হোয়াইট হাউসে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ করার পরই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বেড়েছিল সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের। ক্রমশ তিনি সে দেশের মুখ্য কূটনৈতিক দূত হয়ে উঠছেন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী পর্যায়ে এক দিকে ভারত যেমন আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানের ভূমিকাকে বিশ্বের সামনে আনতে সক্রিয়তা দেখিয়েছে, হাত গুটিয়ে বসে নেই ইসলমাবাদও। ভারতের উপর আবারও হামলার জন্য যে তাদের মদতে পুষ্ট জঙ্গিরা নেপালের পথ ব্যবহার করার কথা ভাবছে, তা প্রকাশ্যে এসেছে। পাশাপাশি আমেরিকা এবং চিনের কাছে নিজেদের দর বাড়ানোর কৌশলও রচনা করছে পাকিস্তান। এবং এই উদ্যোগের নেতৃত্বে মুনির বলে জানা যাচ্ছে।
শুধু ঘরেই নয়, বাইরেও দৌত্যে সক্রিয় সেনাপ্রধান। ২১ জুলাই তিনি যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কা সফরে। তার পরেই সর্বাধিক মুসলমান জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। উদ্দেশ্য, পাকিস্তানের সঙ্গে তিক্ত হয়ে ওঠা ইন্দোনেশিয়ার সম্পর্কের পুনরুদ্ধার। ভারতের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার সন্ত্রাসবিরোধীঅক্ষ যে ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে, সে দিকে কড়া নজর রয়েছে ইসলামাবাদের। মুনিরের সফরের লক্ষ্য, সেই অক্ষকে ভেঙে দেওয়া। সাউথ ব্লক মুনিরের আগামী সফরগুলির দিকে বিশেষনজর রাখছে।
সাম্প্রতিক অতীতে সন্ত্রাসবাদ এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্নে নয়াদিল্লির পাশে বারবার দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে জাকার্তাকে। ওআইসি-র বৈঠকে বিষয়টি অস্বস্তির কারণও হয়েছে পাকিস্তানের। ইন্দোনেশিয়া নিজেও সন্ত্রাসবাদের শিকার। জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংসের ক্ষেত্রে ভারতের মতোই পদক্ষেপ করেছে তারা নিজের দেশে। প্রসঙ্গত, মে মাসে ওআইসি-র একটি সম্মেলনে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান একটি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল। মিশর এবং বাহরিনের সমর্থনে ইন্দোনেশিয়া তা আটকে দেয়। যাতে ওআইসি-তে ভারত-বিরোধী প্রস্তাব পাকিস্তান আনতে না পারে, সে জন্য ভারত ধারাবাহিক ভাবে কথাবার্তা চালিয়ে গিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার কূটনৈতিক কর্তাদের সঙ্গে। সম্প্রতি ‘অপারেশন সিঁদুরে’র পরে ভারতের সংসদীয় প্রতিনিধিদল জাকার্তায় গিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সেরে ফিরেছে। ইন্দোনেশিয়ার নেতারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ওই প্রতিনিধিদলকে।
গত জানুয়ারিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠান সেরে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তো ভারত থেকে পাকিস্তানে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়েছিলেন। নিজেদের প্রাথমিক সফরসূচি বদলে বেশি সময় কাটিয়েছিলেন নয়াদিল্লিতে। পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাত বাড়ার সময় দু’জন আইএসআইএস অভিযুক্তকে (আবদুল্লা ফয়াজ় এবং তালহা খান) ভারতের হাতে তুলে দেয় ইন্দোনেশিয়ার সরকার।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)