Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

এভারেস্টে জন-জট, ফিরলেন পিয়ালি

তীব্র আর্থিক সঙ্কটকে সঙ্গী করেই এভারেস্টের পথে পা বাড়িয়েছিলেন পিয়ালি। ইচ্ছে ছিল, এভারেস্টের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ লোৎসে-ও জয় করবেন।

এভারেস্টের পথে পিয়ালি।

এভারেস্টের পথে পিয়ালি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৯ ০২:৫৭
Share: Save:

আবহাওয়া শৃঙ্গজয়ের অনুকূল ছিল। কিন্তু আট হাজার মিটার উঁচুতে বাদ সাধল ‘ট্র্যাফিক জ্যাম’! মানে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহণ-অভিলাষীর ভিড়। যার ঠেলায় বুধবার এভারেস্ট-শীর্ষে পৌঁছনোর আগেই ফিরতে হল বাঙালি অভিযাত্রী পিয়ালি বসাককে। সঙ্গে যথেষ্ট অক্সিজেন সিলিন্ডারও ছিল না। ফলে এ বছরের মতো শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন ছাড়তে হয়েছে চন্দননগরের স্কুলশিক্ষিকা পিয়ালিকে। অভিযানের আয়োজক সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন সন্ধ্যাতেই ক্যাম্প টু-তে নেমে এসেছেন তিনি।

তীব্র আর্থিক সঙ্কটকে সঙ্গী করেই এভারেস্টের পথে পা বাড়িয়েছিলেন পিয়ালি। ইচ্ছে ছিল, এভারেস্টের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ লোৎসে-ও জয় করবেন। কিন্তু এ দিন এভারেস্টের ব্যালকনি (২৭,৫০০ ফুট) থেকেই ফিরে আসেন পিয়ালি ও তাঁর শেরপা। কারণ, এভারেস্টের ‘পথে’ কুখ্যাত ট্র্যাফিক জ্যাম। অভিযানের আয়োজক সংস্থার কর্ণধার মিংমা শেরপা কাঠমান্ডু থেকে ফোনে জানান, ‘‘ট্র্যাফিক জ্যামের জন্য ব্যালকনি থেকে ফিরে এসেছেন পিয়ালি।’’ অভিযাত্রীর বোন তমালি বসাক বলেন, ‘‘ওর সঙ্গে বোধ হয় চারটি সিলিন্ডার ছিল। যা দ্বিতীয় বার উপরে ওঠার পক্ষে যথেষ্ট নয়। ওখানে নতুন সিলিন্ডার কেনার খরচ অনেক। তাই অভিযান বাতিল করেছে।’’

নেপালের পর্যটন দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছর এভারেস্টে অভিযাত্রীর সংখ্যা (অন্তত ৭০০) আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে মাত্র চার দিনের ‘সামিট উইন্ডো’। অর্থাৎ এই চার দিনে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এর মধ্যেই শৃঙ্গজয়ের চেষ্টা করতে হবে অভিযাত্রীদের। ফলে কম সময়ের মধ্যে প্রচুর অভিযাত্রী শেরপা-সহ শৃঙ্গের পথে পা বাড়ালে যে ট্র্যাফিক জ্যাম হবে, সেই আশঙ্কা ছিলই। এ দিন ক্যাম্প ফোর থেকে শৃঙ্গের দিকে রওনা হওয়ার কথা ছিল অন্তত ৩০০ জনের। অভিযাত্রী-প্রতি এক জন শেরপা থাকলেও মোট ৬০০ জনের আরোহণ করার কথা। ফলে সঙ্কীর্ণ জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার ঝুঁকি থাকছেই।

এভারেস্টজয়ী বসন্ত সিংহরায় জানাচ্ছেন, দিনের বেলায় এভারেস্টে ‘হিলারি স্টেপ’-এর (২৮,৮৩৯ ফুট) আগে-পরে ট্র্যাফিক জ্যামের ঝুঁকি থাকে। রাতে জ্যামের সম্ভাবনা কম। কারণ, তখন সকলেই শৃঙ্গের দিকে চলেছেন। কিন্তু দিনের বেলায় কিছু অভিযাত্রী শৃঙ্গের দিকে যান এবং বাকিরা শৃঙ্গ ছুঁয়ে নীচে নামেন। তখন ওই সঙ্কীর্ণ জায়গায় ট্র্যাফিক জ্যাম হয়। ওই উচ্চতায় এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অভিযাত্রীদের। এতেই বাড়ে বিপদ। কারণ, বেশি ক্ষণ হাত-পা নাড়াচাড়া না-করে দাঁড়িয়ে থাকলে তুষারক্ষতের আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়াও রয়েছে সঙ্গের সিলিন্ডারে অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়। ‘‘ট্র্যাফিক জ্যামের জন্য পিয়ালি ফেরত এলে বলতে হবে, ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। সামিট উইন্ডো থাকতে থাকতে এ দিন রাতেই এক বার চেষ্টা করবে, এটাই ঠিক সিদ্ধান্ত,’’ বললেন বসন্তবাবু।

প্রাথমিক ভাবে বিনা অক্সিজেনে এভারেস্ট এবং লোৎসে শৃঙ্গ জয়ের পরিকল্পনা ছিল পিয়ালির। সেই ভাবনায় যে অনেকটাই ঝুঁকি এবং গলদ রয়েছে, ফেসবুকে তা জানান পর্বতারোহী দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। এ দিন পিয়ালির অভিযান বাতিলের খবর শুনে তিনি বলেন, ‘‘পরিকল্পনা এবং যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই এভারেস্টে গিয়েছিল পিয়ালি। ‘স্টেজে মেরে দেব’, এখানে এমন ভাবলে হয় না। একই সঙ্গে দু’টি শৃঙ্গের কথা ভাবছিল যখন, তখন সঙ্গে অন্তত ছ’-সাতটি সিলিন্ডার রাখা উচিত ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Expedition Mountaineer Mount Everest Traffic Jam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE