কাঠমাণ্ডুর পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে বেরোচ্ছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, মন্দিরের ঘাট সংস্কার ও উন্নয়নে সাহায্য করবে ভারত। — নিজস্ব চিত্র।
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতের পাশাপাশি চিনকেও সঙ্গে নিয়ে চলতে চায় নেপাল। তবে চিন পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ালেও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পাকিস্তানকে একঘরে করার প্রশ্নে নেপাল থাকছে ভারতেরই পাশে।
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন নেপাল সফরে, সে সময় নেপালের বিদেশমন্ত্রী প্রকাশ শরণ মহত কোনও রাখঢাক না-করেই বুঝিয়ে দিলেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাঁরা ভারতের পাশে। নেপালে চিনের ক্রমেই বেড়ে চলা প্রভাব নিয়ে চিন্তিত নয়াদিল্লি। কিন্তু পাকিস্তানের প্রশ্নে যে বেজিং এখনও কাঠমান্ডুকে প্রভাবিত করতে পারেনি, তা বুঝিয়ে দিয়ে প্রকাশ এ দিন বলেন, “নিজেদের মাটিকে জঙ্গিদের ব্যবহার করতে দেওয়া কোনও দেশেরই উচিত নয়। সন্ত্রাসবাদীদের নিকেশ করাই উচিত।”
উরির হামলার পরে ইসলামাবাদে সার্ক-সম্মেলন বয়কট করেছিল ভারত। ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে সন্ত্রাসের নিন্দা করে কাঠমান্ডুও। নেপাল ও অন্যান্য দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সার্ক-গোষ্ঠীতে পাকিস্তানকে একঘরে করতে চাইছে নয়াদিল্লি। সার্কের সদর দফতর কাঠমান্ডুতে। নেপালই এখন সার্কের সভাপতিত্ব করছে। নেপালের বিদেশমন্ত্রী এ দিন জানিয়ে দেন, কবে আবার সার্ক শীর্ষবৈঠক হবে, এই মুহূর্তে তা বলা যাচ্ছে না। এমনকী বৈঠকের স্থান বদল করেও এই অনিশ্চয়তা কাটবে না। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মতভেদ কাটার কোনও লক্ষণ নেই।
সার্কের মধ্যে যারা সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছে, নেপাল সফরে এসে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা বলছেন প্রণববাবুও। তিনি বলেন, “সার্ক ও বিমস্টেক-এর কাঠামোর মধ্যে ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতায় দায়বদ্ধ। কিন্তু সীমান্ত পারের সন্ত্রাসের ছায়ায় সেই সহযোগিতা চলতে পারে না। যারা সীমান্ত পারের সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রনীতির অঙ্গ হিসেবে দেখেন, তাদের বিচ্ছিন্ন করতে সব দেশকে একজোট হতে হবে।”
প্রণবের সুরে প্রকাশও এ দিন বলেন, “আমরা পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে চাই।” সার্কের পাশাপাশি গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলনেও মোদী সরকার পাকিস্তানের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিন্দায় সব দেশকে এককাট্টা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু চিন ও রাশিয়ার আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি।
গত বছর ভূমিকম্পের পর ভারত নেপালের পাশে দাঁড়ালেও, ভারতীয় বংশোদ্ভূত মদেশীয়দের অবরোধকে কেন্দ্র করে নেপালে ভারতের সম্পর্কে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। বেজিং সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে। নেপালের রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ ধরেই নিয়েছেন, ভারতই অঘোষিত অবরোধ তৈরি করে নেপালে তেল ও অন্যান্য জরুরি পণ্য পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিল। সেই মনোভাব দূর করতেই এ বার প্রণব নিজে নেপাল সফরে এসেছেন। প্রচণ্ড সরকার ও নেপালের আমজনতাও বার্তা দিয়েছেন, ভারত বন্ধুত্বের হাত বাড়ালে তাঁরাও বিমুখ করবেন না। কাঠমান্ডুতে প্রণবকে নাগরিক সংবর্ধনা, কাঠমান্ডু পুরসভার তরফ থেকে তাঁর হাতে শহরের প্রতীকি চাবি তুলে দেওয়া, কাঠমান্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডি লিট প্রদান থেকেই তা স্পষ্ট।
তবে চিনের সঙ্গে সব বাণিজ্যিক সম্পর্ক যে নেপাল ত্যাগ করবে না, সেটাও স্পষ্ট। প্রচণ্ড-সরকারের মন্ত্রীদের যুক্তি, ভারতের মতো চিনও এ দেশে পরিকাঠামো ও আবাসনের মতো ক্ষেত্রে বিপুল বিনিয়োগ করছে। বাণিজ্যিক লেনদেনও ধীরে ধীরে বাড়ছে। নেপালের অর্থনৈতিক স্বার্থেই তা বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব নয়। প্রণবের সফরের মধ্যেই দু দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতিতে নেপাল-চিন এগজিকিউটিভ কাউন্সিল ও চিনের ইউনান প্রদেশের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়েছে। কাঠমান্ডুর রাজনীতিকরা বরং চান, লগ্নি বাড়াতে ভারত-নেপাল-চিন ত্রিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে উঠুক। এই ভাবনায় বেজিংয়েরও সায় রয়েছে।
কিন্তু নয়াদিল্লি কি এর পক্ষে?
নেপালে এসে এই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন প্রণববাবুও। সরাসরি মন্তব্য না করে বলেছেন, “সব পক্ষের যাতে সুবিধা হবে, বিশেষ করে নেপালের আর্থিক উন্নতি ও মানুষের কল্যাণ হবে, এমন যে কোনও ভাবনাকেই আমরা খোলা মনে দেখতে রাজি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy