রেকর্ড করা হয়। টোকিয়ো উপসাগরেও ছিল ছোট ঢেউ। জারি করা হয় প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশিকা। তবে উপকূল ছাড়া টোকিয়ো, ওসাকা, কোবে, হিরোশিমার মতো শহরগুলোয় অফিস চলেছে স্বাভাবিক ভাবে। শুধু সেন্দাই বিমানবন্দর ও হোক্কাইডোর কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
২০১১-র তোহোকু অঞ্চলের সেই ভয়াবহ স্মৃতি জাপানের মানুষের মনে এখনও টাটকা। সে বার ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর প্রায় ৪০ মিটার উঁচু সুনামির ঢেউয়ে ১৮ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রে ঘটেছিল বিপর্যয়। তার পর থেকেই জাপান নিজেদের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে প্রায় দুর্ভেদ্য করে তুলেছে। রয়েছে জাপানের ‘আর্থকোয়েক আর্লি ওয়ার্নিং’ ব্যবস্থা, যা ভূমিকম্পের প্রাথমিক তরঙ্গ শনাক্ত করে মূল কম্পন আসার আগেই দেশজুড়ে মোবাইল, টিভি ও রেডিয়োয় সতর্কবার্তা পাঠিয়ে দেয়। রয়েছে ভবন নির্মাণের কঠোর বিধি। ভূমিকম্প-রোধী বাড়ি ও উঁচু কংক্রিটের ‘উল্লম্ব আশ্রয়স্থল’ উপকূলবর্তী নিচু এলাকার মানুষদের জন্য সুরক্ষাকবচ। আজ ফুকুশিমা দাইচি পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জল নিষ্কাশন সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করা হয়। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সুনামি বারবার আঘাত হানতে পারে।
একটা অন্য কথা বলে শেষ করি। আজ ল্যাবে পৌঁছনোর পর ফরাসি বন্ধুটি ভয়ার্ত গলায় বলেছিল, ‘‘খবরটা দেখেছো? সুনামি...।’’ বললাম, ‘‘হ্যাঁ।’’ ও জানতে চাইল, বিশেষ কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে কি? তবে আমরা চিন্তায় থাকলেও আশপাশের জাপানি বন্ধু, দোকানদার—সবাই স্বাভাবিক। যেন কিছুই হয়নি, যেন রোজকার ঘটনা।
গবেষক, রিকেন পাইওনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, টোকিয়ো
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)