Advertisement
E-Paper

বিতর্ক সঙ্গে নিয়েই বরিসের মন্ত্রিসভায় মোদী-ভক্ত প্রীতি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে এসেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রীতি পটেল। অপরাধের বিরুদ্ধে বরাবরই কড়া অবস্থান নেওয়ার জন্য পরিচিত ৪৭ বছরের নেত্রী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আমলে প্রীতিকে প্রবাসী ভারতীদের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠে নামানো হয়েছিল।

শ্রাবণী বসু

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০২:২৮
প্রীতি পটেল

প্রীতি পটেল

বহু-সংস্কৃতির ছাপ রেখে নতুন মন্ত্রিসভায় কাজ শুরু করলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যে মন্ত্রিসভায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে তিন জন ভারতীয় এবং আর এক পাক বংশোদ্ভূত রয়েছেন।

পাকিস্তানি অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান সাজিদ জাভিদ এখন ‘চ্যান্সেলর অব দি এক্সচেকার’ (্অর্থমন্ত্রী)-র পদে। সাজিদের বাবা লন্ডনে বাস চালাতেন। এ বার বরিসের ভবনের পাশেই ১১ ডাউনিং স্ট্রিট ঠিকানা হবে সাজিদের।

ইনফোসিস কর্তা নারায়ণমূর্তির জামাই ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনক এসেছেন প্রধান কোষাধ্যক্ষের পদে। তিনি কাজ করবেন সাজিদের অধীনে। ব্রেক্সিটপন্থী ঋষি (৩৮) ২০১৫ সালে ক্ষমতায় আসেন। ব্রিটেনে জন্মানো ঋষির বাবা ছিলেন জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবায়। আর মা ছিলেন ফার্মাসিস্ট। দু’জনকেই মানুষের জন্য কাজ করতে দেখে বড় হয়েছেন এই যুবক। অক্সফোর্ড ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ক্যালিফর্নিয়ায় তাঁর আলাপ নারায়ণমূর্তির কন্যা অক্ষতের সঙ্গে ও পরে বিয়ে।

আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত অলোক শর্মা। আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক উন্নয়নমন্ত্রীর দায়িত্বে তিনি। আগরায় জন্মের পরে পাঁচ বছর বয়সে ব্রিটেনে পাড়ি। ৫১ বছর বয়সি এই নেতা তেমন পরিচিত মুখ নন, তবে ভোটে বরিসকে সমর্থন করে এ বারের মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে এসেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রীতি পটেল। অপরাধের বিরুদ্ধে বরাবরই কড়া অবস্থান নেওয়ার জন্য পরিচিত ৪৭ বছরের নেত্রী। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের আমলে প্রীতিকে প্রবাসী ভারতীদের প্রতিনিধি হিসেবে মাঠে নামানো হয়েছিল। ভারতীয়-ব্রিটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির দায়িত্ব ছিল তাঁরই কাঁধে। প্রীতি নিজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভক্ত। ২০১৫ সালে মোদী প্রথম বার ব্রিটেন সফরে এসে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বক্তৃতা দেন। সেখানেও প্রীতিই ছিলেন পুরোভাগে।

গুজরাতি বাবা-মায়ের সন্তান প্রীতির জন্ম ব্রিটেনে। তাঁর বাবা-মা ১৯৬০-এর দশকে উগান্ডা থেকে পালিয়ে এসে ব্রিটেনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রীতিকে মন্ত্রিসভায় আনার পরেই উঠছে নানা প্রশ্ন। হাউস অব কমন্সে বিরোধী নেতা জেরেমি করবিন আজ বলেছেন, ‘‘দেশের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন। ফের মৃত্যুদণ্ড বলবৎ করবেন না— এই আশ্বাস কি দিতে পারেন উনি?’’ যদিও কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্দরে খবর, বরিস এমন কাউকেই চাইছিলেন, যিনি কড়া হাতে অপরাধ দমন করতে পারবেন। সম্ভাব্য জঙ্গি হামলার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করবেন তিনি।

প্রীতি নিজেও গত কাল বলেছেন, ‘‘আমার দেশ, দেশের মানুষকে নিরাপদে রাখতে যা করার প্রয়োজন, করব।’’ ২০১১ সালে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন তিনি। যদিও ১৯৬৫ সাল থেকেই ব্রিটেনে তা রদ হয়ে গিয়েছে। তবে আট বছর আগে প্রীতি বলেছিলেন, ‘‘অপরাধের বিচার করার ব্যবস্থা থাকলেও সেটা কেবলই ব্যর্থ হয় এবং খুনি ও ধর্ষকদের মতো অপরাধী বারবার একই অপরাধ করে যায়। এটা মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর। আর সেই কারণেই একা হলেও আমি মৃত্যুদণ্ড ফিরিয়ে আনার পক্ষে।’’ যদিও ২০১৬ সালে আবার প্রীতি বলেন, তিনি আগেকার অবস্থানের সঙ্গে সহমত নন। সে বার তিনি সমকামী বিবাহের বিরুদ্ধে ভোট দেন। এ বিষয়েও তিনি কট্টরপন্থী ভাবনা নিয়েই চলেন বলে দাবি।

টেরেসা মে-র মন্ত্রিসভা থেকে প্রীতিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তখন আন্তর্জাতিক-সম্পর্ক উন্নয়নমন্ত্রী ছিলেন তিনি। জেরুসালেমে ছুটি কাটাতে গিয়ে ইজ়রায়েলি রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সরকারি সম্মতি ছাড়াই বৈঠক করার অভিযোগ ওঠে প্রীতির বিরুদ্ধে। পশ্চিম এশিয়ায় নিজের বিদেশনীতি চালানোর অভিযোগও উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এই সব বিতর্কের জেরে এ বার বরিসের মন্ত্রিসভায় প্রীতির মন্ত্রী হওয়া নিয়ে প্রশ্ন ছিল বিস্তর। কিন্তু বরিস নিজে সে সবে পাত্তা না দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছেন এই ভারতীয় বংশোদ্ভূতকে। পার্লামেন্টে টেরেসার ব্রেক্সিট-চুক্তির বিরুদ্ধে তিন বার ভোট দিয়েছেন প্রীতি। বরিসের মতো ‘লিভ-ক্যাম্পেন’-এ জোরদার উপস্থিতি প্রীতিরও।

Priti Patel Britain Brexit Boris Johnson
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy