Advertisement
E-Paper

বারো ঘণ্টা পরে জঙ্গিমুক্ত হোটেল

কাল রাতে তখন সবে নৈশভোজ পরিবেশন শুরু হয়েছে। কাবুলের অন্যতম জনপ্রিয় এই বিলাসবহুল হোটেলে আচমকাই ঢুকে পরে সেনার পোশাক পরা পাঁচ জন জঙ্গি। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৪৪
প্রাণ-বাঁচাতে: বারান্দা দিয়ে পালানোর চেষ্টা এক ব্যক্তির। রয়টার্স

প্রাণ-বাঁচাতে: বারান্দা দিয়ে পালানোর চেষ্টা এক ব্যক্তির। রয়টার্স

বাঘ-এ বালা এলাকার পাঁচতারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। দেশ-বিদেশের অতিথিতে সব সময়ই গমগম করে হোটেল চত্বর। কাল রাতে তখন সবে নৈশভোজ পরিবেশন শুরু হয়েছে। কাবুলের অন্যতম জনপ্রিয় এই বিলাসবহুল হোটেলে আচমকাই ঢুকে পরে সেনার পোশাক পরা পাঁচ জন জঙ্গি। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে তারা। হোটেলের কিছু অতিথিকে বন্দিও বানিয়ে ফেলে ওই পাঁচ জন।

প্রায় বারো ঘণ্টা লড়াই চালিয়ে আজ সকালে গোটা হোটেল চত্বরকে জঙ্গিমুক্ত করেছে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সব জঙ্গিকে বাহিনী খতম করলেও হামলায় মারা গিয়েছেন ১৯ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৬ বিদেশিও। তবে তাঁরা কোন কোন দেশের নাগরিক, তা জানা যায়নি। জঙ্গি হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে নয়াদিল্লি। এ-ও বলেছে, যারা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। গত কালই রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারত ইসলামাবাদকে এক হাত নিয়ে জানিয়েছিল, আফগানিস্তানের মাটিতে নয়াদিল্লি যৌথ ভাবে উন্নয়নের কাজ করছে৷ আর তাতে বাগড়া দিচ্ছে পাকিস্তানের হিংসাত্মক কার্যকলাপ৷

আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রক প্রথমে এই হামলার দায় হক্কানি গোষ্ঠীর উপর চাপিয়েছিল। কিন্তু তালিবানের মুখপাত্র জাইবুল্লাহ মুজাহিদ ই-মেলে জানিয়েছে, তাদের পাঠানো চার জঙ্গিই কালকের হামলায় জড়িত ছিল। মেল বার্তায় আরও হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, আফগানিস্তান থেকে বিদেশি বাহিনী না সরানো হলে এই ধরনের হামলা আরও বেশি করে হবে।

১৯৬০ সালে তৈরি এই হোটেলটিতে এর আগেও জঙ্গি হামলা হয়েছিল। ২০১১ সালে তালিবানই হামলা চালিয়েছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে। সে বার ২১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কাল রাতে যখন জঙ্গিরা হোটেলের ভিতর তাণ্ডব চালাচ্ছে, সেই ছবি সরাসরি দেখাচ্ছিল এক স্থানীয় টিভি চ্যানেল। সেখানেই দেখা গিয়েছে, ছ’তলা হোটেলের বারান্দা থেকে বিছানার চাদর বেঁধে এক এক করে নেমে আসছেন অতিথিরা। হোটেলের পিছন থেকে তখন গলগল করে কালো ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই হেলিকপ্টার করে সেনা বাহিনীর কম্যান্ডোরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। আফগান অভ্যন্তরীণ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, মোট দেড়শো জনকে কাল হোটেল থেকে সুরক্ষিত ভাবে বার করে আনা সম্ভব হয়েছে। যাঁদের মধ্যে ৪০ জন বিদেশি ছিলেন।

আজ তথ্যপ্রযুক্তির উপর একটি সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল হোটেলটিতে। সেই উপলক্ষে দেশের বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব কাল থেকে ওই হোটেলেই ছিলেন। আফগান টেলিকম সংস্থার প্রাদেশিক ডিরেক্টর আজিজ তায়েব তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি জানালেন, নিজের চোখেই জঙ্গিদের হোটেলে ঢুকতে দেখেছেন। আজিজ বলেন, ‘‘আমি একটা গম্বুজের পিছনে আশ্রয় নিয়েছিলাম। অনেককেই গুলি খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছি। লোকজন ভয়ে চিৎকার করছিল।’’ হোটেলে আটকে পড়া এক অতিথি সংবাদমাধ্যমকে ফোনে বলেন, ‘‘দো’তলা থেকে গুলির শব্দ পাচ্ছি। আমরা নিজেদের ঘরে লুকিয়ে আছি, নিরাপত্তা বাহিনীর লোক এসে আমাদের উদ্ধার না করলে ওরা আমাদের মেরে ফেলবে।’’

কাল রাত থেকে আজ ভোরের মধ্যে দেশের আরও দুই প্রান্তে হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। প্রথমটা উত্তরাংশের বাল্খ প্রদেশে। সেখানে বাড়ি গিয়ে মোট ১৮ জন পুলিশকে টেনে বার করে মেরেছে জঙ্গিরা। আর দ্বিতীয় ঘটনা পশ্চিম প্রান্তের হেরাটের। রাস্তায় তালিবানের পোঁতা বোমা ফেটে মৃত্যু হয়েছে আট জনের।

Kabul Hotel Attack Terrorism Terrorists Death Toll Intercontinental Hotel ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাবুল
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy