অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজ
আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল অ্যান্ড্রিয়াস লুবিৎজের। এবং এর জন্য বহু বছর আগে চিকিৎসাও হয়েছিল তাঁর। জার্মানউইঙ্গসের এ৩২০ এয়ারবাস ভেঙে পড়ার রহস্য সন্ধান করতে গিয়ে এই তথ্যই উঠে এসেছে জার্মান তদন্তকারী সংস্থার হাতে।
তবে তদন্তকারী সংস্থার পক্ষ থেকে র্যালফ হেরেনব্রুক জানিয়েছেন, বর্তমানে লুবিৎজ মনোরোগের জন্য চিকিৎসকের কাছে গেলেও তাঁর আত্মহত্যার প্রবণতা বা অন্যদের প্রতি আক্রমণাত্মক ব্যবহার লক্ষ করা যায়নি। ২০১৩ সালে পাইলট হয়েছিলেন লুবিৎজ। কিন্তু তার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল তাঁর মনোরোগ চিকিৎসা।
তবে লুবিৎজের আচরণের প্রকৃত কারণ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করতে চায়নি তদন্তকারী সংস্থা। সহকর্মী বা বন্ধুদের এই আচরণের কোনও পূর্বাভাস দেননি লুবিৎজ।
লুবিৎজকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন জার্মানউইঙ্গসের পাইলট প্যাট্রিক সন্ধেইমারের ঠাকুমা। তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না ও (লুবিৎজ) এটা করল কী করে।’’ ছোট থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন ছিল প্যাট্রিকের। আর মাত্র ৩৪ বছরেই শেষ হয়ে গেল সেই স্বপ্ন। জার্মানউইঙ্গসে যোগ দেওয়ার আগে লুফৎহানসা এবং তারই আর একটি সংস্থা কন্ডোরে বিমান চালাতেন তিনি। কাজের জন্য হামেশাই তাঁকে বেশ দূরে দূরেও যেতে হতো। সময় দিতে পারতেন না তাঁর তিন বছরের ছেলে ও ছ’ বছরের মেয়েকে। তাই আরও বেশি সংসারের দিকে মন ফেরাতে গত বছরের মে মাসে চাকরি বদল করেন প্যাট্রিক। যোগ দেন জার্মানউইঙ্গসে। যাতে অল্প দূরত্বের বিমান চালাতে পারেন তিনি। এবং সময় কাটাতে পারেন তাঁর পরিবারের সঙ্গে।
কিন্তু সে আশা আর পূরণ হল না প্যাট্রিকের। লুবিৎজের জন্যই আল্পসের খাড়াই অঞ্চলে মৃত্যু হল তাঁর। প্যাট্রিকের সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন এল্কে বোন। ডুসেলডর্ফে তিনি প্যাট্রিকের সন্তানের স্কুলের কর্ণধার। তিনি জানিয়েছেন, প্যাট্রিকের স্বভাব ছিল খুব হাসিখুশি। সবাইকে নানা ভাবে সাহায্য করতে ভালবাসতেন তিনি।
প্যাট্রিকের এক সহকর্মী বলেছেন, ‘‘ও (প্যাট্রিক) ছিল অন্যতম সেরা পাইলট।’’ কেউ আবার বলেছেন, ‘‘ওঁর দারুণ রসবোধ ছিল।’’ তাঁরা জানিয়েছেন, ২০০৫ সাল থেকেই লুফৎহানসার এক দক্ষ কর্মী ছিলেন প্যাট্রিক। তাঁর ছ’হাজার ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতাও ছিল। প্যাট্রিকের মৃত্যু যে জার্মানউইঙ্গসের একটি বড় ক্ষতি তা-ও মেনে নিয়েছেন সকলে।
এখনও পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে অক্ষত অবস্থায় কোনও দেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। প্রায় ৬০০টি দেহাবশেষ আপাতত উদ্ধার করা হয়েছে।
সেগুলির ডিএনএ পরীক্ষা করা হচ্ছে। মৃতদের প্রায় ৩০০ আত্মীয় পৌঁছে গিয়েছেন আল্পসের ওই দুর্গম অঞ্চলে। তাঁদের কান্নাই এখন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পাহাড়ের গায়ে গায়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy