E-Paper

পুজোয় ঘুরে ঘুরে কাটে ক’টা দিন

পুজোর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আয়োজনে আমাদের ছেলেমেয়েরাও সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়ে থাকে। ওদের জন্ম সুইডেনে আমরা সব সময়ে ওদের দেশীয় রীতি-রেওয়াজ পালনে উৎসাহিত দিই। এ বছর আমাদের প্রতিমা এসেছে কুমোরটুলি থেকে।

দেবযানী দে

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:৪৩
দুর্গাপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত স্টকহোম।

দুর্গাপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত স্টকহোম। —নিজস্ব চিত্র।

যতই প্রবাসে থাকি না কেন, দেশের টান তো কমে না। সেই টান থেকেই ভারত থেকে বহু দূরে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের দুর্গাপুজোর আয়োজন। ‘স্টকহোম পূজা কাউন্সিল’-এর এই পুজোর বিশেষত্ব হল যে, আমরা তিথি মেনে, পঞ্জিকা মিলিয়ে পুজোর দিনেই পূজো করি। বিদেশে সাধারণত সপ্তাহান্তে, অর্থাৎ শনি-রবিবার পুজো হয়ে থাকে। এ বছর যেমন কেউ কেউ পুজো করছেন আগামী সপ্তাহান্তে, অর্থাৎ, ২৭-২৮ সেপ্টেম্বর। আবার কোথাও কোথাও পুজো হচ্ছে পরের সপ্তাহান্তে, অর্থাৎ, ৪-৫ অক্টোবর। আমরাও এখানে আগে তাই করতাম। কিন্তু গত সাত বছর ধরে আমাদের সংস্থা পুজোর দিনেই পুজো করার উদ্যোগ নিয়েছে।

সেই মতো এ বছর আমরা পুজো করছি ২৯-৩০ সেপ্টেম্বর এবং ১-২ অক্টোবর, অর্থাৎ সপ্তমী থেকে বিজয়া দশমী। একদম দেশি প্রথায়, দেশের মতো রীতিনীতি, দেশের সময় আর দিনক্ষণ মেনেই পুজো হবে। হবে কুমারী পুজো ও কুস্মাণ্ডবলি, সন্ধিপুজো, যজ্ঞ এবং সবশেষে সিঁদুরখেলা। তা ছাড়া, আরতি, ধুনুচি নাচ— এ সব তো আছেই।

পুজোর বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও আয়োজনে আমাদের ছেলেমেয়েরাও সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়ে থাকে। ওদের জন্ম সুইডেনে আমরা সব সময়ে ওদের দেশীয় রীতি-রেওয়াজ পালনে উৎসাহিত দিই। এ বছর আমাদের প্রতিমা এসেছে কুমোরটুলি থেকে। তা ছাড়া, পুজোয় মঞ্চ সাজানোর জন্য ওড়িশার পিপলি গ্রাম থেকে অ্যাপ্লিকের সাজসজ্জা নিয়ে আসা হয়েছে। খাঁটি বাঙালিয়ানা বজায় রাখার জন্য পুজোয় কাঁসার বাসন ব্যবহার করা হয়।

—নিজস্ব চিত্র।

পুজোর সব ক’টা দিন আমরা সবাই সপরিবার নিরামিষ খেয়ে থাকি। আমাদের এক এক দিন এক এক রকম মেনু। সপ্তমী পুজোর দিন খিচুড়ি, লাবড়া, নানা রকম ভাজা ও আলু-ফুলকপির ডালনা। অষ্টমী ও নবমীতে থাকছে মুগডাল, ছোলার ডাল, সাদা ভাত, বিভিন্ন রকমের ভাজা, বাঁধাকপির তরকারি। আর বিজয়া দশমীর স্পেশাল ভোজ পোলাও আর পনির দিয়ে। এ ছাড়া, প্রতিদিন ঘরে বানানো পায়েস, চাটনি, রসগোল্লা, চমচম, পান্তুয়া, নাড়ু, মোয়া ইত্যাদি তো আছেই। পুজোর দু’দিন আগে থেকে আমরা মেয়েরা সবাই মিলে নাড়ু, মোয়া, সন্দেশ ও নানা রকমের মিষ্টি বানানো শুরু করি।

প্রতি বছর এই পুজোয় সুইডেনে ভারতের রাষ্ট্রদূত-সহ দূতাবাসের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিরা অংশ নিয়ে থাকেন। সুইডেনের অনেক অবাঙালিও আমাদের পুজো অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দেখতে আসেন। বহুকালের প্রবাসী উত্তর ভারতীয়েরা, যাঁদের ভারতে থাকাকালীন দুর্গাপুজো সে ভাবে দেখার সুযোগ হয়নি, তাঁরাও অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। আমাদের কাজে হাত লাগান এখানে বসবাসকারী মরিশাস ও মালয়েশিয়ার ভারতীয় বংশোদ্ভূতেরাও। আমাদের কমিটির এক বৌদি তো সুইডিশ বংশোদ্ভূত। তিনি কিন্তু আমাদের চাইতেও সুন্দর করে শাড়ি পড়তে পারেন!

স্টকহোমের দুর্গা প্রতিমা।

স্টকহোমের দুর্গা প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।

আমরা প্রতিবছর কালীপুজো ও সরস্বতীপুজোও করি। এ ছাড়া, আয়োজন করা হয় বিজয়া সম্মিলনী ও দীপাবলি উৎসবেরও। তাতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। পরিবেশিত হয় ভারতনাট্যম, কুচিপুড়ি, মোহিনীঅট্টম, ওড়িশি, কত্থক ইত্যাদি নৃত্যশিল্প। আর রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রনৃত্য তো অতি অবশ্য থাকবেই। প্রতিবছর ভারতীয় দূতাবাসের প্রধান সেই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ বছর আমরা সেই অনুষ্ঠান করছি১২ অক্টোবর।

স্টকহোমে আরও কয়েকটি পুজো হয়। তাদের মধ্যে ‘বঙ্গীয় সনাতন সমাজ স্টকহোম’ আর ‘বৈদিক সার্বজনীন পরিষদ’ অন্যতম। বঙ্গীয় সনাতন সমাজের পুজো শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ তে। তখন অবশ্য আমরা সবাই মিলে সেই একটি পুজোই করতাম। এর পর ধীরে ধীরে এ দেশে বাঙালির সংখ্যা বাড়তে লাগল,আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে লাগল পুজোর সংখ্যাও। তাই কেউ পুজোর দিনে পুজো করেন, কেউ ছুটির দিনে। আমরা একে-ওপরের পুজোতে অংশগ্রহণ করি সমান আগ্রহে। এখন ‘প্যান্ডেল হপিং’ করতেআমাদের আর কলকাতা যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Durga Puja 2025 Stockholm

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy