Advertisement
E-Paper

নারীদের স্পর্শ নয়! তালিবানি ফতোয়ায় আফগান মেয়েদের গোঙানি ধ্বংসস্তূপ জুড়ে, বেছে বেছে উদ্ধার শুধু পুরুষদেরই!

আফগানিস্তানের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২,২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আহত সাড়ে তিন হাজারের বেশি। কিন্তু তালিবান সরকারের ফতোয়ায় ধ্বংসস্তূপ থেকে জখম মহিলাদের উদ্ধার করতে পারছেন না কোনও পুরুষ উদ্ধারকারী।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:০২
আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের পরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে উদ্ধারের অপেক্ষায় জখম মহিলারা।

আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের পরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে উদ্ধারের অপেক্ষায় জখম মহিলারা। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।

নারীদের স্পর্শ করা যাবে না। তালিবান সরকারের এই ফতোয়ার কারণে ভূমিকম্পের পরে তাই এক দুর্বিসহ চিত্র তৈরি হল আফগানিস্তানে। ইট-কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়ে কাতরালেও কোনও মহিলাকে উদ্ধার করা হচ্ছে না! বাঁচানো হচ্ছে কেবল পুরুষদেরই। কারণ উদ্ধারকারীরাও যে পুরুষ! প্রাকৃতিক দুর্যোগে চারদিক তছনছ হয়ে গেলেও সরকারের ফতোয়া তো ভোলা যায় না! মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স একটি রিপোর্টে এই তথ্য জানিয়েছে।

তালিবানের নিয়ম অনুযায়ী, একই পরিবারের সদস্য না-হলে কোনও মহিলা এবং পুরুষের মধ্যে শারীরিক সংযোগ ঘটতে পারে না। তাঁরা একে অপরকে স্পর্শ করতেই পারেন না। নারী এবং পুরুষের শারীরিক সংস্পর্শ একমাত্র স্বীকৃতি পারিবারিক যোগের ক্ষেত্রেই। তালিবান সরকার জানিয়ে দিয়েছে, জরুরি পরিস্থিতিতেও এই নিয়মের ব্যতিক্রম করা যাবে না। ফলে ভূমিকম্পে দীর্ণ আফগানিস্তানে চাইলেও মহিলাদের উদ্ধার করতে পারছে না পুরুষদের উদ্ধারকারী দল। মহিলাদের ফেলে রেখে কেবল জখম পুরুষদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে।

আফগানিস্তানের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২,২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আহত সাড়ে তিন হাজারের বেশি। প্রথম কম্পনের উৎসস্থল ছিল পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া পূর্ব আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশ। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৬.৩। এর পর একাধিক বার ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন (আফটারশক)-এ কেঁপে ওঠে আফগানভূম। তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে ঘরবাড়ি। বহু মানুষ তাতে চাপা পড়ে যান। গ্রামের পর গ্রাম ধূলিসাৎ হয়ে যায় ভূমিকম্পে। তৎপরতার সঙ্গেই ভূমিকম্প কবলিত এলাকাগুলিতে উদ্ধারকাজ শুরু করেছিল তালিবান সরকার। কিন্তু সেখানে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে পুরুষদেরই। কুনার প্রদেশের আন্দারলুকাক গ্রামের বাসিন্দা ১৯ বছরের আয়েশা বলেন, ‘‘উদ্ধারকারী দলে কোনও পুরুষ ছিল না। ওরা এল। আমাদের এক দিকে সরিয়ে দিল। তার পর আমাদের কথা ভুলে গেল! আমাদের মধ্যে অনেকেই রক্তাক্ত, আহত। কিন্তু কোনও মহিলাকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আমাদের কী চাই, কেউ জিজ্ঞেস পর্যন্ত করেনি।’’

উদ্ধারকারী দলের এক সদস্য তাহ্‌জ়িবুল্লা মুহাজেব সংবাদমাধ্যমে জানান, তাঁদের মেডিক্যাল টিমের সকল সদস্যই ছিলেন পুরুষ। সরকারি ফতোয়ার কারণে ভেঙে পড়া বাড়ির নীচ থেকে আটকে পড়া মহিলাদের টেনে বার করার সাহস তাঁরা পাননি। ফলে জখম মহিলা বা কিশোরীরা পাথরের নীচে আটকে ছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অন্য গ্রাম থেকে মেয়েরা কখন উদ্ধার করতে আসবেন, তার জন্য বসে থাকতে হয় তাঁদের। মুহাজেবের কথায়, ‘‘আমাদের মনে হচ্ছিল, মহিলারা যেন অদৃশ্য। পুরুষ এবং শিশুদের চিকিৎসা করা হচ্ছিল। কিন্তু মহিলারা পাশে বসেছিলেন জখম অবস্থায়, অপেক্ষা করছিলেন।’’

এ তো গেল জখম মহিলাদের কথা। কিন্তু যাঁরা মারা গিয়েছেন? মৃতদেহ ছুঁতেও সাহস পাননি আফগান উদ্ধারকারীরা। প্রথমে ওই মৃতার নিকট আত্মীয়ের খোঁজ করা হয়। আত্মীয় কাউকে পেয়ে গেলে তাঁকে দিয়ে মৃতদেহ সরানোর কাজ সহজ হয়। কিন্তু যাঁদের পরিবারের কোনও পুরুষকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ে। এ ক্ষেত্রে পুরুষ উদ্ধারকারীরা ওই সব মহিলার পোশাকের অংশ কোনও রকমে টেনে ধ্বং‌সস্তূপ থেকে দেহ বার করে আনেন। মৃতদেহের স্পর্শও বাঁচিয়ে চলেন সন্তর্পণে।

আফগানিস্তানে স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব বরাবরই প্রকট। বিশেষ করে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে মহিলা প্রায় নেই বললে চলে। গত বছরেই তালিবান ডাক্তারিতে বা স্বাস্থ্যশিক্ষায় মহিলাদের নাম নথিভুক্তকরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। ভূমিকম্পের সময়ে মহিলা চিকিৎসক এবং উদ্ধারকারীর অভাব আরও প্রকট হয়েছে। চার বছর আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল তালিবান। তার পর থেকে মহিলাদের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সে দেশে মেয়েরা ষষ্ঠ শ্রেণির পরে আর স্কুলে যেতে পারে না। অধিকাংশ চাকরিতেই মহিলাদের উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পুরুষ সঙ্গী ছাড়া বাড়ির বাইরে বেশি দূর যেতে পারেন না আফগান মহিলারা। যাঁরা রাষ্ট্রপুঞ্জের বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি করেন, বার বার আফগানিস্তানে তাঁরা হুমকি এবং হেনস্থার শিকার হয়েছেন। আফগান মেয়েদের সেই সঙ্কট আরও প্রকট হল বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পে।

Afghanistan Afghan Taliban Taliban regime Afghan Woman
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy