সব ঠিকঠাক থাকলে, চলতি মাসের ৯ তারিখে ব্রিটেন সফরে যাবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকার রাজনৈতিক মহলে চর্চা, এই সফরে ইউনূস বৈঠকে বসতে পারেন সে দেশে থাকা বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তথা খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমানের সঙ্গে। যদিও সরকার এবং বিএনপি-র তরফে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলা হচ্ছে না। তবে উভয় শিবিরের অন্দরের খবর, নির্বাচন নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার সুষ্ঠু সমাধানের খোঁজেই মুখোমুখি হতে পারেন ইউনূসএবং তারেক।
বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপি-র সঙ্গে ইউনূস সরকারের টানাপড়েন ক্রমশ বাড়ছে। তারেক স্পষ্টই জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করাতেই হবে। পক্ষান্তরে টোকিয়োয় গিয়ে ইউনূস বলেছিলেন, ‘একটি মাত্র দলই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়।’ সূত্রের দাবি, সরকারের তরফে বিএনপি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হয়েছে বৈঠকটি আয়োজনের জন্য। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের তারিখ এবং পথদিশা ঘোষণা নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপি-সহ সমমনোভাবাপন্ন দলগুলোর যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা সম্ভাব্য বৈঠকে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্রের খবর, বিএনপির তরফে এ বৈঠকের শর্ত হিসেবে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ এবং নির্বাচনী পথদিশার ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, সরকার প্রধান এবং বিএনপি নেতার সৌজন্য সাক্ষাৎ নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে আলোচনার সুযোগ তৈরি করবে। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, ব্যাঙ্ককে ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণকারী এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ইদের পরে ব্রিটেন যেতে পারেন তারেকের সঙ্গে বৈঠক চূড়ান্ত করতে। এ দিকে বিএনপি-র স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘তিন মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান।’’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ ভোট রাজনীতির ময়দানে নেই। ফলে বিএনপি-ই দেশের সবচেয়ে বড় দল। তাকে উপেক্ষা করে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই আজ না-হোক কাল উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আসতেই হবে।’’ যাঁরা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে চর্চা করেন, তাঁরা আশাবাদী যে ইউনূস-তারেক বৈঠক হলে নির্বাচন নিয়ে একটা সূত্র বেরিয়ে আসবে। হয়তো দর কষাকষির মাধ্যমে আগামী বছরের প্রথম দিকেই ভোট হতে পারে বাংলাদেশে। সে ক্ষেত্রে দু’পক্ষেরই শ্যাম-কুল থাকবে।
বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ব্রিটেন সফরে ইউনূস সে দেশের প্রধানমন্ত্রী কিয়র স্টারমার, পার্লামেন্টের স্পিকার, কমনওয়েলথ এবং আইএমও-র মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেন। ইউনূস প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোটি কোটি টাকা ইউরোপের বহু দেশে পাচার হয়েছে। ব্রিটেন অন্যতম। সেখান থেকে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরানোও সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান এম এ মোমেনও প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হচ্ছেন।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)