Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে রক্তাক্ত হামলা টানত মিউনিখের মলে হামলা চালানো আলিকে

কালো টি শার্ট পরা ছেলেটির পিঠে ছিল একটা লাল রঙা রুকস্যাক। ৩০০ রাউন্ড গুলির সঙ্গে তাতে ছিল একটা বইও। নাম ‘হোয়াই কিডস কিল: ইনসাইড দ্য মাইন্ডস অব স্কুল শ্যুটারস’। লেখক পিটার ল্যাঙ্গম্যানের এই বইটা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছিল ছেলেটা।

মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং মলের সামনে নিহতদের স্মরণ। ইনসেটে হামলাকারী আলি। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।

মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং মলের সামনে নিহতদের স্মরণ। ইনসেটে হামলাকারী আলি। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
মিউনিখ শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

কালো টি শার্ট পরা ছেলেটির পিঠে ছিল একটা লাল রঙা রুকস্যাক। ৩০০ রাউন্ড গুলির সঙ্গে তাতে ছিল একটা বইও। নাম ‘হোয়াই কিডস কিল: ইনসাইড দ্য মাইন্ডস অব স্কুল শ্যুটারস’। লেখক পিটার ল্যাঙ্গম্যানের এই বইটা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেছিল ছেলেটা। গবেষণা করেছিল বিশ্বের নানা প্রান্তের নানা স্কুলে বন্দুকবাজদের হামলার ঘটনা নিয়েও। কারণ?

ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের গুলি করে খুন করার মতো নৃশংস ঘটনা ভীষণ ভাবে টানত তাকে। আর সম্ভবত সেই জন্যই ফেসবুকে এক মহিলার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে নিখরচায় খাওয়া-দাওয়ার জন্য শুক্রবার সে ম্যাকডোনাল্ড রেস্তোরাঁয় ডেকেছিল অল্প বয়সি ছেলে-মেয়েদের। টোপ দেওয়ার জন্য আবার লিখেছিল, ‘‘আমি এমন কিছু দেব, যেটা তোমরা চাও।’’

আলি ডেভিড সনবোলি। ইরানি বংশোদ্ভূত এই জার্মান কিশোরই কাল বিকেলে মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং মলে হামলা চালিয়ে মেরে ফেলেছে ন’জনকে। নিহতের মধ্যে সাত জনই কিশোর-কিশোরী বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহত ২৭ জনও বেশির ভাগ অল্প বয়সি। যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনার ঘণ্টা খানেক পরে শহরেরই এক রাস্তায় মিলেছে বছর আঠারোর আলির নিথর দেহ। পুলিশের ধারণা, হামলা চালিয়ে ওই শপিং মল থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে আত্মহত্যা করেছে সে। তবে তারা এ-ও জানিয়েছে ময়না-তদন্তের পরেই জানা যাবে, সে আত্মহত্যা করেছে, নাকি পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছে।

ফ্রান্সের নিস, জার্মানির উয়েজবার্গের পরে মিউনিখ। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে তিন-তিনটে হামলা কাঁপিয়ে দিয়েছে ইউরোপকে। তবে আগের দু’টো ঘটনার সঙ্গে ইসলামি জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোগ থাকলেও তৃতীয়টিতে এসে ধাক্কা খাচ্ছে পুলিশ। ধোঁয়াশা এতটাই যে কালকের শপিং মলের ওই বন্দুকবাজকে জঙ্গি আখ্যা দেওয়া হবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছে পুলিশ।

