দুই সীমান্তে দুই পড়শি দেশকে নিয়ে চিন্তিত পাকিস্তান। আফগানিস্তান সীমান্তে তালিবানের সঙ্গে সংঘাতের পর আপাতত সংঘর্ষবিরতির পথে হেঁটেছে পাকিস্তান। কিন্তু আর এক পড়শি ভারতকে নিয়ে চিন্তিত ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সেই আশঙ্কার কথাই জানিয়েছেন সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ। তাঁর দাবি, তালিবানের মতো পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাতে জড়াতে পারে নয়াদিল্লি। সে কথা মাথায় রেখেই দ্বিমুখী যুদ্ধের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
পাক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, ভারত সীমান্তেও উত্তেজনা ছড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে কি না। প্রশ্নটি কার্যত লুফে নিয়ে আসিফ বলেন, “অবশ্যই। আপনি এই সম্ভাবনার কথা অস্বীকার করতে পারেন না। বরং এমনটা হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।” তার পরেই পাকিস্তানের ওই মন্ত্রী জানান, সীমান্তে ‘নোংরা খেলা খেলতে পারে’ ভারত। এক দিকে তালিবান, অন্য দিকে ভারত— দুই পড়শির মোকাবিলায় প্রস্তুত পাকিস্তানও, এমনই দাবি আসিফের।
আরও পড়ুন:
কয়েক দিন ধরে পাক-আফগান সীমান্তে সংঘর্ষ চলছে। বুধবার সাময়িক ভাবে ৪৮ ঘণ্টার সংঘর্ষবিরতি ঘোষিত হয়েছে। গত ৯ অক্টোবর আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বোমাবর্ষণ করা হয়। তার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে শনিবার পাল্টা সীমান্তে হামলা চালায় তালিবান বাহিনী। রাতভর পাক সেনার সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ চলে। তার পর দফায় দফায় সংঘর্ষ চলেছে। বুধবার দুপুরে আফগানিস্তানের কন্দহরে হামলা চালিয়েছে পাক যুদ্ধবিমান। পরে সংঘর্ষবিরতির কথা জানানো হয়েছে। কন্দহরে পাক হামলায় অন্তত ৫০ জন সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে তালিবান সূত্রের দাবি।
বৃহস্পতিবার পাক মন্ত্রী আসিফ দাবি করেছিলেন, ভারতের মদতে যুদ্ধ চালাচ্ছে কাবুল। সংঘর্ষবিরতি ৪৮ ঘণ্টাও স্থায়ী হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহপ্রকাশ করেন তিনি। বলেন, ‘‘সংঘর্ষবিরতি আদৌ বজায় থাকবে কি না সন্দেহ আছে। এই সিদ্ধান্ত তো দিল্লি থেকে নেওয়া হচ্ছে।’’ বৃহস্পতিবার বিদেশ মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে পাক মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়েছিল বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে আশ্রয় দেয়, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দেয়। প্রতিবেশীদের দোষারোপ করা ওদের পুরনো স্বভাব।’’
পাক-আফগান যুদ্ধে কার্যত আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ায় ভারত। জয়সওয়াল বলেন, ‘‘আফগানিস্তান নিজেদের মাটিতে সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তাতে পাকিস্তান ক্ষুব্ধ। আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল।’’ উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের মন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি সম্প্রতি ভারতে এসেছিলেন। তাঁর সফরের মাঝেই আফগানিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে পাকিস্তান। পাকিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী ‘তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান’ বা টিটিপি এখনও সক্রিয়। ইসলামাবাদের অভিযোগ, এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে মদত দেয় ভারত। এই দাবি প্রথম দিন থেকে নাকচ করে এসেছে নয়াদিল্লি।