Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্র আবাসে হানা, ১১ হত পেশোয়ারে

পেশোয়ারের ইউনিভার্সিটি রোডে ওই কৃষি কলেজে আজ সকালে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। আহত কমপক্ষে ৩০ জন।

জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।

জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের।

সংবাদ সংস্থা
পেশোয়ার শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৩০
Share: Save:

ছুটির দিনের সকাল। তখনও ভাল করে ঘুমই ভাঙেনি পেশোয়ারের ‘ডিরেক্টরেট অব এগ্রিকালচার এক্সটেনশন’-এর ছাত্র আবাসের। আটটা নাগাদ মূল ফটকের সামনে রিকশা থেমে নামে বোরখা পরা পাঁচ জন। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তারক্ষী কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা তাঁর দিকে ছুটে আসে গুলি। তাঁকে খতম করেই হস্টেল চত্বরে ঢুকে পড়ে পাঁচ জনের ওই দলটা। বোরখার ভিতরে বাঁধা আত্মঘাতী জ্যাকেট। হস্টেলে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে তারা।

পেশোয়ারের ইউনিভার্সিটি রোডে ওই কৃষি কলেজে আজ সকালে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। আহত কমপক্ষে ৩০ জন। নিহতদের তালিকায় ওই কলেজের ছাত্ররা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছেন সেনা আধিকারিক ও হস্টেল কর্মীও। ঘটনার খবর পেয়েই হস্টেলে ছুটে যায় সেনা ও পুলিশ। বন্ধ করে দেওয়া হয় আশপাশের সব ক’টি রাস্তার যান চলাচল। এক ঘণ্টা চলে গুলির লড়াই। দুপুরের দিকে সব জঙ্গিকেই মেরে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করে পাক সেনা। তবে জঙ্গিদের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। সেনার তরফে বিবৃতিতে বলা হয়ছে, তিন জন জঙ্গির দেহ উদ্ধার হয়েছে। অন্য দিকে, পাক টিভি চ্যানেলের কাছে এক পুলিশ কর্তা দাবি করেছেন, মোট পাঁচ জন জঙ্গি ওই ছাত্র আবাসে ঢুকেছিল।

আরও পড়ুন: ২০৩০-এ এডস মুক্ত হবে বিশ্ব

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে জঙ্গিদের আত্মঘাতী জ্যাকেট, ২টি কালাশনিকভ, পিস্তল এবং প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক। পরে দূরে এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে সেগুলিকে নষ্ট করে ফেলে সেনা। খাইবার পাখতুনখোয়া পুলিশের আইজি সালাউদ্দিন খান মেহসুদ জানান, যে পরিমাণ বিস্ফোরক আর অস্ত্রশস্ত্র জঙ্গিদের কাছে ছিল, তা থেকেই বোঝা যায়, অনেক বড় হামলার ছক ছিল তাদের। কিন্তু এই সপ্তাহান্তে বড় ছুটি থাকায় অধিকাংশ ছাত্রই বাড়ি চলে গিয়েছিলেন বলে হতাহতের সংখ্যা কম বলে দাবি করেছেন ওই পুলিশ কর্তা। একই কথা শোনা গিয়েছে ওই হস্টেলের ছাত্রদের মুখেও। আরিফ খান নামে এক ছাত্র জানালেন, হস্টেলে মোট ১২০ জন ছাত্র থাকেন। লম্বা ছুটির জন্য অনেকেই এখন বাড়িতে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ঘুমোচ্ছিলাম। আচমকা গুলি শব্দে ঘুম ভাঙে। নিজেদের বাঁচাতে পালাতে যাই। দুই বন্ধু আহত হয় ওদের গুলিতে। আমরা কোনও মতে ওদের নিয়ে হস্টেল চত্বর ছেড়ে পালাই।’’ সেনার তরফে জানানো হয়েছে, সেনা-পুলিশ অভিযান চলাকালীন হস্টেল থেকে আট জন ছাত্রকে উদ্ধার করা হয়। হামলায় আহতদের ভর্তি করা হয়েছে ওই হস্টেলের পাশেই ‘খাইবার টিচিং হসপিটাল’-এ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আহতদের মধ্যে ন’জন ছাত্র, দুই সেনা অফিসার আর এক সাংবাদিক রয়েছেন।

আজকের হামলার সঙ্গে আফগানিস্তানের তালিবান গোষ্ঠীর হাত রয়েছে বলে দাবি করেছে পাক পুলিশ। পাক সেনারও দাবি, হামলা চলাকালীন আফগানিস্তানে একাধিক বার ফোনে নিজেদের সঙ্গীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল জঙ্গিরা। যদিও তালিবান নিজে থেকে বিবৃতি দিয়ে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

এই প্রথম বার নয়। পাকিস্তানে স্কুল আর কলেজ পড়ুয়াদের এর আগেও নিশানা করেছে জঙ্গিরা। বছর তিনেক আগে, এই ডিসেম্বরেই পেশোয়ারের সেনা স্কুলে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ১৩২ জন স্কুল পড়ুয়ার। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে চারসাড্ডার বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২১ জনের। যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন ছাত্রছাত্রী।

গত কয়েক সপ্তাহে জঙ্গি হামলার ঘটনা বে়ড়েছে পেশোয়ারে। গত শুক্রবার আত্মঘাতী জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় মহম্মদ আশরাফ নুর নামে এক পুলিশ কর্তার। একের পর এক হামলার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পাক সরকারের সন্ত্রাস দমন অভিযানের যৌক্তিকতা নিয়েও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Peshawar Terror Attack Deaths
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE