শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন করা হয়েছিল। এ বার সে দেশের স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট শপথবাক্যও বদলে ফেলা হল। ২০২১ সালের আগে পড়ুয়ারা যে শপথবাক্য পাঠ করতেন, তা পুনরায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পড়ুয়াদের দৈনন্দিন শপথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটিও। পরিবর্তিত শপথে এই সবগুলোই বাদ পড়েছে। দৈনন্দিন শপথ হিসাবে পড়ুয়াদের কী পাঠ করতে হবে, বুধবার একটি নির্দেশিকা দিয়ে তা জানিয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা দফতরের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা বিভাগ।
বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, শপথবাক্য হিসাবে বর্তমানে যে অংশটি কার্যকর করা হল, সেটি ২০২১ সালের শেষ পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। এখানে বিশেষ ভাবে জোর দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ‘একতা এবং সংহতি’ বজায় রাখার উপরে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, “অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না।” এই অন্যায় ও দুর্নীতির প্রসঙ্গটি অবশ্য বাংলাদেশের দুর্নীতিদমন কমিশন (এসিসি) প্রস্তাবে ২০১৩ সালে অন্তর্ভুক্ত হয়।
২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পুরনো শপথবাক্য বদলে নতুন একটি চালু করে। সেখানে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই (মুক্তিযুদ্ধ) এবং তাতে মুজিবের নেতৃত্বকে। ওই শপথে বলা হয়েছিল, “পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেয়েছে।” একই সঙ্গে সেখানে লেখা হয়, “বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে আমি সমৃদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ এবং ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করব।”
জুলাইয়ের গণ অভ্যুত্থানের জেরে গত ৫ অগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং তার পরবর্তী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতাচ্যুত হন হাসিনা। তার পর থেকেই বাংলাদেশের ক্ষমতায় রয়েছে মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তিকালীন প্রশাসন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরই বেশ কিছু পরিবর্তনের পথে হাঁটে। স্কুলের পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রক ৫৭ জন বিশেষজ্ঞের একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পাঠ্যক্রম এবং পাঠ্যপুস্তকে বহু ক্ষেত্রে বদল করা হয়েছে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মোট ৪৪১টি পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন করেছে এনসিবিটি।
বাংলাদেশের নতুন পাঠ্যক্রমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে হাসিনার নাম মুছে ফেলা। ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বে পাঠ্যপুস্তকের পিছনের পাতায় পড়ুয়াদের প্রতি হাসিনার বার্তা মুদ্রিত ছিল। নতুন পাঠ্যপুস্তকগুলিতে তা আর থাকছে না। তার পরিবর্তে জায়গা পেয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের সময়কার ছবি। নতুন পাঠ্যক্রমে মুজিবের কথা থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর ভূমিকা কয়েক জায়গায় হ্রাস করা হয়েছে। অথবা পুনর্লিখন করেছে ইউনূস প্রশাসন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার অধ্যায়গুলিকে নতুন করে লেখা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে স্বাধীনতা আন্দোলনে অন্যান্য নেতা-নেত্রীর কথা সংযোজন করেছে এনসিবিটি।