মাসুদ আজহার।—ফাইল চিত্র।
নিজে থেকে পুলওয়ামা হামলার দায় নিয়েছে জইশ। তা সত্ত্বেও সংগঠনের চাঁই মাসুদ আজহারকে আড়াল করতে চাইছে চিন। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকায় তার অন্তর্ভুক্তিতে বাধা দিয়েছে। বারবার তাদের এমন আচরণে হতাশ হয়েছে বলে আগেই জানিয়েছে ভারত। অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনও। তবে মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করতে আর চিনের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয় পশ্চিমি কূটনৈতিক মহল। বরং বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা চায় তারা। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর নতুন করে মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রস্তাব দেয় আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। বাকি ১৪টি সদস্য দেশ তাতে সম্মতি দিলেও, বরাবরের মতো শেষ মুহূর্তে বাগড়া দেয় চিন। প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রস্তাবটি আটকে দেয় তারা। তাদের এই আচরণে চটেছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলও। সেই কূটনৈতিক সূত্রে বলা হয়েছে, সরাসরি প্রস্তাব আটকে দিলে হাজারটা প্রশ্ন উঠত। তাই প্রযুক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রস্তাব আটকে দিয়েছে চিন। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে এমনটাই করেছিল তারা। চাইলে ন’মাস পর্যন্ত প্রস্তাবটি আটকে রাখা যাবে। এতে হাতে কিছুটা সময়ও পাওয়া যাবে, আবার প্রস্তাবটি বাতিলও করে দেওয়া যাবে শেষমেশ।
এ বার আর চিনকে সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না বলে জানান ওই কূটনীতিবিদ। তাঁর কথায়, “বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রাকাশ্য আলোচনা সভা বসলে, প্রকাশ্যে ভোটদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, চিনের অভিসন্ধি বুঝতে আর কারও বাকি থাকবে না। তা সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে জবাবদিহি করতে হবে ওদের। বাকি সদস্য দেশগুলি যখন মাসুদের মতো জঙ্গিকে নিষিদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, একমাত্র তারাই কেন ওই জঙ্গিকে সমর্থন করছে, সাধারণ মানুষকে তার জবাব দিতেই হবে চিনকে।’’
আরও পড়ুন: বালাকোটের সময়েই মায়ানমারে ঢুকে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়ে এসেছিল ভারতীয় সেনা
আরও পড়ুন: জগদ্দলে অর্জুন অনুগামীর উপর হামলা, থানা ঘেরাও বিজেপির, জ্যোতিপ্রিয় বললেন, গুন্ডামি ছুটিয়ে দেব
মাসুদকে নিয়ে চিন অবস্থান না পাল্টালে, রাষ্ট্রপুঞ্জের বাকি স্থায়ী সদস্য দেশগুলি তাদের টপকে পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কূটনীতিক। ১৯৯৯ সালে ওসামা বিন লাদেন, তার সহযোগী এবং তালিবানদের নিষিদ্ধ করতে ১২৬৭ নং ধারায় সর্বসম্মতিক্রমে বিশেষ সিদ্ধান্ত নেয় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। যার আওতায়, ওসামা, আলকায়দা এবং তালিবান নেতা, তাদের সহযোগী এবং শাখা সংগঠনগুলিকে বিশ্বের সর্বত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। প্রয়োজনে চিনের ভেটো অগ্রাহ্য করে মাসুদের ক্ষেত্রেও সেই আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওই মার্কিন কূটনীতিবিদ।
তিনি বলেন, “দেশের মাটিতে কুখ্যাত জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছে পাকিস্তান। সেখানে বেড়ে উঠেছে একাধিক জঙ্গি সংগঠন। তাদের আড়াল করতে আগেও একাধিকবার চিনকে ঢাল করেছে পাকিস্তান। আলকায়দার সঙ্গে যোগ থাকায় মাসুদ আজহারের জইশ-ই-মহম্মদকে আগেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জে। অথচ সেই সংগঠনের নেতাকে নিষিদ্ধ করতেই কালঘাম ছুটে যাচ্ছে।’’ দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সন্ত্রাসদমনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চিন। তাই পাকিস্তান হোক বা অন্য কোনও দেশ, সন্ত্রাস নিয়ে কোনও দেশকেই এ ভাবে আড়াল করা তাদের উচিত নয় বলেও জানান তিনি।
(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy