Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Paris Riot

কবে শেষ হবে অশান্তির অধ্যায়

গত মঙ্গলবার প্যারিসের শহরতলি নঁতেরে আলজেরীয় বংশোদ্ভূত নাইলকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পুলিশ গুলি করার পরেই দেশব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।

Paris

পুলিশের গুলিতে নিহত নাইলের স্মরণে এক অনুষ্ঠানে। প্যারিসে। ছবি: রয়টার্স।

শ্রেয়স সরকার
লিয়ন শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৩৮
Share: Save:

গত কয়েক দিন ধরেই অশান্ত এ দেশ। ১৭ বছরের নাইলের হত্যা নাড়িয়ে দিয়েছে গোটা দেশকে, দেশবাসীর মনকে। দিকে দিকে গাড়ি, বাড়ি ও দোকানের উপরে আছড়ে পড়েছে বিক্ষোভকারীদের রোষ। ট্রামলাইনে পড়ে ভাঙা কাচ, দোকান-রেস্তরাঁয় চলেছে অবাধ লুটপাট। লিয়নের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে গোটা পরিস্থিতি দেখে যেমন চমকে উঠেছি, তেমনই স্থানীয় বন্ধু, প্রতিবেশী, সহকর্মী ও পরিচিতদের কথা শুনে বাড়ছে উদ্বেগ।

ফ্রান্সের যে অগ্নিদগ্ধ, ধ্বংসাত্মক ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে উঠে আসছে তা শুধুমাত্র এক কিশোরের মৃত্যু-পরবর্তী দাঙ্গার প্রতিফলন নয়। তা পুলিশের বিরুদ্ধে তিলে তিলে গড়ে ওঠা অসন্তোষ, জাতিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ক্ষোভের অবশ্যম্ভাবী পরিণাম। মঙ্গলবার প্যারিসের শহরতলি নঁতেরে আলজেরীয় বংশোদ্ভূত নাইলকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পুলিশ গুলি করার পরেই দেশব্যাপী অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন যে, চলন্ত গাড়িতে তিনি বা তাঁর সহকর্মী আহত হতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকেই তিনি গুলি চালিয়েছিলেন। ওই পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে অবশ্য হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতার করে নেওয়া হয়েছে হেফাজতে। শনিবার নাইলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। প্রশাসনের তরফে বিক্ষোভের আঁচ কিছুটা কমেছে বলে জানানো হলেও লিয়নে টাউন হল সমেত প্রায় কুড়িটি দোকানে লুট চলে। ইতিমধ্যেই ৯৯টি টাউন হলে লেগেছে হিংসার আঁচ। রবিবার ২৯৭টি গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। আক্রমণ চলে ৩৪টি ভবনে। যার অধিকাংশই সরকারি ভবন। অশান্তিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৬০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

শনিবার লিয়নের এক দোকানের আধিকারিক বিরক্ত হয়ে বলেন, “সোমবার সব কিছু বিক্রি করে দেব। এ ভাবে আর পারছি না।” শহরের মেয়র গ্রেগরি দুসেত্ শনিবার বাসিন্দাদের সাধারণ সংগঠন এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়েছে কি না, বোঝা যায়নি। লিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী অ্যালেসিও মোতাও বলেন, “আমরা যাকে সাধারণত ‘শহুরে দাঙ্গা’ বলি, তা হল ফ্রান্সের ইতিহাসে একটি সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট কিছু ঘটনাকে অনুসরণ করে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। এই সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী হিসাবে দাঁড়িয়েছে। বেশির ভাগই মনে করেন, কোনও ঘটনা ঘটলেই রাস্তায় নেমে পড়ো। নিছক স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভ নয়, বরং হিংসার থেকেই এই মনোভাব। ফ্রান্সের অ্যানজার শহরের আদি বাসিন্দা সহকর্মী কেভিন জানাল যে, শনিবার কিছু দক্ষিণপন্থী জঙ্গিরা বেসবল ব্যাট হাতে প্রতিবাদী জনতাকে বেদম মারধর করে।

দাঙ্গা রুখে স্বাভাবিক অবস্থা ফেরাতে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর কাছে জরুরি অবস্থা বলবতের চাপ দিচ্ছেন দক্ষিণপন্থীরা। তাঁরা এই অবস্থার সদ্ব্যবহার করতে চান। অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারকে অর্থ সাহায্য করার জন্য এক দক্ষিণপন্থী সাংবাদিকের তৈরি সমাজমাধ্যমের পেজের মাধ্যমে ১০ লক্ষ ডলার অনুদান তোলা হয়েছে। অন্য দিকে নাইলের পরিবারের জন্য তোলা অনুদানের পরিমাণ ২ লক্ষ ডলারের কাছাকাছি। আমার প্রতিবেশী জেরেমি মনে করিয়ে দিল, সরকার ২০০৫-এর পুনরাবৃত্তি এড়াতে মরিয়া। সে বার আফ্রিকান বংশোদ্ভূত দু’টি ছেলের মৃত্যুর পরে তিন সপ্তাহব্যাপী দাঙ্গা চলেছিল। শেষে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সরকার।

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অন্যায় ভাবে এক কিশোরকে মেরে ফেলা পুলিশ কি নির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করে দাঙ্গা রুখতে পারবে? কবে শেষ হবে এই অশান্তির অধ্যায়?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Paris Emmanuel Macron
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE