নিজের দেশে তৈরি অ্যান্টি-মিসাইলের সফল উৎক্ষেপণ করেছে ভারত। ঘটনাটা ১৫ মে-র। ওড়িশা উপকূল থেকে ওই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে সে দিন। ভারতর যে এখন স্বয়ংক্রিয় ভাবেই ক্ষেপণাস্ত্র হানা প্রতিরোধ করতে সক্ষম, তা ভারতের এই ব্যালিস্টিক মিসাইল ইন্টারসেপ্টর প্রমাণ করেছে।
স্বাভাবিক ভাবেই ডিআরডিও উচ্ছ্বসিত, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক উচ্ছ্বসিত, সাধারণ ভারতবাসীও উচ্ছ্বসিত। ভারতের এই উচ্ছ্বাস কিন্তু উদ্বেগ তৈরি করেছে পাকিস্তানে।
অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেম পাকিস্তান এখনও তৈরি করতে পারেনি। সেই কারণেই পাকিস্তানের সাংসদদের অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভারতের এই অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেম দু’দেশের মধ্যে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করেছে বলে তাঁদের মত। পাকিস্তানের সরকারের তরফেও সেই মন্তব্যই করা হয়েছে। ভারত, পাকিস্তান দু’দেশের হাতেই পরমাণু বোমা রয়েছে। ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র যত দূরে আঘাত হানতে পারে, পাক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা তত নয়। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ শহরই পাক ক্ষেপণাস্ত্রগুলির আওতায় রয়েছে। এই সব কারণে পাকিস্তান মনে করত, ভারতের সঙ্গে সামরিক শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ভারতের নতুন অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইলের সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ পরিস্থিতি বেশ খানিকটা বদলে দিয়েছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, দুই বিবদমান পক্ষের এক জনের হাতে অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল থাকা এবং অন্য জনের হাতে না থাকার তাৎপর্য অবশ্যই সুদূরপ্রসারী। দু’পক্ষের হাতেই ক্ষেপণাস্ত্র থাকার অর্থ হল, সঙ্ঘাতের পরিস্থিতিতে দু’পক্ষই পরস্পরের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারবে। কিন্তু সেই ক্ষেপণাস্ত্রকে রোখার ব্যবস্থা যদি শুধু এক পক্ষের হাতে থাকে, তাহলে শক্তির ভারসাম্যে অভাব হয়ে যায়। এর অর্থ হল, এক পক্ষের অস্ত্র অন্যের ভূখণ্ডে আঘাত হানতে পারবে। কিন্তু অন্য পক্ষের অস্ত্র লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগেই আটকে যাবে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, তেমন কোনও পরিস্থিতির কথা কল্পনা করেই পাকিস্তানের সাংসদদের একাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা সরতাজ আজিজকে বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ কাটানোর চেষ্টা করতে হয়েছে। কিন্তু তাতেও আতঙ্ক যায়নি, কারণ আজিজের নিজের বিবৃতিতেও স্পষ্ট যে পাকিস্তান উদ্বেগে রয়েছে।
গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ৭ জুন, ২০১৬ পাকিস্তানের সেনেট বৈঠকে ভারতের অ্যান্টি-মিসাইল সিস্টেমের সাফল্য নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। পাক মিডিয়াতেই সেনেটের সেই আলোচনার খবর প্রকাশিত হয়েছে। দেখে নেওয়া যাক পাকিস্তানের সাংসদরা ঠিক কী বলেছেন সে দিনের আলোচনায়:
জাভেদ আব্বাসি, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ): ‘‘১৯৯৮ সালে ভারত পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানোর পর দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এখনও সেই একই অবস্থা। আমি জানি না আমাদের সেনাবাহিনী এর কী জবাব দিয়েছে। আমার পরামর্শ হল, দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের উচিত ভারতের এই অ্যান্টি-মিসাইল ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং সেই অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া।’’
মুশাহিদ হুসেন সৈয়দ, পাকিস্তান মুসলিম লিগ (কায়দে আজম): ‘‘ভারতের এই অ্যান্টি-মিসাইল পরীক্ষা পাকিস্তানের বিপদ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা আমাদের কূটনৈতিক ব্যর্থতা যে ভারত আমাদের সব দিক থেকে ঘিরে ফেলছে। আফগানিস্তান, ইরানের মতো প্রতিবেশীরাও ভারতের সঙ্গে।’’
ফতাউল্লাহ বাবর, পাকিস্তান পিপলস পার্টি: ‘‘এটা কি সত্য নয় যে আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি কাঠামোর বাইরে থাকা বিভিন্ন সংগঠনকে (সন্ত্রাসবাদী সংগঠন) নিরাপত্তা দিয়েছি? বছরের পর বছর ধরে এই পথে হেঁটে আমরা নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছি।’’
আরও পড়ুন:
প্রিডেটর কিনছে ভারত, গোপন ঘাঁটিতেও আর নিরাপদ নয় জঙ্গিরা
সেনেটরদের মধ্যে এই উদ্বেগের ছায়া কাটাতে সরকার পক্ষের হয়ে বিবৃতি দেন পাক প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত উপদেষ্টা সরতাজ আজিজ। কী বলেছেন আজিজ?
সরতাজ আজিজ, পাক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা: ‘‘ভারত যে ভাবে ব্যাপক হারে পরমাণু অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে তা গোটা ভারত মহাসগারীয় অঞ্চলকে বিপন্ন করে তুলেছে। অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেম তৈরি করে ভারত হয়তো ভাবছে তারা খুব সুরক্ষিত। কিন্তু সুরক্ষার এই ভিত্তিহীন বোধ তাদের অপ্রত্যাশিত জটিলতার দিকে ঠেলে দেবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশীদের সঙ্গে যে শান্তিপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বার বার বলেন, ভারতের এই নীতি তার ঘোর পরিপন্থী। ভারত যে অ্যান্টি-মিসাইল ব্যবস্থা তৈরি করেছে, তাতে পাকিস্তান গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন এবং নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে পাকিস্তান সব রকমের ব্যবস্থাই নেবে।’’
সরকারের উপদেষ্টা হলেও সরতাজ আজিজ পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছের লোক হিসেবেই বেশি পরিচিত। তাঁর এই মন্তব্যে স্পষ্ট, শুধু সেনেটররা নন, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ভারতের অ্যান্টি-মিসাইল ব্যবস্থার সাফল্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy