তালিবানের সমর্থনে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গলা ফাটালেন আফগান মেয়েদের একটি অংশ।
পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢাকা। কারও পরনে নীলরঙা বোরখা। কেউ কালো নিকাব পরে, খোলা শুধু চোখের অংশটুকু। আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠনের পর এই প্রথম বার তালিবানের সমর্থনে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে গলা ফাটালেন আফগান মেয়েদের একটি অংশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত একটি সভায় তালিবানের মহিলা-নীতির পক্ষে সওয়াল করে তাঁদের কেউ কেউ বললেন, ‘‘হিজাব পরলেই মহিলারা নিরাপদে থাকবেন। আফগানিস্তানের নতুন সরকারকে সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থন করব আমরা।’’
প্রাক্তন গনি সরকারের কড়া সমালোচনা করে এক বক্তা এ-ও বললেন, ‘‘আগের সরকারের আমলে কোথায় স্বাধীনতা ছিল? ওটাকে স্বাধীনতা বলে না। আগের সরকার মহিলাদের খারাপ ভাবে ব্যবহার করেছে। রূপ দেখে মেয়েদের সরকারি কাজে নিয়োগ করত ওরা।’’
আফগানিস্তানে দ্বিতীয় দফার তালিবানি শাসন কায়েম হওয়ার পর থেকেই কাবুল, হেরাট প্রদেশ-সহ বিভিন্ন প্রান্তেই মহিলাদের সরব হয়ে পথে নেমে বিক্ষোভ করতে দেখা গিয়েছে। নতুন তালিবান সরকারে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব থাকুক, এই দাবিতে কাবুলের রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল করেছিলেন বহু আফগান মহিলা। তাঁদের উপর গুলি ছুড়তেও দেখা গিয়েছে তালিব-যোদ্ধাদের। মহিলাদের চাবুক দিয়ে পেটানো, বন্দুকের বাঁট উঁচিয়ে তাঁদের দিকে তেড়ে আসার ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে নেটমাধ্যমে।
ওই বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধেও সুর চড়ালেন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সভায় অংশ নেওয়া মহিলারা। কেউ বললেন, ‘‘যাঁরা হিজাব পরছেন না, তাঁরা আমাদেরই ক্ষতি করছেন। যাঁরা রাস্তায় নেমে তালিবানের বিরোধিতা করছেন, তাঁরা মহিলাদের প্রতিনিধি হতে পারেন না।’’
ওই সভায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, উপস্থিত অনেক মহিলার কোলে শিশু-সন্তান ছিল। সভা চলাকালীন তাদের কান্নার আওয়াজও শোনা গিয়েছে। আবার অনেক কম বয়সি মেয়েদেরও দেখা গিয়েছে সেখানে, যাঁদের দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া বলেও মনে হয়নি।
তালিবান ক্ষমতায় আসার পর বহু আফগান মহিলাই দেশ ছেড়েছেন। আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা বায়ুসেনা পাইলট আমেরিকায় আশ্রয় নিয়ে বলেন, ‘‘তালিবানের লড়াই বরাবরই শুধু মহিলাদের বিরুদ্ধে, পুরুষদের বিরুদ্ধে নয়।’’ তাঁদেরও কটাক্ষ করে তালিবানের সমর্থনে মহিলাদের ওই মঞ্চ থেকে বলা হয়, ‘‘যাঁরা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, তাঁরা আমাদের কেউ নন।’’
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়াশোনা, চাকরিতে মহিলাদের সুযোগ নিয়ে তালিবানের নয়া নীতি ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। যদিও মহিলা বক্তাদের দাবি, ‘‘ইসলামের আদর্শ মেনেই মহিলারা কাজ করতে পারবেন তালিবান সরকারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy