Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বিপ্লবের স্কোয়ারে চে-র সামনে পোপ

হাভানার ‘বিপ্লব প্রাঙ্গণে’ (রেভোলিউশনারি স্কোয়ার) কখনও যিশুখ্রিস্টের ছবি বা মূর্তি দেখার কথা মনে করতে পারছেন না কিউবার নাগরিকেরা। বরং সেখানে আছে দক্ষিণ আমেরিকায় কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা চে গেভারার বিশাল ছবি।

সামনে চে গেভারার ছবি। রবিবার হাভানায় বিপ্লবের স্কোয়ারে পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: এএফপি।

সামনে চে গেভারার ছবি। রবিবার হাভানায় বিপ্লবের স্কোয়ারে পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
হাভানা শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:১০
Share: Save:

হাভানার ‘বিপ্লব প্রাঙ্গণে’ (রেভোলিউশনারি স্কোয়ার) কখনও যিশুখ্রিস্টের ছবি বা মূর্তি দেখার কথা মনে করতে পারছেন না কিউবার নাগরিকেরা। বরং সেখানে আছে দক্ষিণ আমেরিকায় কমিউনিস্ট বিপ্লবের নেতা চে গেভারার বিশাল ছবি। আজ সেখানেই দেখা গেল যিশুখ্রিস্টের এক মূর্তি, একটি ছবিও। প্রাঙ্গণে তৈরি করা মঞ্চে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে নির্বাচিত প্রথম পোপ ফ্রান্সিস বললেন, ‘‘সবাইয়ের জন্য কাজ করতে হবে। আদর্শের নামে কাউকে বাদ দেওয়া চলবে না’’

এক সময়ে নাস্তিকতা ছিল ফিদেল কাস্ত্রোর কমিউনিস্ট রাষ্ট্রের সংবিধানের অন্যতম অংশ। বার্লিন প্রাচীরের পতনের পরে ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করে ছবিটা। ১৯৯৮ সালে পোপ দ্বিতীয় জন পলের কিউবা সফরের আগে বড়দিনের ছুটি দেওয়া শুরু করেন ফিদেল।

আদতে আর্জেন্তিনার মানুষ পোপ ফ্রান্সিস ব্যতিক্রমী পোপ হিসেবেই পরিচিত। মহিলাদের অধিকার, সমকামী আন্দোলন-সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর মত ক্যাথলিক চার্চের থেকে অনেকটাই ভিন্ন। তবে পূর্বসূরিদের মতো তিনি যে প্রয়োজনে কূটনীতির গোপন খেলাতেও অংশ নিতে পারেন, তা প্রমাণ হয়েছিল কিউবা-আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ফের চালু হওয়ার নেপথ্যকাহিনিতে।

কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, কিউবা ও আমেরিকার সম্পর্ক ফের স্বাভাবিক হওয়ার আগে গোপন আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল ভ্যাটিকান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট ও ফিদেলের ভাই রাউলকে চিঠি লিখেছিলেন স্বয়ং ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকানের হলে বার বার গোপন বৈঠক করেছেন ওয়াশিংটন ও হাভানার কূটনীতিকরা। তাঁদের মতে, ক্যাথলিক-প্রধান দক্ষিণ আমেরিকায় যে কমিউনিস্ট কিউবার শাসকেরাও পোপকে বেশি দিন উপেক্ষা করতে পারবেন না, তা বুঝতে পেরেছিল ওয়াশিংটন। সময় যে বদলাচ্ছে, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন খোদ রাউল কাস্ত্রো। মাস কয়েক আগে ভ্যাটিকানে পোপের সঙ্গে দেখা করার পরে রাউল এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, ‘‘আমি নিয়মিত পোপের বক্তৃতা পড়ি। তিনি যদি এ ধরনের বৈপ্লবিক কথা বলতেই থাকেন, তা হলে আমি চার্চে ফেরার কথা ভাবতে পারি।’’ সাংবাদিকরা হেসে উঠলে রাউল যোগ করেন, ‘‘না, না, ঠাট্টা নয়, আমি সত্যিই বলছি।’’

আজ কিউবায় পা রেখে পোপ ফ্রান্সিস সেই পরিবর্তনের ধারাই বজায় রেখেছেন। হাভানার রেভোলিউশনারি স্কোয়ারে তাঁর প্রার্থনাসভায় হাজার হাজার নাগরিকের সঙ্গে হাজির ছিলেন কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোও। যদিও কমিউনিস্ট রাউল এখনও ক্যাথলিক নন।

হাভানার ‘বিপ্লব প্রাঙ্গণ’। রবিবার রয়টার্সের ছবি।

রীতি মেনেই হাভানাতে নিজের বিশেষ বাহনে (পোপমবিল) চেপে জনতার মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন পোপ। আজ ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পোপকে বার্তা পাঠানোর সুযোগ পেয়েছিলেন কিউবার নাগরিকেরা। কিউবায় এখনও যে সুযোগ সব সময়ে পান না তাঁরা।

আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ফের শুরু হওয়ার পরেই রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে কিউবায়। কিন্তু তা নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি পোপ ফ্রান্সিস। কিউবার মানুষের প্রাণের ভাষা স্প্যানিশ শুধু জানিয়ে দিয়েছেন, খ্রিস্টানদের অনেক সময়েই নিজেকে ভুলে অন্যের জন্য কাজ করতে হয়। আদর্শের জন্য কাজ করা যায় না। মানুষের জন্য কাজ করতে হয়।

পোপের কথায়, ‘‘কিউবার মানুষ আনন্দ করতে, বন্ধুত্ব করতে ভালবাসেন। তাঁরা সৌন্দর্যের পূজারি। তবে অন্য সব জাতির মতোই তাঁদের মনেও ক্ষত রয়েছে।’’ কিউবায় হওয়া কলম্বিয়া সরকার ও সে দেশের জঙ্গিদের বৈঠক নিয়েও মুখ খুলেছেন ফ্রান্সিস। জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে এগোতে হবে।

কূটনীতিকদের মতে, সরাসরি না হলেও পরোক্ষে কিউবার কমিউনিস্ট শাসনতন্ত্রের এক সময়ের কট্টরপন্থার কথা বলেছেন পোপ। আবার এখন পরিবর্তিত অবস্থায় কিউবার মানুষকে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন।

পোপের কিউবা সফরের রাজনৈতিক দিকটি তাঁর সফরসূচি থেকেই স্পষ্ট বলে জানাচ্ছেন কূটনীতিকেরা। কারণ, সফরের সময়ে রাউল-সহ কিউবার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। দেখা করেছেন ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গেও। এর পরে তাঁর যাওয়ার কথা আমেরিকায়। সেখানে মার্কিন কংগ্রেস ও রাষ্ট্রপুঞ্জে বক্তৃতা দেবেন তিনি।

কূটনীতিকদের মতে, কিউবায় ক্যাথলিক চার্চকে এক ঘরে করে ফেলেছিলেন কমিউনিস্টরা। নিজেদের ধর্ম নিয়ে খুব বেশি উৎসাহ দেখানোর কথা ভাবতে পারতেন না সে দেশের মানুষ। সেই কিউবায় ক্যাথলিক চার্চকে ফের জনপ্রিয় করে তোলাই এখন পোপ ফ্রান্সিসের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE