Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিতরের বিদ্বেষই বেরিয়ে আসছে, বলছেন প্রবাসীরা

হোয়াইট হাউসের সামনে ঝান্ডা হাতে বিক্ষোভ কিংবা ওয়াশিংটনের রাস্তায় ইতস্তত দাঁড়িয়ে থাকা প্ল্যাকার্ড হাতে জনতাকে দেখে ধারণা করে নিলে ভুল হবে। ট্রাম্প জমানার আমেরিকায় এটাই একমাত্র সত্যি নয়।

প্রতিবাদ: হোয়াইট হাউসের সামনে প্রবাসী ভারতীয়দের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

প্রতিবাদ: হোয়াইট হাউসের সামনে প্রবাসী ভারতীয়দের বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র

সোমা মুখোপাধ্যায়
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৭ ০২:৪০
Share: Save:

হোয়াইট হাউসের সামনে ঝান্ডা হাতে বিক্ষোভ কিংবা ওয়াশিংটনের রাস্তায় ইতস্তত দাঁড়িয়ে থাকা প্ল্যাকার্ড হাতে জনতাকে দেখে ধারণা করে নিলে ভুল হবে। ট্রাম্প জমানার আমেরিকায় এটাই একমাত্র সত্যি নয়। নতুন প্রেসিডেন্টের নীতি নিয়ে আপত্তি আছে অনেকেরই। কিন্তু তার পরেও এই দেশে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে গেল-গেল রব তুলতে রাজি নন আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয়দের একটা বড় অংশই। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিনরাও মনে করেন, ছবিটা মোটেও তেমন বদলায়নি যাতে তড়িঘড়ি বাক্স-প্যাঁটরা গোছানোর কথা ভাবতে হবে। অতএব আমেরিকা আছে আমেরিকাতেই!

এ দেশে আসার পর দিনই হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভ চোখে পড়ল। ঝান্ডা হাতে যাঁরা দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁদের এক জনের কাছে প্রশ্ন ছিল, ঠিক কী চাইছেন? পরমেন্দ্র সিংহ নামে এক জন বললেন, ‘‘ক’দিন আগে এখানে এক জন শিখকে গুলি করা হয়েছে। তার আগে এই দেশ ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এত বছর এ দেশে আছি। এখন আগাছার মতো উপড়ে ফেলতে চাইলে তো মানতে পারব না।’’

আর এক দল দাঁড়িয়ে ছিলেন একটু দূরে। তাঁদের হাতের পোস্টারে লেখা, ‘ইমপিচ অ্যান্ড লক হিম আপ।’

ডাক্তার, অধ্যাপক, বিজ্ঞানী, ব্যাঙ্ককর্মী, সাংবাদিক— কে নেই আমেরিকা প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে যাঁদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হলো, প্রত্যেকের কথার মূল সুর একটাই। আগেও এই ভারতীয় বিদ্বেষ ছিল না, তা নয়। কিন্তু সেটা ছিল ভিতরে ভিতরে। এখন ছাইয়ের তলা থেকে আগুন বেরিয়ে আসছে। কিন্তু এটা বেশি দিন চলতে পারবে না। আদতে কলকাতার মেয়ে, বর্তমানে নিউইয়র্কবাসী বিদিশা রায়ের কথায়, ‘‘সাদা চামড়া, কালো চামড়া দু’ধরনের মার্কিন নাগরিকদের একটা বড় অংশই ভারতীয়দের সহ্য করতে পারে না। ওঁরা ভাবেন, উড়ে এসে জুড়ে বসে ওঁদের অধিকারে ভাগ বসাচ্ছি। কিন্তু ভারতীয়রা এখানে প্রত্যেকটা কাজে এমন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যে কেউ তাড়াতে চাইলেই সেটা সফল হবে না।’’ প্রশাসনও বলছে সে কথাই। কানসাসে নিহত ইঞ্জিনিয়ার শ্রীনিবাস কুচিভোটলার কথা উল্লেখ করে প্রশাসনিক তরফে বার বার প্রচার চলছে, ব্যক্তিবিশেষের ঘৃণা দিয়ে দেশটাকে যেন বিচার করা না হয়।

আরও পড়ুন: লন্ডন হামলার দায় নিল আইএস, গ্রেফতার ৮

নির্বাচনের আগে তৈরি হওয়া হিন্দু জোটে ট্রাম্পকে নিয়ে উচ্চাশার শেষ ছিল না। তাদের এক প্রতিনিধির বক্তব্য, ‘‘ট্রাম্প তো বলেইছেন হিন্দুদের ভালবাসেন, ভারতকে ভালবাসেন। তা হলে এত সংশয় কীসের?’’

‘‘ভারত তো শুধু হিন্দুদের নয়। ভারতকে ভালবাসতে হলে সব ধর্মের মানুষকেই ভালবাসতে হবে’’— পাল্টা বললেন হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভকারীদের এক জন। হিন্দু জোটের সঙ্গে যাঁদের সাপে-নেউলে সম্পর্ক!

মার্কিন সরকারের ‘ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম’-এর অংশগ্রহণকারী হিসেবে এই দেশটায় ঢোকার সময় বিমানবন্দরের দোকানে চোখে পড়েছিল ট্রাম্পের মুখ বসানো মূর্তি। তাতে পরানো টি-শার্টে লেখা ‘টাইম টু মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন।’ এর ঠিক পাশেই আর একটা মূর্তি। তার মাথা নিচু। কোনও মুখ বসানো নেই। তবে টুপিতে লেখা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেন।’

এর মাথা নিচু কেন? সাদা চামড়ার তরুণ দোকানি জবাব দিলেন, ‘‘বিতর্কগুলো আর ভাল লাগছে না। তাই লজ্জায় মাথা নিচু। বাইরের দেশের মানুষ ছাড়া এ দেশটা আমেরিকা হয়েই উঠতে পারত না। চাকরি, সুযোগ-সুবিধা বাড়ুক সেটা চাই, আবার সবাইকে নিয়েও থাকতে চাই। এটাই আসল আমেরিকা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NRI White House
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE