কানাডার পার্লামেন্টে শোকপ্রস্তাব পাঠ প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর। ছবি পিটিআই।
খলিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিংহ নিজ্জর খুনের বর্ষপূর্তিতে নীরবতা পালন করা হল কানাডার পার্লামেন্টে! নিষিদ্ধ সংগঠন খলিস্তান টাইগার ফোর্সের নেতার মৃত্যুর বর্ষপূর্তিতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের নেতৃত্বে এই শোকপালন নতুন করে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাতের আবহ তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনার প্রতিক্রিয়া কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের ভারতীয় কনস্যুলেটের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘ভারত সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায় সামনের সারিতে থাকবে।’’ ১৯৮৫ সালে খলিস্তানি জঙ্গিদের ঘটানো বিস্ফোরণে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান কনিষ্কের ৩২৯ জন যাত্রী এবং বিমানকর্মীদের মৃত্যুর বর্ষপূর্তিতে আগামী রবিবার স্ট্যানলি পার্কে একটি স্মরণসভা আয়োজনের কথাও জানিয়েছে ভারতীয় কনস্যুলেট।
নিজ্জরকে ২০২০ সালে সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করেছিল ভারত। তিন বছর পর গত ২০২৩ সালের ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারের একটি গুরুদ্বারের সামনে তাঁকে হত্যা করা হয়। ওই খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত মে মাসে করণ ব্রার, কমলপ্রীত সিংহ এবং করণপ্রীত সিংহ নামে তিন ভারতীয় নাগরিককে গ্রেফতার করেছিল কানাডা পুলিশ।
কানাডায় নিজ্জর খুনের ঘটনায় ভারতীয় এজেন্টদের ‘হাত রয়েছে’ বলে গত সেপ্টেম্বরে দাবি করছিলেন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। ভারত এই অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও মন্তব্য করেছিল। কিন্তু তাতে দু’দেশের সম্পর্কের শৈত্য বিন্দুমাত্র কমেনি।
ট্রুডোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভারতের তরফে প্রকাশিত নথিতে বলা হয়, নিহত জঙ্গি নিজ্জরের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ ছিল। গোয়েন্দাদের তরফে দেওয়া রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের নানা জায়গায় হামলা চালানোর ছক কষছিলেন তিনি। ওই ‘ডসিয়েরে’ দেখানো হয়েছে, ১৯৮০ সাল থেকেই নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন নিজ্জর। তার জেরেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। আশির দশকে এক স্থানীয় গুন্ডা থেকে কী ভাবে তিনি জঙ্গি হয়ে উঠলেন তা-ও তুলে ধরা হয়েছিল ওই নথিতে।
ডসিয়েরে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে নিজ্জর পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কানাডায় গিয়েছিলেন। সেই সময়ে ট্রাকচালক হিসাবে কাজ করতেন তিনি। পাকিস্তানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। পঞ্জাবের জালন্ধরের বাসিন্দা নিজ্জর এর পরেই গুরনেক সিংহের ছত্রছায়ায় ক্রমশ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কুখ্যাত জগতে পরিচিতি তৈরি করেন। ১৯৮০ থেকে ’৯০-এর মধ্যে জঙ্গি সংগঠন খলিস্তান কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। ২০১২ সাল থেকে খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান জগতার সিংহ তারার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। জগদীপের সূত্রেই নিজ্জরের পাক-যোগ গভীর হয়। পাকিস্তান থেকে ফিরে মাদক ও চোরাচালানে প্রাপ্ত অর্থ সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
জগদীপের সঙ্গে যুক্ত হয়েই পঞ্জাবে নাশকতামূলক কার্যকলাপের ছক কষেছিলেন হরদীপ। কানাডায় নিজস্ব সংগঠন তৈরি করেন। ওই দলেরই সদস্য ছিল মনজিৎ সিংহ ধালিওয়াল, সর্বজিৎ সিংহ, অনুপবীর সিংহ, দর্শন সিংহেরা। ২০১৫ সালে হরদীপের দলের এই সদস্যেরা কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন বলে উল্লেখ করা হয়েছিল ডসিয়েরে। ২০১৪ সালে হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচ্চা সউদায় হামলার ছক কষেছিলেন। নিজে ভারতে ঢুকতে না পারায় তার সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ ইজ়হার আলমকে নিশানা করার জন্য। এ হেন কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীর খুনের বর্ষপূর্তিতে বুধবার শোকপালন করা হল কানাডার পার্লামেন্টে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy