E-Paper

হ্যারির নিশানায় ব্রিটিশ সরকার, সংবাদমাধ্যমও

‘মিরর গ্রুপ অব নিউজ় পেপারস’ নামে একটি ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থার বিরুদ্ধে ফোনে আড়ি পাতা ও অনৈতিক ভাবে খবর প্রকাশের অভিযোগে মামলা করেছেন ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩ ০৬:৩৯
An image of Prince Harry

ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি। ছবি: রয়টার্স।

ব্রিটিশ রাজপরিবারের ঘোষিত নীতিই হল, দেশের রাজনীতি নিয়ে তাদের কোনও সদস্যই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেন না। তবে তিনি ব্রিটেনের প্রয়াত যুবরানি ডায়ানার ছোট পুত্র। রাজপরিবারের অনেক নীতিই আগে ভাঙতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ বারও রাজপরিবারের ইতিহাসে এই প্রথম আদালতে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তিনি। গত কাল লন্ডন হাই কোর্টে তাঁর প্রথম সেই সাক্ষ্যদানের দিনেই ঋষি সুনক সরকার ও দেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশের তীব্র সমালোচনা করলেন ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি। জানালেন, যে গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করে না, যে গণতন্ত্রে সংবাদমাধ্যম সরকারের খুব কাছের হয়ে ওঠে, সেই গণতন্ত্র আদতে ত্রুটিপূর্ণ।

‘মিরর গ্রুপ অব নিউজ় পেপারস’ নামে একটি ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থার বিরুদ্ধে ফোনে আড়ি পাতা ও অনৈতিক ভাবে খবর প্রকাশের অভিযোগে মামলা করেছেন ব্রিটেনের রাজকুমার হ্যারি। সেই মামলার সাক্ষ্য দিতেই আমেরিকা থেকে লন্ডন উড়ে এসেছেন তিনি। গত কাল সাক্ষ্যদানের প্রথম দিনে হ্যারি আরও বলেছেন, ‘‘সারা দুনিয়া এখন ব্রিটিশ সরকার আর সংবাদমাধ্যমকে একেবারে নিম্নস্থানে দেখে।’’ সাক্ষ্য দিতে গিয়ে হাই কোর্টের বিচারপতিকে হ্যারি আরও বলেছেন, তিনি মেনে নিয়েছেন যে, সংবাদমাধ্যমের যখন তখন যে কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করার অধিকার আছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ, যাঁরা আয়কর দেন, তাঁদের প্রতিও এই সংবাদমাধ্যমের কিছু দায়িত্ব থাকে। অথচ গত ১৫ থেকে ২০ বছরে দেখা গিয়েছে যে এ দেশের সংবাদ সংস্থাগুলি শুধুমাত্র নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য যা খুশি তা-ই করে গিয়েছে। হ্যারির আরও মন্তব্য, ‘‘সেলেব্রিটিদের নানা বিষয়ে দায়ী করে থাকে সংবাদমাধ্যম। অথচ তারা নিজেরা কোনও কিছুর দায় নিতে চায় না। তারা গোটা সমাজের জন্য নীতি তৈরি করে থাকে, অথচ তাদের জন্য নীতি তৈরি করবে কে? সরকারও এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস করে না। আর ব্রিটেনের জন্য এই পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক।’’

তবে একই সঙ্গে হ্যারি জানিয়েছেন, দেশের সব সাংবাদিককে তিনি একই পর্যায়ে ফেলেন না। বরং যাঁরা নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য বছরের পর বছর ধরে অনৈতিক ভাবে সাংবাদিকতা করে আসছেন, সৎ সাংবাদিকদের তিনি সেই সব অসৎ সাংবাদিকদের খুঁজে বার করার অনুরোধ করেছেন। হ্যারির যাবতীয় মন্তব্য নিয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট অবশ্য মুখ খোলেনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, এ নিয়ে কিছু বলার নেই।

আজ ছিল হ্যারির সাক্ষ্যদানের দ্বিতীয় দিন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, আজ ব্রিটিশ রাজকুমারকে গতকালের থেকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। হ্যারি আজ তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা চেলসি ডেভির সঙ্গে সম্পর্কের প্রসঙ্গ তুলেছেন। আদালতকে জানিয়েছেন, চেলসির গাড়িতে এক বার একটি ‘ট্র্যাকিং যন্ত্র’ আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। কোনও এক বেসরকারি গোয়েন্দা এই কাজটি করেছিলেন বলে দাবি হ্যারির। চেলসির সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে মিরর গ্রুপের ট্যাবলয়েড যে শিরোনামে খবরটি করেছিল, সেই প্রসঙ্গও তুলেছেন হ্যারি। জানিয়েছেন, সংবাদপত্রের এই ধরনের খবর তাঁকে মানসিক ভাবে আরও বিধ্বস্ত করে তুলেছিল। ২০০৯ সালে এক প্রয়াত টিভি তারকার সঙ্গে তাঁর ডিনারের কথা ওই ট্যাবলয়েডটি কী ভাবে জানল, সে প্রশ্নও আজ তুলেছেন হ্যারি। মিরর গ্রুপের আইনজীবীদের দাবি, রাজপরিবারের বিশ্বস্ত কোনও কর্মচারীই সংবাদ সংস্থাটিকে সেই খবর দিয়েছিলেন। তবে হ্যারির দাবি, তিনি কখন, কার সঙ্গে ডিনারে যাচ্ছেন, ঘুণাক্ষরেও রাজপরিবারের কোনও কর্মচারীর সে খবর জানার কথা নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Prince Harry Princess Diana Britain British Media

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy