বাংলাদেশে সেনাবাহিনীতে মৌলবাদী প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে ভারত-বিরোধী তৎপরতাও পুরোমাত্রায় রয়েছে বলে সূত্রের খবর। ওই সূত্রটি জানাচ্ছে, এই তৎপরতা চলেছে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজ়মির নেতৃত্বে। যিনি জামায়াতের প্রাক্তন প্রধান গোলাম আজ়মের ছেলে। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে কার্যত নিষ্ক্রিয় করে তিনি ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি আর্মি’ গঠনের চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া, আনসার আল-ইসলামের জঙ্গিদের দিয়ে ভারতে হামলা চালানোর জন্য আত্মঘাতী বাহিনী তৈরি করা হচ্ছে, দাবি তেমনই।
ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশের মতে, প্রশাসনের শীর্ষ স্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে জামায়াতে ইসলামী মনোভাবাপন্নদের বসানো হয়েছে। সেনাবাহিনীতে ইসলামিকরণের প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছে মৌলবাদীরা। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ওই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে পাকিস্তানপন্থী অবসরপ্রাপ্ত এবং বরখাস্ত হওয়া সেনা অফিসারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করছেন আজ়মি। ওই সূত্রটির দাবি, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের অফিসারেরা নিয়মিত বাংলাদেশ যাচ্ছেন, তাঁরা ঢাকার মহাখালী ডিওএইচএস এলাকায় একটি অফিস তৈরি করেছেন। বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে করাচি বন্দর থেকে সরাসরি অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে একটি জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে গোপনে তা নামানো হয় এবং পরে সেগুলি কক্সবাজারের রামু এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মনে করা হয়, আইএসআইয়ের সহযোগিতায় আমেরিকার তরফে আরাকান আর্মির জন্য ওই অস্ত্র পাঠানো হয়েছিল।
বাংলাদেশের একটি সূত্রের দাবি, মূলত তিনটি লক্ষ্যে কাজ করেছেন আজ়মি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাসান নাসির। ওই সূত্রটির দাবি, আজ়মি ও নাসির সেনাবাহিনীতে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। যাতে সেনাবাহিনী এবং ডিজিএফআই-কে ধ্বংস করে নাসিরের নেতৃত্বে ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি আর্মি’ গঠন করা যায়। জানা গিয়েছে, জামায়াত-শিবির ও এবি পার্টির পাশাপাশি, জাতীয় নাগরিকপার্টি-র কয়েক জন নেতা এই পরিকল্পনার অংশ।
সূত্রের খবর, আজ়মির আর এক সঙ্গী বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। আল-কায়দার দক্ষিণ এশিয়া শাখা— আনসার আল-ইসলামের এক জন শীর্ষ নেতা, জিয়া এবং আজ়মি একসঙ্গে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এই দল ভারতে নাশকতা চালাবে বলে গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য। সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান কয়েক বার পাকিস্তানে গিয়ে সে দেশের সেনাপ্রধান সৈয়দ আসিম মুনির এবং আইএসআই প্রধান-সহ বহু পাক অফিসারের সঙ্গে বৈঠক করেন। গোয়েন্দা সূত্রের মতে, আজ়মি আত্মঘাতী বাহিনী তৈরির কাজ শুরু করেছেন। এতে আইএসআই এজেন্ট লেফটেন্যান্ট কর্নেল হাসিনুর রহমানকে তাঁর সহকারী প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছেন। তাঁর দায়িত্ব কক্সবাজার শিবিরে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ঢাকা-সহ অন্যান্য স্থানে আটকে থাকা পাকিস্তানিদেরনিয়োগ করা এবং তাদের জিহাদি প্রশিক্ষণ দেওয়া।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)