E-Paper

ঢাকায় কেন উড়ান প্রশিক্ষণ, প্রশ্ন সেনার ভূমিকায়

তথ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৫ ০৯:১২
বাংলাদেশের ঢাকায় স্কুলভবনে বায়ুসেনার বিমান ভেঙে পড়ার পর চলছে উদ্ধারকাজ।

বাংলাদেশের ঢাকায় স্কুলভবনে বায়ুসেনার বিমান ভেঙে পড়ার পর চলছে উদ্ধারকাজ। ছবি: সংগৃহীত।

ঢাকার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সেনাবাহিনীর বিমান ভেঙে পড়ার ঘটনায় মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, জনবহুল এলাকায় কেন উড়ানের প্রশিক্ষণ হচ্ছিল! মৃতের সংখ্যা নিয়েও প্রশাসন এবং সেনার তালিকায় ফারাক দেখা যাচ্ছে। তথ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসার জন্য আহতদের বিদেশে পাঠানোর এখনও কোনও পরিকল্পনা নেই বলে প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

উড়ান বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, আন্তর্জাতিক ভাবে গৃহীত নিয়ম অনুযায়ী কম জনসংখ্যা এবং খোলা জায়গায় এ রকম প্রশিক্ষণ হওয়া উচিত। তাঁদের মতে, এই দুর্ঘটনা এবং এত প্রাণহানি এড়ানো যেতে যদি যুদ্ধবিমান ওড়ার জন্য স্বতন্ত্র রানওয়ে থাকত, যা থাকত লোকালয় থেকে দূরে বড় মাঠ অথবা চর অঞ্চল অথবা অন্য জায়গায়। যেমন লালমনিরহাটের পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি যদি চালু করা সম্ভব হত। যুদ্ধবিমান চালানোর জন্য যে দীর্ঘ রানওয়ে দরকার, তা বর্তমানে চট্টগ্রাম ও সিলেটে আছে। বিমানবাহিনী চট্টগ্রাম রানওয়ে ব্যবহার করে, কিন্তু সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় সিলেটে অবস্থিত রানওয়েটি সুবিধাজনক নয়। ঢাকা একটি জনবহুল শহর, যেখানে ঘন ঘন উঁচু বাড়ি, স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন সদস্য কাজি ওয়াহেদুল বলছেন, “গত কয়েক বছর ধরে বলছি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরটা শহরের বাইরে নেওয়ার সময় এসেছে। এই বিমানবন্দর যখন ১৯৮১ সালে উদ্বোধন হল, তখনও ওই এলাকাগুলিতে সে ভাবে বসতি ছিল না। তার পরে যে ভাবে জনবসতি বেড়েছে ওই সব এলাকায়, এটা তো এখন উদ্বেগজনক অবস্থা।” অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বিমাবন্দরের কাছে বসতি এবং বহুতল গড়ে যখন উঠল, তখন সেনাবাহিনী কী করছিল? তারা আপত্তি জানায়নি কেন?

আজ বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করেন বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। দুর্ঘটনায় মৃত এবং আহতের সংখ্যা নিয়ে তারতম্য প্রকাশ্যে এসেছে। সেনাবাহিনীর তালিকা অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা ৩১ এবং আহত ১৬৫। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং প্রধান উপদেষ্টার দফতরের তালিকায় বলা হয়েছে, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬৯ জন। এই পরিস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আহত, মৃত ও নিখোঁজ শিক্ষার্থী ও অন্যদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করে ঠিকানা-সহ তালিকা প্রস্তুতের জন্য সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট দেবে।

ঢাকার হাসপাতালগুলিতে এখন কান্নার রোল। দগ্ধ শিশুদের পরিজন গভীর উদ্বেগ নিয়ে হাসপাতালগুলিতে ভিড় করছেন। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ৯৫ শতাংশ দগ্ধ শরীরের ভর্তি ছিল আবদুল্লা শামীম। তার দিদি ফারজানা বলছিলেন, না ফেরার দেশে চলে যাওয়া অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ভাই শামীমের কথা। বলছিলেন, ‘‘সাহস ছিল অদম্য। আগুনে ঝলসে যাওয়ার পরও হেঁটে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে। বলেছিল ‘আমাকে বাঁচান’। শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে, তবুও সে নিজে হেঁটে গেছে সাহায্য চাইতে।’’ শামীম শেষ বার দিদির কাছে একটু জল চেয়েছিল— ‘আপু, আমাকে একটু পানি দাও’। তার পরেই সে দিদিকে শেষ প্রশ্ন করেছিল, ‘আমার শরীর কি অনেক পুড়েছে, আপু’?

গত মঙ্গলবার রাতে ওই হাসপাতালের আইসিইউয়ে মারা গিয়েছে প্রথম শ্রেণির ছাত্র নাফি। সোমবার রাতে মারা গিয়েছে তারই দিদি, তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী নাজিয়া। তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। মৃত্যুশয্যায় বার বার ভাইয়ের খোঁজ করেছিল নাজিয়া।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dhaka

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy