সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতের প্রতিবাদে আইনি পদক্ষেপ করতে চলেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের এক মন্ত্রী সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে যাদের বড় ভূমিকা ছিল, সেই বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে ভারতের বিরুদ্ধে নালিশ ঠুকতে চলেছেন তারা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত এবং আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভেবেছে ইসলামাবাদ।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছে ভারত সরকার। ১৯৬০ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, আপাতত সাময়িক ভাবে তা স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের এই পদক্ষেপকে ভিয়েনা চুক্তির বিধিভঙ্গ হিসাবে দাবি করেছে ইসলামাবাদ।
সোমবার রয়টার্সকে পাকিস্তানের আইন এবং বিচার প্রতিমন্ত্রী আকিল মালিক জানান, সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে তিনটি আইনি পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “আইনি পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে।” খুব শীঘ্রই আইনি পদক্ষেপ করা হবে বলেও জানিয়েছেন পাক মন্ত্রী। ভারতের তরফে অবশ্য এখনও পর্যন্ত পাল্টা কিছু বলা হয়নি।
আরও পড়ুন:
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতায় টানা ন’বছর আলোচনার পরে ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সই হয়েছিল ভারত-পাক সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও তৎকালীন পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আয়ুব খান চুক্তি করেছিলেন। বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সই হওয়া ওই দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, সিন্ধু এবং তার দুই উপনদী, বিতস্তা (ঝিলম) ও চন্দ্রভাগার (চেনাব) জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ও কর্তৃত্ব থাকবে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তিন উপনদী— বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ়) এবং ইরাবতী (রাভি)-র জল। সামগ্রিক ভাবে সিন্ধু এবং তার উপনদীগুলির মোট জলের উপর পাকিস্তানের অধিকার প্রায় ৮০ শতাংশ! ভারতের মাত্র ২০ শতাংশের সামান্য বেশি!
চুক্তির শর্ত বলছে, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে ওই জল ব্যবহার করলেও কোনও অবস্থাতেই জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না। ভারত চুক্তি স্থগিত রাখায় পাকিস্তানের পঞ্জাব এবং সিন্ধু প্রদেশে জলসেচ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যার প্রত্যক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে। সে ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত পাকিস্তানের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হতে পারে। কারণ, সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জলের উপরেই পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ কৃষি নির্ভরশীল!