দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে সদ্যগঠিত জি-২ চতুর্দেশীয় অক্ষ কোয়াডকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলবে কিনা, তা সময়ই বলবে। আপাতত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ভারতের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
প্রথমত, এমন সময়ে চিনের শুল্ক কমিয়ে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি শি-এর কাছ থেকে আপাতভাবে আদায় করে নিলেন ট্রাম্প, যখন ভারতের সঙ্গে তাঁর এবং আমেরিকার সম্পর্ক কূটনৈতিক নাগরদোলায় সওয়ার। হচ্ছে-হবেকরেও ভারত-আমেরিকা প্রস্তাবিত বাণিজ্যচুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। শুল্ক এবং পণ্যে একে অন্যের বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে দরকষাকষি চলছেচূড়ান্ত পর্যায়ে। এমন সময়ে আমেরিকারতরফে চিনের শুল্ক কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করে দেওয়া ভারতের আরও একটি ধাক্কা। রাশিয়া থেকে তেল কেনা বাবদ২৫ শতাংশ জরিমানা শুল্ক মিলিয়ে ভারতীয় পণ্যের এখন ৫০ শতাংশ শুল্ক লাগছে আমেরিকায় রফতানির জন্য। চিনের শুল্ক কমার ফলে সে দেশের বাজারে আপাতত অসুবিধাজনক জায়গায় পড়বে ভারতীয় পণ্য।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও কূটনৈতিক সিলমোহর না পড়লেও ট্রাম্প এই বৈঠককে জি২ হিসাবেই বলছেন। বিষয়টি বেজিংয়ের মন গলানোর জন্য যথেষ্ট। দীর্ঘদিন ধরেই চিন চাইছিল, আমেরিকার সমমর্যাদা। বারাক ওবামার শাসনকালে এই জি২ ধারণাটির কথা প্রথম ওঠে। আমেরিকা ও চিনের মধ্যে সহযোগিতার সেই তত্ত্ব সে সময় টেকেনি। কিন্তু কলার তোলা চিন সেই সময় থেকে ভারতকে চাপে রাখতে শুরু করেছিল। তাদের এটুকু আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, ভারতকে চাপে রাখলে আমেরিকার দিক থেকে অন্তত কোনও প্রতিরোধ আসবে না।
ভূকৌশলগত পরিস্থিতি বদলেছে, কিন্তু চিনের ক্ষমতা সে দিনের থেকে আদৌ কমেনি, বরং বেড়েছে। ফলে সেই পরিস্থিতি আবার ফিরে আসতে পারে। দ্বিতীয়ত মনে করা হচ্ছে, চিনের দিকে ট্রাম্পের এতটা ঝোঁকার অন্যতম কারণ হল রাশিয়া। পুতিনের সঙ্গে আমেরিকার আলোচনা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। ট্রাম্পের কথায় তিনি নাচবেন না, তা স্পষ্ট। ফলে পুতিনকে সবক শেখাতে হলে নয়াদিল্লির তুলনায় বেজিং অনেকটাই শক্তিশালী অস্ত্র ওয়াশিংটনের কাছে। ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে শি বড় ভূমিকা নিতেই পারেন।
চিনকে নিজের শর্তে কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক পথে চালানোর চেষ্টা থেকে ট্রাম্প বিরত হবেন, এমন নয়। তবে এ বার তিনি চিনের শরিক এবং অংশীদার হয়েই সেই কাজ করতে চাইছেন, শত্রুতা করে নয়। আর তিনি যদি নিজেই বেজিংকে সামলে নিতে পারেন, তা হলে কোয়াড বা নয়াদিল্লির আলাদা করে গুরুত্ব অনেকটাই কমে আসে ওয়াশিংটনের কাছে, এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)