রোমের বিমানবন্দরে শরণার্থীদের স্বাগত জানাচ্ছেন পোপ। ছবি: রয়টার্স।
নিরাপত্তা শুধু নয়। আবার মিলেছে ভালবাসার আশ্রয়! ওঁরা ১২ জন আজ আপ্লুত তাই।
বোমায় বিধ্বস্ত দামাস্কাস এবং আইএস জঙ্গিদের ঘাঁটি দেইর এল-জৌর থেকে প্রাণ হাতে করে কোনও মতে পালিয়ে এসেছিলেন ওঁরা। বহু পথ পেরিয়ে ঠাঁই জুটেছিল তুরস্কের উপকূল ঘেঁষা দ্বীপ লেসবস-এর শরণার্থী শিবিরে। কয়েক ঘণ্টার জন্য আজ এখানে এসেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। শরণার্থীদের বার্তা দিয়ে গিয়েছেন, ‘তোমরা একা নও।’ শুধু কথার কথা নয়, শিবির থেকে ৬টি শিশু-সহ তিনটি পরিবারের ওই ১২ জনকে আজই পোপের ব্যক্তিগত ভাড়া করা বিমানে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রোমে। পোপের আশ্রয়ে। আপ্লুত হওয়ারই কথা!
শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রশ্নে ইউরোপ জুড়ে এখন তীব্র বিতর্ক আর অনীহা। চলছে ঠেলাঠেলি, আর দায় এড়ানোর চেষ্টা। তারই মধ্যে পোপের এই ১২ জন মুসলিম শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়াটাকে গোটা ইউরোপের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা দিল বলেই মনে করা হচ্ছে।
শনিবার পাঁচ ঘণ্টার জন্য গ্রিসের এই ছোট্ট দ্বীপ লেসবস-এ এসেছিলেন পোপ। আপাতত এখানে শুধুই উদ্বাস্তুদের ভিড়। যে দিকেই চোখ যাবে ছড়ানো ছেটানো শরণার্থী শিবির। খাবার নেই, জল নেই, নেই মাথা গোঁজার ঠাঁই। তবু শরণার্থীর স্রোত কমছে না। যুদ্ধবিধ্বস্ত পশ্চিমের দেশগুলো থেকে প্রতি দিনই প্রায় হাজার হাজার শরণার্থী আসছে এই দ্বীপে। কয়েক ঘণ্টার সফরের মধ্যেই পোপ আজ ঘুরে দেখেন শিবিরগুলি। দেশছুট দিশাহারা মানুষগুলির কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। পোপ কী বললেন তাঁদের? বললেন, ‘‘আশা ছেড়ো না। তোমরা একা নও।’’ দেশে ফেরার আগে তার প্রমাণও দিলেন তিনি। শরণার্থীদের বারো জনকে বেছে নিয়ে আশ্বাস দিলেন আশ্রয়ের। পরে ভাটিকান সূত্রে জানানো হয়, এ দিনই ওই তিনটি পরিবারকে ইতালিতে নিয়ে আসা হয়েছে।
লেসবস-এর মোরিয়া শরণার্থী শিবিরে এই মুহূর্তে প্রায় ৩ হাজার মানুষের ভিড়। পোপকে দেখে শরণার্থীদের অনেকে নিজের নিজের দেশের নাম ধরে চিৎকার করতে থাকেন। ‘আফগানিস্তান’, ‘সিরিয়া’। কারও হাতে সিরিয়ার পতাকা। কেউ বা বিড়বিড় করছেন, ‘স্বাধীনতা, স্বাধীনতা।’ তাঁদের অনেকের সঙ্গেই হাত মেলালেন পোপ। এক মহিলা শরণার্থী জানালেন, স্বামী রয়েছেন জার্মানিতে। আর তিনি দুই ছেলেকে নিয়ে আটকে পড়েছেন এখানে। একটি ছোট্ট মেয়ে এগিয়ে এসে পোপের হাতে তুলে দিল নিজের আঁকা একটি ছবি। উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত পোপ। দুপুরে আট জন শরণার্থীর সঙ্গেই খাবার খান পোপ। আর যে সব শরণার্থী এসে পৌঁছতেই পারেননি, তাঁদের স্মরণে যান সমাধিস্থল ও সাগরতটেও।
এ দিন পোপের সঙ্গে দেখা করেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস। তিনি জানান, এ সময় পোপের এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি শরণার্থী সমস্যার সমাধানে তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুসারে, ইউরোপীয় দেশগুলি গ্রিসে আসতে থাকা শরণার্থীর স্রোতকে কিছুটা হলেও প্রতিহত করার চেষ্টা করবে বলে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই লেসবস থেকে বেশ কিছু শরণার্থীকে ইউরোপে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পোপের এ দিনের সফর ও আশ্রয়দান ইউরোপীয় ইউনিয়নের শরণার্থী নীতিরই স্পষ্ট সমালোচনা বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
পোপ অবশ্য এ সব কাটাছেঁড়ার মধ্যে যেতে চাননি। তাঁর কাছে এই সফর আবেগের। সফর শেষে টুইটে জানিয়েছেন, ‘‘শরণার্থীরা নিছক একটা সংখ্যা নয়। তাঁদেরও নিজস্ব পরিচয় আছে। নাম আছে। প্রত্যেকেরই নিজের নিজের একটা করে গল্প আছে।’’ পোপের বার্তা পেয়েও তাঁদের এই সব গল্প কি শুনবে ইউরোপ, কিংবা বিশ্বের অন্য সব দেশ? প্রশ্নটা থাকছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy