রাষ্ট্রপুঞ্জে মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: এএফপি।
এক জন এশিয়ার বৃহত্তম দেশের প্রেসিডেন্ট। অন্য জন বিশ্বের ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রের প্রধান।
যে দিন ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের সঙ্গে শীর্ষ সম্মেলনে বসলেন ওবামা, সে দিনই রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় বক্তৃতা দিলেন পোপ ফ্রান্সিস। মার্কিন কূটনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ দিনের প্রভাব বুঝতে এখন তৎপর গোটা বিশ্বের কূটনীতিকেরাই।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় রাষ্ট্রপ্রধানদের সংখ্যার হিসেবে ২০১৫ সালটি যে রেকর্ড গড়েছে, তা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তারা। তাঁদের মধ্যে পোপ ফ্রান্সিস ও শি চিনফিংয়ের দিকে বিশেষ নজর রেখেছে মার্কিন তথা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক শিবির।
প্রথা ভাঙার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই ব্যতিক্রমী পোপ হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সিস। আমেরিকায় আসার পথে কমিউনিস্ট দেশ কিউবায় গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর কিউবা ও মার্কিন সফর যে ওয়াশিংটন-হাভানা সম্পর্কের চিত্রনাট্যের অঙ্গ, তা কূটনীতিকদের কাছে স্পষ্ট। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় অবশ্য সেই কূটনীতি না ছুঁয়ে অন্য নানা বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন পোপ। বলেন, ‘নিয়ন্ত্রণহীন’ লোভের ফলে প্রকৃতি যে ভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থায়ী উন্নয়ন সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠক শুরু হওয়ার ঠিক আগে পোপের এই বার্তায় উজ্জীবিত পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরা। পরিবেশ, দারিদ্র দূরীকরণের পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে কার্যত যুদ্ধ পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান না হওয়ায় বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির তীব্র সমালোচনা শোনা গিয়েছে ফ্রান্সিসের মুখে। এমনকী, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানেও ‘সাম্য’ প্রয়োজন। যে বার্তাকে নিঃসন্দেহে স্বাগত জানাবে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হতে চাওয়া ভারত, ব্রাজিলের মতো দেশগুলি। এই প্রথম সদস্য নয় এমন পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে ভ্যাটিকানের পতাকাও উড়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জে।
কূটনীতিকদের মতে, ওয়াশিংটনের বিভিন্ন গোপন কূটনৈতিক অভিযানে সাহায্য করছেন ফ্রান্সিস। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, ইরানে বন্দি মার্কিনদের মুক্ত করতেও তাঁর গোপন সাহায্য চেয়েছে ওয়াশিংটন। তার বদলে যে আমেরিকাকে স্থায়ী উন্নয়ন বা পশ্চিম এশিয়ার সমস্যার মতো বিষয়গুলিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে তাই বুঝিয়েছেন ফ্রান্সিস। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ইরানের সঙ্গে ছ’টি দেশের পরমাণু চুক্তিকেও আজ স্বাগত জানিয়েছেন পোপ।
ঘটনাচক্রে যে দিন পরিবেশ নিয়ে সরব হলেন ফ্রান্সিস, সে দিনই চিনফিং-ওবামা বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় পরিবেশ। আর একমাত্র গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেই মার্কিন-চিনা সহযোগিতার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন ওয়াশিংটনের কূটনীতিকেরা। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আগ্রাসী মনোভাব, আমেরিকায় চিনা হ্যাকারদের হামলার মতো বিষয় নিয়ে কথা হলেও দু’দেশের যে মতের মিল হবে না, তা একান্ত আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন মার্কিন কর্তারা। তাই বৈঠকের আগেই ওবামা জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘সহযোগিতার পাশাপাশি আমাদের দু’দেশের মধ্যে মতভেদের বিষয়গুলিও মাথায় রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy