Advertisement
E-Paper

গুলিতে ঝাঁঝরা পাক মুক্তমনা

বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে খুন হয়েছেন একের পর এক মুক্তমনা। এঁদের মধ্যে কেউ ব্লগার, কেউ অধ্যাপক, কেউ আবার পত্রিকার সম্পাদক। এ বার পাকিস্তানে খুন হলেন এক মুক্তমনা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৬ ০৩:১৮
খুররম জাকি

খুররম জাকি

বাংলাদেশে গত কয়েক মাসে খুন হয়েছেন একের পর এক মুক্তমনা। এঁদের মধ্যে কেউ ব্লগার, কেউ অধ্যাপক, কেউ আবার পত্রিকার সম্পাদক। এ বার পাকিস্তানে খুন হলেন এক মুক্তমনা।

খুররম জাকি। পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী। প্রাক্তন এই সাংবাদিক গোটা দেশে পরিচিত এবং জনপ্রিয় মুখ। কট্টর ধর্মীয় নীতির বিরুদ্ধে বরাবর মুখ খুলেছেন, ব্লগেও লিখতেন তিনি। ফেসবুকে ‘লেট আস বিল্ড পাকিস্তান’ (এলইউবিপি) নামে একটি পেজও খুলেছিলেন খুররম। গত কাল রাতে উত্তর করাচির সেক্টর ১১-জি-র একটি রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়েছিলেন বছর চল্লিশের খুররম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাও খালিদ নামে এক সাংবাদিক। দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারা গিয়েছেন তিনিও। রেস্তোরাঁটির চার পাশ খোলা। সেখানেই দু’টি মোটরবাইকে চড়ে জনা চারেক অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী আসে। খুররমকে নিশানা করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় তারা। গুলিবৃষ্টির মধ্যে পড়ে মারাত্মক জখম হন খুররমের সঙ্গী রাও খালিদ। আহত হয়েছেন আসলাম নামে আরও এক জন। ঘটনার সময় ওই রেস্তোরাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। এই ঘটনার পর পরই খুররমদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাতের দিকে খুররমকে অন্য হাসপাতালে সরানো হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। বাঁচানো যায়নি খালিদকেও।

পাক সংবাদমাধ্যমের একটি সূত্রের দাবি, তালিবানের হাকিমুল্লাহ মেহসুদের শাখা সংগঠন এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। লাল মসজিদের মৌলবি মৌলনা আবদুল আজিজের সমালোচনা করাতেই খুররমকে সরতে হল বলে দাবি করেছে তারা। তবে এলইউবিপি-র প্রধান সম্পাদক আব্বাস তাজ জামাত-এ-ইসলামি পাকিস্তানের দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, এক বছর ধরেই প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছিলেন খুররম। জামাত নেতা শামসুদ্দিন আমজাদ দীর্ঘদিন ধরে খুররমের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা উস্কানিমূলক কথা বলে আসছেন বলেও দাবি করেছেন তাজ। জামাতের সঙ্গেই ‘সিপাহ-এ-সাহবা পাকিস্তান’- নামে অন্য একটি উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের সদস্যরাও খুররমের বিরুদ্ধে কথা বলত বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে করাচির পুলিশ এখনই এ নিয়ে বিশদে মুখ খোলেনি। তারা শুধু জানিয়েছে, যেখানে কাল খুররমদের উপর আক্রমণ হয়, সেখানে ফরেন্সিক দল গিয়ে তদন্ত সেরেছে। নাইন এমএম বোর পিস্তল থেকেই যে কাল গুলি চলেছিল সে বিষয়েও একপ্রকার নিশ্চিত পুলিশ। এসএসপি আরিব মেহর জানাচ্ছেন, এই ধরনের অস্ত্র দিয়ে আগের হামলাগুলো হয়নি। এর আগেও কট্টর মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার দায়ে খুন হতে হয়েছে কয়েক জন পাকিস্তানি মুক্তমনাকে। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, খুররমকে খুনের ক্ষেত্রে যে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, তা নতুন ধরনের।

খুররমের মৃত্যুর পরে অবশ্য বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছে করাচি। আজ খুররমের শেষ যাত্রায় সামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। করাচির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনেও তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। টুইটারে হ্যাশ ট্যাগ দিয়ে ‘জাস্টিস ফর পিস অ্যাক্টিভিস্ট টু কনডেম দ্য কিলিং’ নামে প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। খুররমের স্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমার গোটা পরিবার খুনের হুমকি পেত। আমার স্বামীকে এ ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হল।’’ তাঁর স্বামীর খুনিরা যাতে শাস্তি পায়, তার আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। তবে খুররমকে খুন করে তাঁর পরিবারকে যে দমিয়ে রাখা যাবে না, সেই বার্তা আজ দিয়েছেন খোদ খুররম কন্যা। খুনিদের উদ্দেশে সেই কিশোরী বলেছেন, ‘‘আমার বাবাকে এ ভাবে খুন করে শহিদের মর্যাদা দিয়েছে ওরা। এই রকম এক জন শহিদের মেয়ে হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।’’

Khurram Zaki pakistan activist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy