Advertisement
E-Paper

৭ দিনই বাঁচুক, শিশুর অঙ্গদানে সায় মা-বাবার

গর্ভাবস্থার ১৮ সপ্তাহে জেনেছিলেন দুঃসংবাদটি। যে সন্তানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাঁরা, জন্মের পরে সাকুল্যে আধ ঘণ্টা বাঁচবে সে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৬
মেয়ের সঙ্গে ক্রিস্টা ডেভিস

মেয়ের সঙ্গে ক্রিস্টা ডেভিস

গর্ভাবস্থার ১৮ সপ্তাহে জেনেছিলেন দুঃসংবাদটি। যে সন্তানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তাঁরা, জন্মের পরে সাকুল্যে আধ ঘণ্টা বাঁচবে সে। টেনেসির ক্রিস্টা ডেভিস ও তাঁর প্রেমিক ডেরেক লভেটকে চিকিৎসকেরা জানান, বিরল রোগে আক্রান্ত ক্রিস্টার গর্ভস্থ সন্তান। যে কারণে তার মস্তিষ্ক ও করোটির কিছুটা অংশ তৈরি হবে না কখনওই। সামনে দু’টি পথ। সময়ের আগেই শিশুটির প্রসব করানো। নয়তো, শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করে জন্মের পরে তার অঙ্গদান করা। দ্বিতীয় পথটাই বেছে নেন হবু বাবা-মা।

ক্রিস্টা বলেছেন, ‘‘চিকিৎসকেরা বলেই দিয়েছিলেন, নাড়ি কাটার পরে ও এক ঘণ্টাও বাঁচবে না। আমরা ঠিক করি, যদি মেয়েকে বাড়ি না-ও নিয়ে যেতে পারি, ওকে পৃথিবীতে আনবই। মা হিসেবে খুব কঠিন ছিল সেই সিদ্ধান্ত।’’ বড়দিনের সময়ে জন্মায় রায়েলি। বাঁচবে না, এমনটা ধরে নিয়েই নাড়ি কাটার আগে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু সব আশঙ্কা উড়িয়ে, বাবা-মা’কে অবাক করে জন্মের পরে একাই শ্বাস নিতে থাকে খুদে। ছ’ঘণ্টা বাদে প্রথম বার চিনি-জল খায়। পরের দিন থেকে কৌটোর দুধ। মায়ের কথায়, ‘‘শারীরিক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ও লড়ে গিয়েছে। আর আমরা ওর সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটানোর সুযোগ পেয়েছি। এটাই অসাধারণ অভিজ্ঞতা।’’ বাবা ডেরেকের কথায়, ‘‘সব সময়ে ভেবেছি, পরে কাঁদার অনেক সময় পাব। ও যতক্ষণ রয়েছে ওর সঙ্গে ভাল করে সময় কাটাব।’’ শিশুবিভাগ বা নিকু-র বদলে ওই সাত দিন তার বাবা-মা’র সঙ্গেই ছিল খুদে রায়েলি। ‘‘ওই সময়টা ও শুধু হেসে গিয়েছে। এত মিষ্টি একটা বাচ্চা’’, ক্রিস্টার মনে টাটকা সেই স্মৃতি।

জন্মের পরে এই ধরনের শিশুর বাঁচার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। ফলে অঙ্গদানের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুখ উপরের দিকে করে জন্মানোয় বেঁচে যায় রায়েলি। বাকি শিশুদের মতো মুখ নীচের দিকে থাকলে আশা ছিল না। তবে মাত্র এক সপ্তাহ। নতুন বছরে পৃথিবী ছাড়ে রায়েলি। তার আগে পর্যন্ত মেয়েকে একদণ্ডও কাছছাড়া করেননি বাবা-মা। ক্রিস্টার বর্ণনায়, ‘‘সে অনুভূতি ভোলার নয়। ওর দিকে তাকিয়ে আমি ভেবেছি, কোনও দিনও কাউকে এতটা ভালবাসিনি। সব সময়ে ভাবতাম, একটা সেকেন্ডও যাতে নষ্ট না হয়। যখন ঘুমোতাম ও আমার বুকের উপরে ঘুমোতো।’’

আরও পডু়ন: সুইম স্যুটে মোনালিসা, ফের ভাইরাল বাঙালি নায়িকার ছবি

ক্রমশ রায়েলির রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছিল। ‘‘তখনও ও ছিল হাসিখুশি। কেবল শেষ দিন কেঁদেছিল। ও যে কাঁদতে পারে ওই দিনই জানলাম’’, বলেছেন ক্রিস্টা। রায়েলি যখন মারা যায়, তখনও তাকে আঁকড়ে ছিলেন মা। শিশুটির হৃৎপিন্ডের দু’টি ভাল্ভ অন্য দুই শিশুকে দেওয়া হয়। তার ফুসফুস গবেষণায় দান করা হয়।

রায়েলির জন্মের আগে থেকে তার বাবা-মায়ের যাত্রা ক্যামেরাবন্দি করেন এক চিত্রগ্রাহক। জন্ম ও ছোট্ট জীবন, সবটাই ধরা তাঁর ক্যামেরায়। সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন তিনি। এক ঘণ্টার মধ্যে ১১ হাজার লাইক। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রিস্টা জানান, যে মায়েদের তাঁর মতোই অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাঁদের সাহায্য করতে চান তিনি। অঙ্গদান নিয়ে সচেতনতাও বাড়াতে চান।

Organ Donation Baby Cleveland
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy