Advertisement
E-Paper

ছিলেন কেক-পেস্ট্রির সংস্থার সেলসম্যান, সেই বাঙালিই এখন লন্ডন পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখার প্রধান

৫০ বছর বয়সী নীলের বাবার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কলকাতায়। পেশায় শল্য চিকিৎসক তিনি।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ১৯:৪৯
নীল বসু। ছবি: সংগৃহীত।

নীল বসু। ছবি: সংগৃহীত।

গায়ে রং বাদামি বলে বর্ণ বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন ছোট থেকেই। ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি, সেই নীল বসুই এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন লন্ডনে। শহরের অলিগলিতে থেকে সন্ত্রাস ছেঁটে ফেলাই তাঁর প্রধান কাজ। গতকাল লন্ডন ব্রিজের উপর সন্ত্রাস হামলার তদন্তের ভারেও গিয়ে পড়ে গিয়েছে তাঁর কাঁধেই। এই মুহূর্তে জন সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাঁর প্রধান কাজ বলে জানিয়েছেন তিনি।

৫০ বছর বয়সী নীলের বাবার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা কলকাতায়। পেশায় শল্য চিকিৎসক তিনি। পরে ইংল্যান্ড চলে যান। কর্মসূত্রে আলাপ হওয়া ওয়েলসের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। তাঁদেরই সন্তান নীল। সাতের দশকে স্ট্যাফোর্ডে বেড়ে ওঠেন তিনি। গায়ের রঙের জন্য ছোট থেকেই হেনস্থা হতে হয়েছে তাঁকে। তবে তা কখনওই মানসিক ভাবে তাঁকে দু্র্বল করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে মা-বাবা দু’জনেই চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত হলেও, তিনি নিজে সেই পেশায় ঢুকতে চাননি বলে জানিয়েছেন নীল। বাবা চেয়েছিলেন ছেলে আইনজীবী হোক, তবে পড়াশোনার জন্য অর্থনীতিকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সেইমতো নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি নিয়ে পাশ করেন। এর পর বার্কলেজ ব্যাঙ্কে শিক্ষানবিশ হিসাবেও কাজ করেন কিছু দিন। সেখান থেকে কেক-পেস্ট্রির সংস্থা ‘মার্স কনফেকশনারি কোম্পানি’-তে সেলসম্যান হিসাবেও কাজ করেন।

আরও পড়ুন: লন্ডনের ব্রিজ ঘাতকের বড় হওয়া পাকিস্তানে, তদন্তের মাথায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাঙালি​

কিন্তু সেখান মনে বসেনি তাঁর। এর পরই ১৯৯২ সালে, ২৪ বছর বয়সে ‘বিট ববি’ হিসাবে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশে যোগ দেন তিনি। দক্ষিণ লন্ডনের ব্যাটারসি-তে সাইকেলে চেপে এবং পায়ে হেঁটে নজরদারি চালানোই সেই সময় প্রধান কাজ ছিল তাঁর। টানা চার বছর ওই ভাবে কাজ করার পর, ব্রিক্সটনে সার্জেন্ট হিসাবে নিযোগ করা হয় তাঁকে। ১৯৯৭ সালে সিআইডি-র সার্জেন্ট হিসাবে বদলি করা হয় তাঁকে এবং তার দু’বছর পর ইনস্পেক্টর পদে উন্নীত হন।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের দুর্নীতি দমন বিভাগেও কাজের সুযোগ পান নীল। ২০০৩ সালে লন্ডন পুলিশের হোমিসাইড শাখার ডিটেকটিভ চিফ ইনস্পেক্টর নিযুক্ত হন। টানা তিন বছর ওই পদে থাকার পর সংগঠিত অপরাধ বিভাগের ডিটেকটিভ সুপারইন্টেন্ডেন্ট পদে উন্নীত হন তিনি। তবে এর পরেই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসে তাঁর জীবনে। হাতে কলমে কখনও অস্ত্র প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে না গেলেও, ২০১৩-’১৪ সালে সশস্ত্র পুলিশের কম্যান্ডার ইন চার্জ নিযুক্ত হন তিনি। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে একটি সংবাদমাধ্যমে নীল বলেন, ‘‘জীবনে কখনও বন্দুক হাতে নেওয়ার ইচ্ছাই হয়নি আমার। পুলিশের চাকরি অস্ত্রসর্বস্ব হলে হয়ত এই পেশাতেই আসতাম না আমি।’’

২০১৫ সালে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার নিযুক্ত হন নীল। সেইসময় সন্ত্রাসদমন শাখার তৎকালীন প্রধান স্যর মার্ক রাওলির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। গত কয়েক বছরে লন্ডন এবং ব্রিটেন জুড়ে একাধিক সন্ত্রাস হামলা ঘটলে, সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা এমআই-৫-এর আধিকারিকদের সঙ্গেও কাজ করার সুযোগ মেলে। তার পরেই গত বছর মার্চে মার্ক রাউলি অবসর নিলে, সন্ত্রাসদমন শাখার প্রধান নিযুক্ত করা হয় তাঁকে।

আরও পড়ুন: লন্ডন ব্রিজে ছুরি নিয়ে জঙ্গি হানায় হত অন্তত ২, জখম ৫

দীর্ঘ কেরিয়ারে কখনও নিজেকে জাহির করেননি বলে সুনাম রয়েছে নীলের। কোনও মামলায় বিরাট সাফল্য পেলেও, কখনও সংবাদমাধ্যমের সামনে তা নিয়ে বিবৃতি দিতে দেখা যায়নি তাঁকে। তার জন্য সহকর্মীদের মধ্যে তিনি যথেষ্ট জনপ্রিয়ও। নীলের স্ত্রী নিনা কোপ সে দেশের জাতীয় অপরাধ সংস্থা (ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি)-র ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল। তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে। অবসর সময়ে মোটর সাইকেল চালাতে পছন্দ করেন নীল। খেলাধূলার পাশাপাশি সিনেমা দেখার প্রতিও ঝোঁক রয়েছে তাঁর।

London Bridge Terrorist Attack Neil basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy