E-Paper

ইউক্রেনের রেস্তরাঁয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৯, জখম ৫৬

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউক্রেনের আপৎকালীন পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, একটি রেস্তরাঁয় এসে পড়েছিল ক্ষেপণাস্ত্র। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মৃত দেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত ৩টি বাচ্চার মধ্যে দু’জন যমজ কিশোরী।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩ ০৮:৪২

ছবি: রয়টার্স।

অনেকে বলেছিলেন, সেনা-বিদ্রোহের জেরে ধাক্কা খেতে পারে রাশিয়ার ‘ইউক্রেন অভিযান’। ক্রেমলিন অবশ্য আগেই সতর্ক করেছিল, তেমনটা হওয়ার নয়, যুদ্ধ জারি থাকবে। রাশিয়ার ‘অন্দরমহল’ শান্ত হতেই আজ তাদের রকেট আছড়ে পড়ল পূর্ব ইউক্রেনের ক্রামাতোরস্ক শহরে। এ দেশের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জানিয়েছেন, ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে তিন জন অপ্রাপ্তবয়স্ক। ৫৬ জন জখম।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউক্রেনের আপৎকালীন পরিষেবা বিভাগ জানিয়েছে, একটি রেস্তরাঁয় এসে পড়েছিল ক্ষেপণাস্ত্র। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে মৃত দেহগুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মৃত ৩টি বাচ্চার মধ্যে দু’জন যমজ কিশোরী। তাদের জন্ম ২০০৮ সালে। আর এক জনের বয়স ১২। ক্রামাতোরস্কের এই রেস্তরাঁটি বেশ জনপ্রিয়। লোকজনের ভিড় লেগেই থাকে। সাংবাদিক কিংবা সেনারাও অনেক সময় খেতে আসেন।

ইউক্রেনীয় পুলিশ জানিয়েছে, রাশিয়া দু’টি ‘এস-৩০০’ (জমি থেকে আকাশ) ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল। এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র মাটিতে থাকা কোনও কিছুকে নিশানা করতে পারে না। তা-ও এটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। পুলিশের সন্দেহ, নির্দিষ্ট কোনও কিছুকে নিশানা করা হয়নি। ওরা জানত শহরের কোনও না কোনও জনবসতি এলাকায় এসে পড়বে ক্ষেপণাস্ত্রটি। সেটাই ছিল রণকৌশল।

বন্ধুদের সঙ্গে পিৎজ়া রেস্তরাঁটিতে খেতে গিয়েছিলেন ইয়েভগেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক লোকজন ছিল তখন। আমরা বেরোবো ভাবছিলাম। এমন সময় বিস্ফোরণ।’’ ইয়েভগেন ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লেও তাঁর এক বন্ধু বেরিয়ে এসেছিলেন, তাই বেঁচে যান। বিস্ফোরণের পরেই ঘটনাস্থলে আগুন ধরে যায়। সেনাবাহিনী ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করে। রেস্তরাঁটির রাঁধুনি ৩২ বছরের রুসলানও বলেন, ‘‘খুব ভিড় ছিল। আমি সবে পৌঁছেছিলাম। তার পরই বিস্ফোরণ। চাপা পড়েছিলাম ধ্বংসস্তূপের নীচে। ভাগ্য ভাল, প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।’’ সবার এতটা সৌভাগ্য নয়। কান্না থামছে না নাতালিয়ার। তাঁর সৎভাই, ২৩ বছরের নিকিতা পিৎজ়া ওভেনের কাছে দাঁড়িয়েছিল। ধ্বংসস্তূপ থেকে বার করা যায়নি। এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আশপাশের বাড়িগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৯ বছর বয়সি এক ইউক্রেনীয় জওয়ান বলেন, ‘‘স্থানীয় লোকজন বলেছিলেন, তাঁরা একটি বিমানের আওয়াজ পেয়েছেন। আমি ঘটনাস্থলের কাছেই ছিলাম। একটা অদ্ভূত শব্দ শুনতে পাই। তার পরেই প্রকাণ্ড বিস্ফোরণ।’’ তিনিও উদ্ধারে হাত লাগিয়েছিলেন।

পূর্ব ইউক্রেনের ডনেৎস্ক অঞ্চলে অবস্থিত ক্রামাতোরস্ক শহর। ডনেৎস্কের গভর্নর পাবলো কিরিলেঙ্কোও জানিয়েছেন, দু’টি রকেট এসে পড়েছিল। তাঁর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, এ পর্যন্ত এই অঞ্চলে এটি অন্যতম বড় হামলা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি বলেন, ‘‘ঠিক এক বছর আগে ক্রেমেনচুকের শপিং মলে হামলা চালিয়েছিল রুশ সন্ত্রাসবাদীরা। ২২ জন মারা গিয়েছিল সে বার।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আজ ক্রামাতোরস্কে গোলাবর্ষণও করেছে রুশরা... অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, নয়তো গুরুতর জখম হন। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা হচ্ছে। ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে।’’

রাশিয়ার সেনা-বিদ্রোহ থামার পরে আজ প্রথম সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেন বেলারুসের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কো। রাশিয়ার ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সঙ্গে ক্রেমলিনের মধ্যস্থতা করেছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পরেই বিদ্রোহ থামিয়ে ফিরে গিয়েছিল ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনের কনভয়। বিদ্রোহ থামানোর কৃতিত্ব তাই লুকাশেঙ্কোকেই দিয়েছিলেন অনেকে। যদিও আজ লুকাশেঙ্কো দাবি করলেন, প্রিগোঝিনকে ‘শেষ’ করে দিতেন পুতিন। তাঁর অনুরোধে প্রাণদান করা হয়েছে ওয়াগনার-প্রধানকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Russia Ukraine War Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy