Advertisement
১১ মে ২০২৪
Nobel Prize 2022

অণু জোড়া দেওয়ার কৌশল আবিষ্কারে মিলল নোবেল

রসায়নবিদ্যার জন্ম নাকি অ্যালকেমি থেকে। সেই অ্যালকেমি, যা মানুষকে স্বপ্ন দেখাত অমরত্বের, কিংবা লোহাকে সোনা বানিয়ে ফেলার। সেই স্বপ্ন ঘুচতে সময় লাগেনি।

(বাঁ দিক থেকে ডান দিকে) ক্যারোলিন বার্তোজ্জি, মর্টেন মেলডাল, ব্যারি শার্পলেস।

(বাঁ দিক থেকে ডান দিকে) ক্যারোলিন বার্তোজ্জি, মর্টেন মেলডাল, ব্যারি শার্পলেস।

পথিক গুহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২২ ০৬:১৫
Share: Save:

ক্লিক কেমিস্ট্রি। এ বারের রসায়ন বিদ্যায় নোবেল প্রাইজের মূল বিষয় ওটাই। এ বছর ওই পুরস্কার পাচ্ছেন আমেরিকায় স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রির প্রফেসর ক্যারোলিন বার্তোজ্জি, ক্রিপস রিসার্চের ব্যারি শার্পলেস এবং ডেনমার্কে কোপেনহাগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্টেন মেলডাল। এর মধ্যে শার্পলেসের এ বার দ্বিতীয় নোবেল। ২০০১ সালে অনুঘটক বিক্রিয়ার জন্য তিনি নোবেল পেয়েছিলেন। সে বার পেয়েছিলেন আধখানা নোবেল, এ বার পাচ্ছেন তিন জন। পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি সুইডিশ ক্রোনর (প্রায় ১০ লক্ষ ডলার)।

রসায়নবিদ্যার জন্ম নাকি অ্যালকেমি থেকে। সেই অ্যালকেমি, যা মানুষকে স্বপ্ন দেখাত অমরত্বের, কিংবা লোহাকে সোনা বানিয়ে ফেলার। সেই স্বপ্ন ঘুচতে সময় লাগেনি। উনবিংশ শতাব্দীতে এসে রসায়ন শুধু পরিণত হয়েছে বিক্রিয়ার বিজ্ঞান। নানা পদার্থের পরমাণু থেকে অণু। সেই অণু সমূহের মধ্যে বিক্রিয়া। বিক্রিয়া মানে অণু-পরমাণু জুড়ে জুড়ে নতুন পদার্থ তৈরি। জোড়া দেওয়ার এক নতুন কৌশলের নামই ক্লিক কেমিস্ট্রি।

প্রকৃতির মিস্তিরিগিরি দেখে মানুষ বিস্মিত। কত যে জটিল অণু তৈরি হয় আমাদের চারপাশে, তার ইয়ত্তা নেই। আর এক বিস্ময় জীবদেহের অণু। জটিলতায় এ সবের তুলনা মেলা ভার।

জটিল ওই সব অণু দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বিজ্ঞানীর সাধ জাগে ওই রকম অণু তৈরি করার। কিন্তু পরমাণু দিয়ে অণু তৈরির ওই সাধ অপূর্ণ থেকে যায় ক্লিক কেমিস্ট্রি বিনে।

২০০০ সাল নাগাদ শার্পলেস ক্লিক কেমিস্ট্রি উদ্ভাবন এবং নামকরণ করেন। ইংরেজিতে বলা যায় স্টারটেড দ্য স্লোবল রোলিং। সেই স্লোবল ধীরে ধীরে একে বারে তুষারপাতে পরিণত হয়। ক্লিক কেমিস্ট্রি এসে যাওয়ায় বিভিন্ন অণু-পরমাণুর জোড়া দেওয়া সহজ হয়েছে।

শার্পলেস আর মেলডাল আলাদা ভাবে ক্লিক কেমিস্ট্রি প্রথা প্রয়োগ করে অ্যাজ়াইড এবং অ্যালকাইন অণু জোড়া দিয়েছিলেন। তামার পরমাণুকে অনুঘটক হিসেবে ব্যবহার করে। অ্যাজ়াইড হল তিন পরমাণু নাইট্রোজেনওয়ালা অণু। অ্যালকাইন হল বিভিন্ন ধরনের হাইড্রো-কার্বন। তাদের মধ্যে যোগাযোগ সাধারণত হয় না, ক্লিক কেমিস্ট্রি প্রথা প্রয়োগে হয়। এই পদ্ধতি প্রয়োগের নানা ব্যবহার আছে। যেমন, ওষুধ প্রস্তুতে, প্রাণের মূলে অণু ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) মানচিত্র তৈরিতে।

বার্তোজ্জি ক্লিক কেমিস্ট্রি প্রয়োগে রসায়ন বিদ্যার নতুন যুগ আনেন। তিনি গবেষণা করেন মূলত জীবদেহের অণু নিয়ে। জীবদেহের অণু নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বার্তোজ্জি দেখেন, জীবদেহের কোষগুলি তামার পরমাণু সহ্য করতে পারে না। কিন্তু জীবদেহের কোষের আশেপাশের অণু সমূহের জোড়া দেওয়ার দরকার। কী হবে? ক্লিক কেমিস্ট্রি প্রথা প্রয়োগ করে বার্তোজ্জি এমন কৌশল আবিষ্কার করেন, যাতে করে তামার পরমাণুর প্রয়োজন ছাড়াই ওই যোগাযোগের কাজটা সমাধা হয়ে যায়। এটাকে এখন প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্যানসারের মতো মারণরোগের ওষুধ প্রস্তুতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nobel Prize 2022 Chemistry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE