E-Paper

নেপাল ঘিরে দুশ্চিন্তায় পর্বতারোহী মহল

নেপালের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করছে পর্বতারোহণের উপরে। ৮টি আট হাজারি শৃঙ্গাভিযান থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে নেপাল সরকার। শুধু এভারেস্ট অভিযানে বিদেশিদের থেকে পারমিট বাবদই আয় হয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

স্বাতী মল্লিক

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫১
উত্তপ্ত পরিস্থিতি।

উত্তপ্ত পরিস্থিতি। —ফাইল চিত্র।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী শপথ নিলেন। অশান্তি প্রায় থামিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। তবু নেপাল যে ভাবে নড়ে গিয়েছে কয়েক দিনের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে, তাতে পর্বতারোহণের পথ কঠিন হতে পারে বলেই মনে করছে পর্বতারোহণ মহল।

নেপালের অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভর করছে পর্বতারোহণের উপরে। ৮টি আট হাজারি শৃঙ্গাভিযান থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে নেপাল সরকার। শুধু এভারেস্ট অভিযানে বিদেশিদের থেকে পারমিট বাবদই আয় হয় প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। রয়েছে পাহাড়ি পথে ট্রেকিং বাবদ আয়। আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে ট্রেকিং ছাড়াও আমা দাবলাম, মানাসলুর মতো বেশ কিছু শৃঙ্গে আরোহণের এটাই প্রশস্ত সময়। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নেপাল আপাতত কিছু দিনের জন্য বিদেশি আরোহীদের কাছে ‘ব্রাত্য’ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পর্বতারোহী মহল।

এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী দেবাশিস বিশ্বাসের মতে, আগামী মরসুমে নেপালের পর্বতারোহণ হয়তো জোর ধাক্কা খেতে চলেছে। তাঁর মতে, ‘‘ও দেশে দুর্নীতি লাগামহীন। ফলে এক শ্রেণি দু’হাতে অর্থ কামিয়ে যাচ্ছে, অথচ খেটে খাওয়া মানুষ গরিবই রয়ে যাচ্ছে। তাই এই ক্ষোভের উদ্গীরণ হতই। কিন্তু এতে ভয় পেয়ে যাবেন বিদেশিরা। তাঁরা হিমালয়কে ভালবাসলেও ঝামেলার মুখে পড়তে চান না। ফলে তাঁরা মুখ ফেরালে বড় ক্ষতির মুখে পড়বে নেপালের অর্থনীতি।’’

কোভিড অতিমারির সময়ে চিন এভারেস্টের পথে বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার পর থেকে নেপাল দিয়ে সর্বোচ্চ শৃঙ্গারোহণের ঢল নেমেছিল গত কয়েক বছরে। ফি বছর বাড়ছিল বিদেশি আরোহীদের পারমিট দেওয়ার সংখ্যা। শুধু এভারেস্টেই এ বছর ৪৫০ জনেরও বেশি আরোহীকে পারমিট দেওয়া হয়। কিন্তু গণ অভ্যুত্থানের ধাক্কায় এই রমরমা আপাতত কিছুটা কমতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের (আইএমএফ) পূর্বাঞ্চল শাখার চেয়ারম্যান ও পর্বতারোহী দেবরাজ রায় বলছেন, ‘‘আগামী এক-দু’মাসের মধ্যে পরিচিত যাঁরা অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক, মানাসলু সার্কিট ট্রেক করার কথা ভাবছিলেন, তাঁরা তা বাতিল করেছেন বলেই জানতে পেরেছি। ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সময়েও নেপাল কার্যত পর্যটকশূন্য হয়ে গিয়েছিল। তার ফল ভুগেছিলেন সে দেশের সাধারণ গরিব মানুষ। এ বারও হয়তো কিছু দিনের জন্য তেমন পরিস্থিতি হবে। তবে আগামী এভারেস্ট মরসুম সেই মার্চে, কিছুটা সময় আছে।’’

ট্রেকিংয়ে গিয়ে বর্তমানে পোখরায় আটকে পড়া, পোড় খাওয়া ট্রেকার শুভময় ঘোষ বলছেন, ‘‘এ বার ট্রেক করতে এসেই বুঝেছিলাম, এই পরিস্থিতি ট্রেকারদের জন্য বিশেষ নিরাপদ নয়। পারমিট তৈরি থেকে ভারতীয় টাকাকে নেপালি টাকায় বদলানো— সবেতেই এখানে ঘুষ চাওয়া হয়! তবে পরিস্থিতি দ্রুত বদলাবে, কারণ সাধারণ মানুষ চাইছেন দ্রুত সব স্বাভাবিক হোক।’’

যদিও নেপালের পর্বতারোহণ ও ট্রেকিং আয়োজনকারী সংস্থাগুলি আশ্বস্ত করছে, সব ঠিক আছে বলে। ‘পায়োনিয়র অ্যাডভেঞ্চার’ সংস্থার কর্ণধার পাসাং শেরপার দাবি, ‘‘কোনও ভয় নেই পর্যটকদের। হোটেল-দোকান, তাঁদের জন্য সব খোলা আছে। আর পাহাড়ি পথে তো সব কাজ করেন শেরপারা, সেখানে আন্দোলনের আঁচ পড়বে না। তাই পর্বতারোহীদের চিন্তার কারণ নেই। পারমিট পাওয়াও অসুবিধার নয়। বড় বড় হোটেল থেকে কিংবা বড় আয়োজক সংস্থারা কোনও না কোনও ভাবে পর্যটন দফতরের মাধ্যমে পারমিট করিয়েই আনবে।’’ তবে তিনিও মানছেন, আপাতত কিছু দিন পরিস্থিতি কিছুটা কঠিন হতে পারে। আসন্ন শীতের মরসুমে নেপালে ট্রেক করতে চাওয়া বিদেশিদের বরং পরের মরসুমে আসার পরামর্শই দিচ্ছেন পাসাং।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nepal Unrest Nepal Violence Nepal Mountaineering

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy