চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারে বাংলাদেশ-আমেরিকার সামরিক মহড়া শেষ হল। বাংলাদেশ বিমানবাহিনী এবং আমেরিকার প্যাসিফিক এয়ারফোর্সের সাত দিনব্যাপী এই মহড়া— ‘অপারেশন প্যাসিফিক অ্যাঞ্জেল ২৫-৩’-এর আজই ছিল শেষ দিন। কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, চিনের উপরে নজরদারি চালাতে এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি রুখতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এখন আমেরিকার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চলতি মাসের ১০ তারিখ ইউএস–বাংলা এয়ারলাইন্সে কমপক্ষে ১২০ জন আমেরিকান সেনা (স্থল ও বায়ু) চট্টগ্রামে পৌঁছয়। বাংলাদেশ অভিবাসন বিভাগ সূত্রের খবর, অভিযোগ উঠেছে, আমেরিকার সামরিক পরিবহণ বিমানে সেনাদের দেশে প্রবেশে পাসপোর্ট পরীক্ষা ছাড়াই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা আইনগত ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। সূত্রের খবর, শতাধিক আমেরিকান সেনাকে রাখার জন্য র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ হোটেলে ৮৫টি ঘরের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু হোটেলের নথিতে অতিথিদের নাম-পরিচয় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। যদিও হোটেল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর আমেরিকার ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের বায়ুসেনার সদস্যদের সঙ্গে বিএএফেরও উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে বলে খবর।
একটি সূত্রের খবর, বাংলাদেশ-আমেরিকা সামরিক মহড়ায় ছিল সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস ব্যবহার করা হয়েছে। একটি মিশরীয় পরিবহণ বিমানও মহড়া চলাকালীন শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নেমেছিল। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরে যাবেন আমেরিকার ওই সেনারা। বাংলাদেশের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, উড়ান প্রশিক্ষণ অনুশীলন, কমব্যাট ট্র্যাকিং, সারভাইভাল এক্সারসাইডজ় হয়েছে। গত কাল আকাশ, স্থল ও যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলার বিভিন্ন ধরনেরমহড়া হয়।
কূটনৈতিক এবং সমর বিশেষজ্ঞদের এক অংশের মতে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের গুরুত্ব আমেরিকার কাছে এখন বাড়বে। ভারত মহাসাগরে চিনের সামরিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির কারণে ওই অঞ্চলে নজরদারি চালাতে চায় আমেরিকা। ভারতের প্রাক্তন সেনা অফিসার তথা ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাসে নিযুক্ত প্রাক্তন প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা অরুণ রায়ের কথায়, ‘‘মূলত চিনের উপর নজরদারির জন্য কক্সবাজারে আমেরিকা এই মহড়া চালাচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভারতেরও চিন্তা রয়েছে। কারণ, ওই জায়গা থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উপরেও নজরদারি সহজেই করা যায়। মায়ানমারে মানবিক করিডরের বিষয়টিও আমেরিকার মাথায় আছে। নিয়মিত সামরিক মহড়া ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের মতো নিরাপত্তা বিষয়ক সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এই অঞ্চল আমেরিকার আগ্রহের বড় কারণ।’’
বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রির বক্তব্য, ‘‘শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি ছিল না। কিন্তু ইউনূস জমানায় আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের ‘নন ডিসক্লোজ এগ্রিমেন্ট’ হয়েছে। কেউ জানে না, তাতে কী শর্ত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকার সামরিক মহড়া নিয়ে দিল্লির উদ্বেগের কারণ থেকেই যায়। কিছু দিন আগে পাক সেনাপ্রধান বলেছিলেন, এ বার পূর্ব দিক থেকে অপারেট করা হবে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকা বাংলাদেশে কাকে কী ধরনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তার অবকাশ রয়েছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)