পিস হাউজে করমর্দন দক্ষিণ কোরীয় প্রতিনিধিদলের প্রধান চো মিয়ং গিয়ন এবং উত্তর কোরীয় প্রতিনিধিদলের নেতা রি সন গনের। ছবি: এএফপি।
দু’বছর পর আলোচনার টেবিলে উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। একটানা প্রবল উত্তেজনা, কূটনৈতিক সম্পর্কের সাঙ্ঘাতিক অবনতি, নিয়মিত যুদ্ধের হুঁশিয়ারি ও পাল্টা হুঁশিয়ারি চলছিল গত কয়েক বছর ধরে। সেই পরম্পরায় ছেদ টেনে শীতকালীন অলিম্পিক্সের আসরকে কেন্দ্র করে আলোচনায় বসল দু’দেশ। দুই কোরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত বাহিনী-রহিত অঞ্চলে আয়োজিত এই বৈঠকের দিকে এখন নজর গোটা বিশ্বের।
বাহিনী-রহিত অঞ্চলের যে গ্রামকে দুই কোরিয়ার সমঝোতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, সেই পানমুনজোমে বৈঠক আয়োজিত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অংশে নির্মিত পিস হাউজে বৈঠক করেছেন দুই কোরিয়ার প্রতিনিধিরা। উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন রি সন গন। দুই কোরিয়ার পুনর্মিলনের লক্ষ্যে উত্তর কোরিয়ায় যে কমিটি রয়েছে, সেই ‘কমিটি ফর পিসফুল রিউইনিফিকেশন অব দ্য ফাদারল্যান্ড’-এর চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন রি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন সে দেশের একত্রীকরণ মন্ত্রী (ইউনিফিকেশন মিনিস্টার) চো মিয়ং গিয়ন।
উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে জয়েন্ট সিকিওরিটি এরিয়া হয়ে এ দিন পিস হাউজে পৌঁছন রি ও তাঁর সঙ্গীরা। পিস হাউজে পা রেখেই রি বলেন, ‘‘এই বৈঠককে দারুণ ভাবে ফলপ্রসূ করে তোলার ভাবনা নিয়েই আজ আমরা এখানে এসেছি, সেটাই হবে আমাদের ভাইদের (দক্ষিণ কোরিয়া) জন্য নতুন বছরের প্রথম উপহার, যাঁরা এই বৈঠক নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী।’’
দক্ষিণ কোরিয়ার তরফে চো বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার পর আবার আমাদের কথা শুরু হল। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, প্রথম পদক্ষেপটা করতে পারলেই অর্ধেকটা পথ পেরনো হয়ে যায়।’’
বাহিনী-রহিত অঞ্চলের পানমুজোম গ্রাম। সেখানে কংক্রিটের সীমান্ত পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে পা রাখছেন উত্তরের প্রতিনিধিরা। ছবি: রয়টার্স।
এ বারের শীতকালীন অলিম্পিক্সের আসর বসছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্যেয়ংচ্যাং-এ। উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলিটরাও সেই আসরে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু যে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তরের বিবাদ চরমে, সেই দক্ষিণ কোরিয়ায় আয়োজিত খেলার আসরে কী ভাবে যোগ দেবেন উত্তর কোরিয়ার খেলোয়াড়রা, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। সেই সংশয় কাটাতে তথা দক্ষিণে আয়োজিত আসরে উত্তরের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ মসৃণ করে তুলতেই মঙ্গলবার বৈঠকে বসেছেন দু’দেশের প্রতিনিধিরা। এই আন্তর্জাতিক আসরে দুই কোরিয়ার প্রতিযোগীরা অভিন্ন পতাকা নিয়ে এবং অভিন্ন জাতির প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বাড়ছে আইএস, দাবি রিপোর্টে
এ দিনের আলোচনা অবশ্য শুধু শীতকালীন অলিম্পিক্সে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে সোল সূত্রের খবর। দু’দেশের সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর বিষয়েও আলোচনা হওয়ার কথা এই বৈঠকে। দক্ষিণের মন্ত্রী চো মিংয় গিয়ন জানিয়েছেন, কোরীয় উপদ্বীপ দু’ভাগে ভেঙে যাওয়ার জেরে যে সব নাগরিক তাঁদের আত্মীয়-পরিজনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে। দুই কোরিয়ার নাগরিকরা কী ভাবে আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে পারেন, তার পথ খোঁজার চেষ্টা এই বৈঠকে হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: সীমান্ত লঙ্ঘন না করার প্রতিশ্রুতি দিল চিন, সরঞ্জাম ফেরাল ভারত
উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার এই বৈঠক সম্পর্কে আমেরিকার প্রতিক্রিয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সুর বরাবরই চড়া। আলোচনার পথে হেঁটে আর কোনও লাভ নেই, উত্তর কোরিয়াকে অন্য পথে জবাব দিতে হবে— এমন মন্তব্যও ট্রাম্প করেছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আর উত্তরের মধ্যে আলোচনা হতে পারে, এ কথা স্পষ্ট হওয়ার পর সুর বদলেছেন ট্রাম্পও। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, কিম জং উনের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।
শীতকালীন অলিম্পিক্সের আসরে দুই কোরিয়ার প্রতিযোগীরা অভিন্ন পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণ করতে পারেন বলে যে কথা শোনা যাচ্ছে, সে বিষয়ে সরাসরি প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র কাটিনা অ্যাডামস। কিন্তু তিনি বলেছেন, ‘‘কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করে তোলার লক্ষ্যে চাপ বহাল রাখার প্রয়োজনীয়তা এবং উত্তর কোরিয়ার মোকাবিলা ঐক্যবদ্ধ ভাবে করার বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে আমরা নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy