Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উত্তর কোরিয়ায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড

উত্তর কোরিয়ার ইয়নহাপ মিলিটারি অ্যাকাডেমি। অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক প্রাণদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ১৪.৫ মিলিমিটার ক্যালিবারের গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিল তাঁর দেহ। একটি সরকারি অনুষ্ঠান চলাকালীন ঘুমিয়ে পড়া আর প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষের জন্য এই শাস্তি।

প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের (বাঁ দিকে) পাশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন ইয়ং চোল (ডান দিকে)।  ছবি: এএফপি।

প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের (বাঁ দিকে) পাশে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন ইয়ং চোল (ডান দিকে)। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৫ ২১:৪৯
Share: Save:

উত্তর কোরিয়ার ইয়নহাপ মিলিটারি অ্যাকাডেমি। অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এক প্রাণদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। কিছু ক্ষণের মধ্যেই ১৪.৫ মিলিমিটার ক্যালিবারের গুলি ছিন্নভিন্ন করে দিল তাঁর দেহ। একটি সরকারি অনুষ্ঠান চলাকালীন ঘুমিয়ে পড়া আর প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের নেতৃত্বের প্রতি অসন্তোষের জন্য এই শাস্তি। যে সে ব্যক্তি নন, এ ভাবে শাস্তি পেলেন উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হন ইয়ং চোল। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানাচ্ছে, গত ৩০ এপ্রিল প্রকাশ্যে এ ভাবে হত্যা করা হয় চোলকে। এই মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ এসেছিল স্বয়ং প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের কাছ থেকে। যদিও সরকারি ভাবে উত্তর কোরিয়ার তরফে কিছু জানান হয়নি।

তবে এই প্রথম নয়, এর আগে উনের কর্তৃত্বের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হয় চাং সং থেক-এর। সম্পর্কে তিনি উনের কাকা ছিলেন। অভিযোগ, থেক-কে কুকুর লেলিয়ে দিয়ে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে এ বছরে উত্তর কোরিয়ার ১৫ জন উচ্চপদস্থ কর্মীর প্রাণ গেল বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা। ২০১১-য় বাবা কিম জং ইল-এর মৃত্যুর পরে উত্তর কোরিয়ার শাসনক্ষমতা পান পুত্র উন। তার পরে এই নিয়ে উত্তর কোরিয়ার উচ্চপদস্থ প্রায় ৭০ জন কর্মচারীর প্রাণ গেল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এ ভাবে ক্ষমতায় নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব বজায় রাখছেন উন। কিছু দিন আগেই কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ইয়নহাপ মিলিটারি অ্যাকাডেমির ছবি প্রকাশ করেছিল একটি মানবাধিকার সংগঠন। ছবিটিতে অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট বন্দুকের সামনে বেশ কয়েক জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছিল সংগঠনটি। সংগঠনটি বলেছিল, উচ্চপদস্থ কর্তাদের শাস্তির জন্যই এই ব্যবস্থা।

থেক-এর মতোই চোলও উনের ঘনিষ্ঠই ছিলেন। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট কিম জং ইল-এরও বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন চোল। তাঁর মৃত্যুর পরে উনের ঘনিষ্ঠ হন চোল। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অনুষ্ঠানে তাঁকে প্রথম সারিতেই দেখা যেত। কয়েক সপ্তাহ আগে চোলই উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে মস্কো এসেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে উনের আসার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মস্কো সফর বাতিল করেন উন। উত্তর কোরিয়া থেকে সরকারি ভাবে জানান হয়, কিছু জরুরি কাজ পড়ে যাওয়া এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

চোলের মৃত্যুদণ্ডের সরকারি কারণের সঙ্গে অবশ্য অনেকেই একমত নন। মনে করা হচ্ছে কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ রাখতে পর পর এমন পদক্ষেপ করছেন উন। বাবা কিম জং ইল-এর মৃত্যুর পরে আশা করা হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার পরিবর্তন আনবেন পশ্চিমী শিক্ষায় শিক্ষিত উন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, উল্টোটাই ঘটছে। ক্রমেই নিজেকে সর্বময় কর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতেই তৎপর উন। এ নিয়ে ‘পৃষ্ঠপোষক’ চিনের সঙ্গেও বিরোধ বাধে। বিশেষ করে কাকা থেক-এর মৃত্যুদণ্ডের পরে দু’দেশের সম্পর্কে বেশ শীতলতা এসেছিল। এর মধ্যে উন পরমাণু পরীক্ষা চালিয়ে পশ্চিমী বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তলানিতে নিয়ে যান কিম জং উন। চোলের মৃত্যু তাকে আরও খারাপ করবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE