আরব সাগরের বুকে নতুন বন্দর তৈরির জন্য আমেরিকাকে প্রস্তাব দিল পাকিস্তান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ফিনানশিয়াল টাইম্স’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের পরামর্শদাতারা এই মর্মে প্রস্তাব দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আধিকারিকদের। প্রস্তাব অনুযায়ী, বালোচিস্তান প্রদেশের সমুদ্র তীরবর্তী শহর পাসনি-তে বন্দর তৈরি করবেন মার্কিন বিনিয়োগকারীরা। ওই বন্দর পরিচালনাও করতে পারবেন তাঁরা।
পাসনি শহরটি আফগানিস্তান এবং ইরান সীমান্তের কাছে অবস্থিত। মাত্র ১৪২ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে চিন নিয়ন্ত্রিত গ্বদর বন্দর। সেটিও বালোচিস্তান প্রদেশেই অবস্থিত। পাকিস্তানের প্রস্তাব মেনে পাসনি শহরে আমেরিকা বন্দর তৈরি করলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথে মার্কিন আধিপত্য বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আমেরিকা এই প্রস্তাবে রাজি হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
‘ফিনানশিয়াল টাইম্স’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, ইসলামাবাদের তরফে মার্কিন আধিকারিকদের জানানো হয়েছে, নতুন বন্দরের মাধ্যমে পাকিস্তানের দুষ্প্রাপ্য খনিজ সহজেই জলপথ ধরে আমদানি করতে পারবে আমেরিকা। সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে এ-ও জানানো হয়েছে যে, ওই এলাকায় আমেরিকা কোনও সেনাঘাঁটি তৈরি করুক, তা চায় না পাকিস্তান। তবে খনিজসমৃদ্ধ বালোচিস্তান প্রদেশের সঙ্গে বন্দরটিকে রেলপথে জোড়ার জন্য মার্কিন উদ্যোগপতিরা অর্থ বিনিয়োগ করলে, তাতে আপত্তি নেই ইসলামাবাদের।
সেপ্টেম্বরের শেষে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার বৈঠকে যোগ দিতে আমেরিকায় গিয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন পাক সেনাপ্রধান মুনিরও। ওই বৈঠকেই এই প্রস্তাবের বিষয়ে একপ্রস্ত কথা হয় বলে জানানো হয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে। ওই বৈঠকেই কাঠের একটি বাক্স খুলে ট্রাম্পকে দুষ্প্রাপ্য খনিজের কিছু নমুনা দেখান মুনির। মনে করা হচ্ছে, ওই দুষ্প্রাপ্য খনিজ রফতানির প্রস্তাব দিয়েই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তপোক্ত করার কৌশল নিয়েছে পাকিস্তান। তবে প্রস্তাবের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আমেরিকা কিংবা পাকিস্তানের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই খনিজের জন্য চিনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু আমেরিকা এবং পশ্চিমের দেশগুলি দুষ্প্রাপ্য খনিজের জন্য চিন নির্ভরতা এড়াতে চাইছে। তবে পাকিস্তানে যে দুষ্প্রাপ্য খনিজের সুবিশাল ভান্ডার রয়েছে, এমন প্রমাণও মেলেনি। তা ছাড়া বিদ্রোহী বালোচরা বালোচিস্তানে আরও একটি দেশের (চিনের পর আমেরিকা) ‘আধিপত্য’ মেনে নেবে কি না, তা-ও এখনও স্পষ্ট নয়। এই আবহে আমেরিকাকে দেওয়া পাকিস্তানের প্রস্তাব ইসলামাবাদের সুনির্দিষ্ট এবং বৃহত্তর কৌশলের অংশ হিসাবেই মনে করছেন কেউ কেউ।