প্রতীকী ছবি।
মাত্র ২২ বছর বয়সে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন টোকিয়োর এরিকো কোবায়াশি। পরেও একাধিক বার সে চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি। তাঁর সে সময়ের মানসিক লড়াই নিয়ে লেখা একটি বইয়ে কোবায়াশি জানিয়েছেন, ‘‘যা বেতন পেতাম, তা দিয়ে বাড়ি ভাড়া তো দূর, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের খরচও চালাতে পারছিলাম না। খুবই গরিব ছিলাম।’’ বর্তমানে ৪৩ বছর বয়সি এই মহিলা এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় চাকরি করছেন। তবে করোনা পরিস্থিতি ফের যেন সেই ‘দারিদ্রে ফিরে যাওয়ার’ ভয় দেখাচ্ছে তাঁকে। বাড়াচ্ছে অবসাদ। তাঁর কথায়, ‘‘ইতিমধ্যেই আমার বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেকটাই। সুড়ঙ্গের শেষ কোথায়? বুঝতে পারছি না।’’
অতিমারি পরিস্থিতি বাড়াচ্ছে মানসিক অবসাদ। যার জেরে বাড়ছে আত্মহননের প্রবণতাও। জাপানের সরকারের প্রকাশিত তথ্য বলছে, গোটা বছরে করোনা আক্রান্ত হয়ে সে দেশে যত না মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছেন শুধুমাত্র অক্টোবর মাসেই। ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সির ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অক্টোবরে আত্মঘাতী হয়েছেন মোট ২১৫৩। সেখানে গত শুক্রবার পর্যন্ত দেশ জুড়ে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা ২০৮৭।
অন্যান্য দেশের চেয়ে সাধারণত আত্মহত্যার সংখ্যা জাপানে তুলনায় বেশিই। করোনা পরিস্থিতির জেরে যা এক ধাক্কায় আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি, পুরুষদের তুলনায় আত্মহত্যার পথ বেশি বেছে নিচ্ছেন মহিলারা। শুধু অক্টোবরেই মহিলাদের আত্মঘাতী হওয়ার হার ৮৩% বেড়ে গিয়েছে। পুরুষদের হার ২২%।
তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে আত্মঘাতীর হার বাড়ল কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, জাপানে হোটেল, খাবার সরবরাহ বা খুচরো শিল্পের মতো বিভাগে আংশিক সময়ের কর্মীরা বেশির ভাগই মহিলা। বিপুল ছাঁটাই হয়েছে সেই সেক্টরগুলিতে। কোবায়াশির মতে, ‘‘জাপানে মহিলাদের গুরুত্ব সব সময়ই কম। কঠিন পরিস্থিতি এলে দুর্বলদেরই সবচেয়ে আগে সরিয়ে দেওয়াই এখানকার রীতি।’’ তাঁর কিছু বান্ধবীরও চাকরি গিয়েছে। যা তাঁর মানসিক স্থিতির উপরেও প্রভাব ফেলেছে, স্বীকারোক্তি কোবায়াশির।
শুধু জাপানে নয়। পরিসংখ্যান না-মিললেও বিশ্ব জুড়েই কমবেশি একই পরিস্থিতি মহিলাদের। এমনটাই জানাচ্ছেন ২১ বছর বয়সি কোকি ওজ়োরা। মানসিক অবসাদগ্রস্তদের সাহায্য করতে একটি হটলাইন পরিষেবা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রটির কথায়, ‘‘পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে এ দিকে রোজগার নেই। থাবা বসিয়েছে অভাব। এটাই আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে বেশির ভাগকে।’’ জানালেন, দিনের মধ্যে কম করে ২০০টি ফোন আসে তাদের নম্বরে। যার মধ্যে অধিকাংশই মহিলাদের। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংস্থাটির ৬০০জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। তবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে এত মানুষ তাঁদের দ্বারস্থ হচ্ছেন তাতে সময়মতো সকলকে সাহায্য করে উঠতে পারবেন কি না, তা নিয়েই দেখা দিয়েছে আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy