Advertisement
E-Paper

যুদ্ধের বয়স কত, জল্পনা নয়া গবেষণায়

সামনে থেকে আঘাত করা হয়েছে মাথায়। তার পর গলায় বসানো হয়েছে ধারালো কোনও অস্ত্র। উত্তর কেনিয়ায় লেক তুর্কানার ধারে দশ হাজার বছর আগের এ রকম ২৭টি জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তুর্কানা বেসিন ইনস্টিটিউটের এক দল গবেষক। খুলিগুলো দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কোনও ভয়ঙ্কর যুদ্ধে আহত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ওই সব মানুষের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৬ ১১:০০

সামনে থেকে আঘাত করা হয়েছে মাথায়। তার পর গলায় বসানো হয়েছে ধারালো কোনও অস্ত্র। উত্তর কেনিয়ায় লেক তুর্কানার ধারে দশ হাজার বছর আগের এ রকম ২৭টি জীবাশ্মের সন্ধান পেয়েছেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং তুর্কানা বেসিন ইনস্টিটিউটের এক দল গবেষক। খুলিগুলো দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, কোনও ভয়ঙ্কর যুদ্ধে আহত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ওই সব মানুষের। গত কালই এ নিয়ে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার’ পত্রিকায়।

আর এই গবেষণা থেকেই নতুন প্রশ্নের সূত্রপাত। ‘যুদ্ধের’ শুরুটা তা হলে কোথায়? কত বছর আগে হিংসের বীজ ঢুকে গিয়েছিল মানুষের মনে?

এই নিয়ে বিতর্ক অবশ্য নতুন নয়। কেউ কেউ মনে করেন, লড়াইটা মানুষের চিরকালীন সঙ্গী। রাষ্ট্র তৈরি হওয়ার অনেক আগেই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল একে অপরের সঙ্গে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমনকল্যাণ লাহিড়ীর কথায়, ‘‘১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফ্যালিয়া চুক্তির পরেই আমরা প্রথম রাষ্ট্রের ধারণা পাই। কিন্তু লড়াইয়ের ধারণাটা ছিল তার অনেক আগে থেকেই।’’ তাঁর মতে, সম্পদের লোভেই চিরকাল একে অপরকে আক্রমণ করেছে মানুষ। সম্পদের সংজ্ঞাটা শুধু বদলেছে এক যুগ থেকে আর এক যুগে। কখনও সেটা শিকার করে আনা খাবার। কখনও কৃষিজমি। আবার বর্তমানে তা ক্ষমতা কুক্ষিগত করার প্রতিযোগিতা। আসলে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলাটা বহু যুগের। তা রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের হোক বা মানুষের সঙ্গে মানুষের। সব হয়তো ইতিহাসে নথিভুক্ত নয়। বঙ্গবাসী কলেজের নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপিকা প্রিয়দর্শিনী সেনগুপ্তেরও মত একই। তিনি বলেছেন, ‘‘আমরা ধরে নিই, নব্য প্রস্তর যুগ থেকে যখন সামাজিক জীবন শুরু করেছে মানুষ, নানা জায়গায় বসবাস করতে শুরু করেছে, তখন থেকে জমি দখলের লড়াই শুরু। কিন্তু আসলে তারও আগে যারা শিকার করে খেত, যাযাবরের মতো থাকত, লড়াই ছিল তাদের মধ্যেও। আর এই গবেষণা তারই প্রমাণ।’’

ওই দলের অন্যতম গবেষক রবার্ট ফোলের বক্তব্য, ‘‘এই গবেষণা থেকে উঠে আসছে, আমাদের অতীতের বিবর্তনের মধ্যেই গোষ্ঠী-সংঘর্ষ রয়েছে।’’ সামাজিক জীবন শুরুর আগেই শুরু হয়েছে হানাহানি। রক্তপাত। যদিও যুদ্ধ করেই যে লেক তুর্কানার ধারের মানুষগুলির মৃত্যু হয়েছে, তা মানতে নারাজ অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ডগলাস ফ্রাই।

লেক তুর্কানা থেকে ৩০ কিলোমিটার পশ্চিমে নাতারুক এলাকা। সেখানেই হঠাৎ চোখে পড়ে, পাথরের আড়াল থেকে কিছু একটা উঁকি মারছে। আর তা খেয়াল করেছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদের অধ্যাপিকা মার্তা মিরাজন লারের এক সহকারী। সালটা ২০১২। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল গবেষণা। নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার নেশায় ওই এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছিল মার্তার দল। ১২টি সম্পূর্ণ কঙ্কালের জীবাশ্ম এবং আরও ১৫টি কঙ্কালের অংশবিশেষ উদ্ধার করেছেন তাঁরা। এদের মধ্যে অনেকেই আবার শিশু। তাদের বয়স বছর ছয়েকেরও কম। কারও হাত পিছমোড়া করে বাঁধা। কারও বা হাঁটু। কেউ আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে। কোনও কোনও জীবাশ্ম দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ছুরি বা তিরের মতো ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তাঁদের। বাদ যাননি অন্তঃসত্ত্বারাও। বীভৎস মৃত্যুর প্রমাণ মিলেছে এর আগেও। তবে গবেষকেরা জানিয়েছেন, সেগুলি দেখে এটা স্পষ্ট বলা যেত যে, শিকারের সময়েই আঘাতে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। যদিও নাতারুকের এই কঙ্কালগুলি থেকে স্পষ্ট যে দু’টি দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। আর তা থেকেই মৃত্যু।

কঙ্কাল ছাড়াও এলাকা থেকে মিলেছে ব্লেড, মাটির পাত্রের টুকরো। ফোলের মতে, ওই এলাকার বাসিন্দারা শিকার করেই খেত। কিন্তু হঠাৎ কেন যুদ্ধ লেগেছিল, তার উত্তর মেলেনি। যদিও ফোলে বলেছেন, ‘‘হয়তো ওই এলাকাটি অন্য কোনও গোষ্ঠীর পছন্দ হয়েছিল। আর তাদের আক্রমণেই বেঘোরে প্রাণ যায় বাকিদের।’’

age of war archeologist archeology
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy