এমএইচ-৩৭০ বিমানেই ছিলেন পুত্র, পুত্রবধূ, নাতনি। বছর পেরিয়ে বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মেলার সম্ভাবনা দেখা দিতেই ফের মুখর স্বজনহারাদের কান্না। বেজিংয়ে বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স।
ছোট একটা টুকরো। আর সেটিকে কেন্দ্র করেই ফের শিরোনামে বিমান-রহস্য। বুধবার রাতে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নজিব রাজাক ঘোষণা করেছিলেন, টুকরোটি নিখোঁজ বিমান এমএইচ ৩৭০-রই। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টা পর ফরাসি তদন্তকারী সংস্থা জানিয়ে দিল, বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নয় তারা। তবে টুকরোটির সঙ্গে এমএইচ ৩৭০-র কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল যে রয়েছে, সেটা প্রাথমিক পরীক্ষায় স্পষ্ট। মালয়েশীয় প্রশাসন এ দিন আরও জানায়, ওই এলাকা থেকেই বিমানের আসন, জানলা, ‘অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল’-এর টুকরো মিলেছে। সব মিলিয়ে তাই জোর জল্পনা, তা হলে কি এ বার সত্যিই খোঁজ মিলল উধাও বিমানের?
গত বছর ৮ মার্চ কুয়ালা লামপুর থেকে বেজিং যাওয়ার পথে ২৩৯ জন যাত্রী ও বিমানকর্মীকে নিয়ে উধাও হয়ে যায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ-৩৭০। প্রশাসন জানিয়েছিল, ভিয়েতনামের আকাশে ঢোকার আগে শেষ বার মালয়েশিয়ার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল বিমানটির। তার পর সেটির ট্রান্সপন্ডার (যেটির মাধ্যমে এটিসির সঙ্গে যোগাযোগ রাখে বিমান) বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তবে এর কিছু ক্ষণ পর মালয়েশিয়ার সামরিক রেডারে বিমানটি ধরা পড়েছিল। তখনই জানা যায়, নির্ধারিত গতিপথ বদলে দক্ষিণে ভারত মহাসাগরের দিকে যাচ্ছিল সেটি। কিন্তু কেন এই অভিমুখ বদল, কে বা কারা ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করেছিল, তাদের উদ্দেশ্যই বা কী ছিল, সে সব জানা যায়নি। নানা রকম গাণিতিক বিশ্লেষণ করে শুধু বলা হয়, সম্ভবত ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে কোথাও ভেঙে পড়েছে বিমানটি।
নিখোঁজ যাত্রীদের পরিজনদের কাছে এই সব প্রশ্ন, তত্ত্ব অবান্তর। তাঁদের মতে, ঘটনার প্রায় ১৭ মাস পরও তাঁরা নিশ্চিত জানতে পারেননি তাঁদের প্রিয়জনেরা জীবিত না মৃত। গত কাল রাতে নজিবের ঘোষণার পর পরিজনদের অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, যাবতীয় রহস্য-আশা-আশঙ্কার এই শেষ। এক বৃদ্ধ বলেন, ‘‘কাল রাতে সহজে ঘুমোতে পেরেছি। এখন অন্তত এ টুকু জানি যে আমার ছেলে বেঁচে নেই।’’
কিন্তু নজিবের ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফরাসি তদন্তকারী সংস্থা জানায়, বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নয় তারা। গত সপ্তাহে বোয়িং-৭৭৭ বিমানের ডানার যে অংশ মিলেছিল, প্রাথমিক পরীক্ষায় তার সঙ্গে এমএইচ ৩৭০-র কিছু বৈশিষ্ট্যের মিল পাওয়া গেলেও সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে আরও পরীক্ষা দরকার বলে দাবি করেন কর্তৃপক্ষ। যদিও টুকরোটির যে এমএইচ-৩৭০-র ভগ্নাংশ হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল, সে কথাও বলছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে এ দিনও দোলাচল কাটেনি পরিজনদের।
ক্ষোভও তাই চেপে রাখতে পারেননি তাঁরা। এ দিন চিনের কয়েক জন বাসিন্দা বেজিংয়ে মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের প্রত্যেকেরই প্রিয়জন ওই বিমানে ছিলেন। মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর গত রাতের ঘোষণার পর মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ফরাসি সংস্থার মত শোনার পর তাঁদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায়। ৬২ বছরের এক প্রৌঢ় বিক্ষোভকারী জাং মেলিং বলতে থাকেন, ‘‘নজিব রাজাককে খুন করতে চাই। ও যা বলছে, সব ভুলভাল।’’ জাং-এর মেয়ে ও জামাই ওই বিমানে ছিলেন। তাঁদের অন্তিম পরিণতি নিয়ে যে ভাবে ‘ভুলভাল’ ঘোষণা করছে মালয়েশীয় প্রশাসন, তা দেখে প্রত্যাশিত ভাবেই ক্ষুব্ধ বৃদ্ধ। কারও কারও আবার সন্দেহ, টুকরোটিও সম্ভবত ভুয়ো। নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে কোনও বিমানের পুরনো অংশকে ওখানে ফেলে তাকে এমএইচ ৩৭০-র বলে চালানোর চেষ্টা করছে মালয়েশীয় সরকার।
যদিও প্রশাসন জানিয়েছে, ওই টুকরোর গায়ে যে রং রয়েছে, তার সঙ্গে এমএইচ-৩৭০র কাঠামোর রঙের মিল রয়েছে। তার ভিত্তিতে গত রাতে নজিব দাবি করেছিলেন, টুকরোটি এমএইচ ৩৭০-রই। সে সম্ভাবনা এ দিন আরও জোরদার হয় যখন মালয়েশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী লিওউ তিয়ং জানান, ওই রিইউনিয়ন দ্বীপের সমুদ্র সৈকত থেকেই বিমানের জানলা, আসন, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের অংশ পাওয়া গিয়েছে। তবে সেগুলি যে এমএইচ ৩৭০-রই, এমনটা নিশ্চিত ভাবে বলেননি লিওউ। বরং তিনি জানান, ওই অংশগুলিও ফরাসি তদন্তকারী সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে। ফরাসি প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, তারা এমন কোনও ভগ্নাংশ পায়নি। সব মিলিয়ে দিনের শেষেও এমএইচ ৩৭০ রহস্যের কিনারা হয়নি।
তবে মালয়েশীয় প্রশাসন মোটামুটি নিশ্চিত, যে ভগ্নাংশগুলি মিলেছে সেগুলি এমএইচ ৩৭০-রই। এখন শুধু ফরাসি তদন্তকারী সংস্থার রিপোর্টের অপেক্ষা। তবে ওই ভগ্নাংশগুলি এমএইচ ৩৭০-র প্রমাণিত হলেও যত দিন না ধ্বংসাবশেষ মিলছে, তত দিন পর্যন্ত অনুসন্ধান অভিযান থামবে না বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy