আজ ইজ়রায়েলের অধিকাংশ এলাকাতেও বেজে উঠেছে সাইরেন, পড়িমড়ি নিরাপদ ডেরার উদ্দেশে ছুটে গিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ, পর ক্ষণেই তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে মাটি। আর এক দিকে, মৃত্যু মিছিল যেমনটা চলছিল তেমনই চলেছে গাজ়ায়। ত্রাণে খাবার দেওয়া হবে শুনে জড়ো হওয়া মানুষের উপর সেখানে নির্বিচারে গুলি চলেছে আজও।
আমেরিকা আজ সরাসরি ইরান আক্রমণ করার পরে ইরানও গুরুতর হামলা চালায় ইজ়রায়েলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিশানা করে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ২৭টি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের দু’টি ঝাঁক ধেয়ে আসে জেরুসালেম-সহ দেশের মধ্য ও উত্তরের নানা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে। তেল আভিভ ও হাইফায় বড়সড় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়া বাড়িঘর, জখমদের নিয়ে উদ্ধারকর্মীদের ছুটে চলা, গুরুত্বপূর্ণ যেটুকু-যা রক্ষা করা গিয়েছে তা-ই ছোট ব্যাগে ভরে নিয়ে সার দিয়ে এলাকা ছেড়ে চলা বিমূঢ় মানুষ আর মাথায় চাঁই খসে পড়তে পারে বলে সেনাকর্মীদের সতর্ক করে দিতে থাকা— মোটের উপর সেখানে এটাই ছিল সারা দিনের ছবি।
হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্র রোখার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেন কাজ করেনি, তা নিয়ে ইজ়রায়েল সরকার তদন্ত করবে বলে জানিয়েছে। বড় ক্ষয়ক্ষতির কথা মেনে নিলেও কোনও প্রাণহানি হয়নি বলে তেল আভিভের প্রশাসন দাবি করেছে। আর সব কিছু মিলিয়ে ৮৬ জন হাসপাতালে এসেছিলেন জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক হিসাব দিয়েছে, দু’জনের বেশ কিছুটা চোট ছিল, সামান্য চোট ছিল ৭৭ জনের আর ভীষণ উদ্বেগে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন চার জন। এরই পাশাপাশি, আজ পশ্চিম ইরানে সেনা পরিকাঠামো লক্ষ্য করে তারাও হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইজ়রায়েল।
ইরান আজ ইঙ্গিত দিয়েছে, তাদের অন্যতম আধুনিক এবং সব থেকে উচ্চ ক্ষমতার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র খাইবার শিকন প্রত্যাঘাতের জন্য তৈরি আছে। খুর্রমশহর-৪ নামে পরিচিত ক্ষেপণাস্ত্রটির একটি পুরনো ভিডিয়ো আজই দেশের সরকারি টেলিভিশনে দেখিয়ে বলা হয়, সেটি ব্যবহার করা হয়েছে হামলায়। বছর তিনেক আগে প্রকাশ্যে আনা ক্ষেপণাস্ত্রটি পাড়ি দিতে পারে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার এবং দেড় হাজার কিলোগ্রাম সমরাস্ত্র বহন করতে পারে।
এ দিকে, প্যালেস্টাইনের রাফায় আজ ভোরে একটি ত্রাণ শিবিরের কাছে হামলায় ছ’জন নিহত এবং মধ্য গাজ়ার একটি ত্রাণ শিবিরে হামলায় ২২ জনের জখম হওয়ার খবর মিলেছে। গাজ়ায় বাইরের সাহায্য ঢুকতে না দিয়ে তাদের ও আমেরিকার সমর্থনে চলা বিতর্কিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়ে ইজ়রায়েল ত্রাণ বিলির আয়োজন করেছে। আর সেখানে বার বার খাবারের অপেক্ষায় থাকা মানুষের উপরে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠছে। নতুন এই ত্রাণ বিলি শুরুর পরে খাবারের আশায় যাওয়া সাড়ে চারশো জনকে খুন করা হয়েছে বলে গত কাল পর্যন্ত প্যালেস্টাইনের প্রশাসন জানিয়েছিল। আজ দক্ষিণ ও মধ্য গাজ়ায় ইজ়রায়েলি হামলায় ন’জন এবং মধ্য গাজ়ার একটি আশ্রয় শিবিরে ড্রোন হানায় এক শিশুর মৃত্যুর কথাও জানা গিয়েছে। হাসপাতালগুলি থেকে পাওয়া হিসাবে ভোর থেকে মোট ২৯ জন প্যালেস্টাইনি প্রাণ হারিয়েছেন।
হামাসের হামলায় অপহৃত তিন জনের দেহ উদ্ধারের কথা ইজ়রায়েল জানিয়েছে আজ। বলা হয়েছে, দেহ উদ্ধারের বিশেষ অভিযানে ৩০ জনের বেশি প্যালেস্টাইনির মৃত্যু হয়েছে। যাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ইয়োনাতান সামেরানো (২১), ওফরা কাইদার (৭০) ও শাই লেভিনসনে (১৯) ২০২৩-এর ৭ অক্টোবর খুন হন ইজ়রায়েলে হামাসের হামলায়। তাঁদের দেহ গাজ়ায় নিয়ে যায় হামাস। যে দিন ইয়োনাতানের দেহাবশেষ পেল তাঁর পরিবার, বেঁচে থাকলে সে দিনই ২৫ বছরে পা দিতেন তিনি।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)