তবে একটি বিষয়ে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পেরেছে পুলিশ। আর সেটা হলো, নরওয়ের হামলাকারী অ্যান্ডার্স বেহরিং ব্রেইভিকের বিশাল ভক্ত ছিল কিশোর আলি। তার হোয়াটসঅ্যাপের ডিপি (ডিসপ্লে পিকচার)-তেও রয়েছে ব্রেইভিকেরই ছবি। পাঁচ বছর আগের ২২ জুলাই নরওয়ের অসলোতে একা হামলা চালিয়ে সত্তরেরও বেশি মানুষকে মেরে ফেলেছিল দক্ষিণপন্থী এই জঙ্গি। আর সেই ঘটনার পাঁচ বছর পূর্তির দিনটা হয়তো নিজের হামলার জন্য ইচ্ছে করেই বেছেছিল আলি। মিউনিখ পুলিশের কর্তা হুবেরতাস আন্দ্রাই আজ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আইএসের সঙ্গে আলির কোনও যোগসূত্র এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

কাল ঘাতকের পরিচয় পাওয়ার পর পরই তার বাবা-মায়ের অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। অলিম্পিয়া শপিং মল থেকে প্রায় দু’মাইল দূরের ওই ফ্ল্যাটে তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্কুলে ছোট ছোট শিশু বা কিশোর-কিশোরীদের উপর হামলা চালানোর ঘটনা নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করেছিল আলি। তার কম্পিউটার ঘেঁটেও মিলেছে এই ধরনের বেশ কিছু গেমসের খোঁজ। জার্মানির মতো দেশে যেখানে কঠোর বন্দুক নীতি রয়েছে, সেখানে আলি কী করে আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে ফেলল তার হদিস পাননি তদন্তকারীরা। কাল সে একটি নাইন এমএম গ্লক পিস্তল নিয়ে শপিং মলে গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সেই সঙ্গেই আলির ব্যাগে ছিল প্রায় তিনশো রাউন্ড গুলি। আলির যে মানসিক চিকিৎসা চলছিল, তা-ও জানতে পেরেছে পুলিশ। হতাশায় ভুগত সে। জানা গিয়েছে, কাল রেস্তোরাঁয় ঢুকে গুলি চালানোর ঠিক আগের মুহূর্তে বিদেশিদের উদ্দেশে কটূক্তি করেছিল আলি। নিহতদের মধ্যে তিন জন কসোভো ও তিন জন তুরস্কের বাসিন্দা। তাই গোটা ঘটনার মূলে শরণার্থী সমস্যাও থাকতে পারে বলে সন্দেহ পুলিশের।

প্রথমে তিন জন বন্দুকবাজের কথা বলা হলেও কাল রাতের দিকে পুলিশ জানায়, হামলাকারী এক জনই ছিল। আর তার মৃত্যু হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে আরও যে দু’জনকে প্রায় পাগলের মতো ছুটতে দেখা গিয়েছিল, তাঁরা সম্ভবত নিজেদের প্রাণ বাঁচাতেই দৌড়চ্ছিলেন বলে পরে জানায় পুলিশ।

তবে মিতভাষী, নাদুস-নুদুস আলি কী করে শপিং মলে গিয়ে এতগুলো লোককে মেরে ফেলল, তা ভাবতে পারছেন না তার পড়শিরা। আলির বাবা ট্যাক্সি চালান। মা একটি স্থানীয় শপিং মলে কাজ করেন। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সে নিজে কাগজ বিলির কাজও করত। কাল সকালেও কাগজ বিলিয়েছে সে। আদ্যন্ত মধ্যবিত্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠা সেই আলির ছবি আজকের খবরের কাগজে দেখে চমকে উঠেছেন মার্ক্সভরস্টাড

এলাকার লোকজন। তবে তার স্কুলের সহপাঠীরা অবশ্য অন্য একটা ছবিও দেখিয়েছে। স্কুলে মাঝে মধ্যেই আলিকে নিয়ে মশকরা করা হতো বলে জানিয়েছে তারা। স্কুলে বিশেষ বন্ধুও ছিল না লাজুক স্বভাবের ওই কিশোরের। কোন হতাশা থেকে সে এই রাস্তা বেছে নিল, তার তল পাচ্ছে না পুলিশও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Munich Ali Sonboly Olympia shopping centre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE