ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নুর তাপসের। ছবি সংগৃহীত।
প্রার্থী হেরে যাওয়া সত্ত্বেও গাজীপুরের মেয়র নির্বাচনকে যে গা-জোয়ারির নির্বাচনে পর্যবসিত করা হয়নি, সকলকে তা মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে তাঁদের সেই দাবিকে অনেকাংশে ম্লান করে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নুর তাপসের একটি বক্তৃতা, অনেকের মতে যা শাসক দলের গা-জোয়ারি মনোভাবের সম্যক পরিচায়ক।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে পেশায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মেয়র তাপস মন্তব্য করেছেন, ‘এক জন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম!’ সঙ্গে তিনি বলেন, “কী ভাবে মুগুর দিতে হয় আমি জানি। এক দল সুশীল আমাদের শিক্ষা দিতে আসেন। শেখ হাসিনাকেও শিক্ষা দিতে আসেন। যে সকল সুশীল আমাদের বুদ্ধি দিতে যাবেন, এ বার তাঁদের বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দিয়ে আসব।”
শেখ ফজলে নুর তাপস শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মণির পুত্র। প্রধান বিচারপতি (সুরেন্দ্রকুমার সিন্হা)-কে ‘নামিয়ে দেওয়া’ নিয়ে তাঁর এই মন্তব্য সরাসরি আদালত অবমাননা বলে দাবি করেছেন এক দল আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর কাছে গিয়ে মেয়রের এই বক্তব্য সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করে এসেছেন সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম। প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, বিষয়টি তিনি দেখবেন। আদালতের বাইরে এসে আমীর-উল ইসলাম বলেন, “মেয়র তাপস সুশীল সমাজ সম্পর্কেও কটাক্ষ করেছেন। বিচার বিভাগকে হেয় করেছেন। এই অধিকার তিনি কোথায় পেয়েছেন? তাঁর এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য আদালত অবমাননা। এই মন্তব্যে বিচার বিভাগ শুধু নয়, গোটা দেশের মানুষ মনঃক্ষুণ্ণ হয়েছেন।” এই পদক্ষেপের পরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য আমীর-উল ইসলামকে ‘বাতিল মাল’ আখ্যা দিয়ে শাসক দলের আইনজীবী সংগঠনের সম্পাদক মোহম্মদ আবদুন নুর বলেছেন, “আওয়ামী লীগের আঙিনায় আর কোনও দিন আপনার জায়গা হবে না।”
বিশিষ্ট জনেরা পরামর্শ দিতে এলে তাঁদের ‘বস্তায় পুরে বুড়িগঙ্গার পানিতে ছেড়ে দেওয়া হবে’ বলে মেয়র তাপসের ঘোষণার নিন্দায়ও সরব হয়েছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, রামেন্দু মজুমদার, শাহরিয়ার কবির, বিচারপতি (অবঃ) নজরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাক্তন আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এক জন মেয়র এই সব কথা বলবেন, এটা অবিশ্বাস্য ও অপ্রত্যাশিত।” বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, “এ সব কথা তিনি না বললেও পারতেন। এক জন ভদ্রসভ্য মানুষ বলেই তো ওঁকে চিনতাম।” একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবীর বলেন, “মেয়রের বক্তব্য তাঁর ঔদ্ধত্যের পরিচায়ক। সুশীল সমাজের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা যায় না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy