পেশায় পুলিশ হতে পারেন, কিন্তু তিনিও তো বাবা!
পেশাগত কর্তব্য বা দায়িত্বের পাশাপাশি তাই সে দিন ছোট্ট আয়লানের দেহ কোলে তুলে নিয়েছিলেন পিতৃত্বের টানেই!
দেহটি কোলে তুলে নেওয়ার আগে এক মুহূর্তের জন্য তাঁর নিজের ছেলের মুখটা মনে পড়েছিল বলে জানিয়েছেন মেহমেট সিপ্লাক। বদরামের সমুদ্রসৈকতে ভেজা বালির মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা আয়লানের দেহ উদ্ধার করেন তুরস্কের ওই পুলিশ আধিকারিক। এর আগে বহু কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। কিন্তু, এ ভাবে ভেঙে পড়েননি কোনও দিন।
বাবা আবদুল্লার হাত ফস্কে সে দিন শরণার্থী শিশু আয়লান উত্তাল সমুদ্রে পড়ে গিয়েছিল। পরে বালিতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকতে দেখা যায় মৃত আয়লানকে। সেই ছবি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে গোটা দুনিয়ায়। বিশ্ব-কাঁদানো সেই ছবির পাশাপাশি সিপ্লাকের কোলে আয়লানের দেহ— এই ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। সংবাদ মাধ্যমে সিপ্লাক বলেন, ‘‘সে দিনের সেই দৃশ্য কিছুতেই ভুলতে পারছি না। প্রথমে শিশুটিকে দেখে ভেবেছিলাম বেঁচে রয়েছে। ওর দিকে এগিয়ে যাই। কিন্তু, কোলে তোলার পরেই বুঝতে পারি ও আর বেঁচে নেই। ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম।” তিনি জানান, তাঁরও ছ’বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সমুদ্রে ভেসে আসা আয়লানকে দেখে এক মুহূর্তে চোখের সামনে তাঁর ছেলের মুখটি ভেসে উঠেছিল। পুলিশ নয়, এক জন বাবা হিসেবেই সে দিন আয়লানকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন সিপ্লাক। শোকে বিহ্বল হয়ে তিনি বলেন, “ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না মর্মান্তিক সেই অনুভূতি।”
ছোট্ট আয়লানকে কোলে নিয়ে তাঁর এই ছবি বিশ্ব জুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছে। যদিও সে কথা জানেন না তিনি জানেন না বলেই দাবি করেছেন। সিপ্লাক বলেন, “আমি আমার কর্তব্য পালন করেছি মাত্র!” এক জন পুলিশকর্মী হিসেবে তিনি সে দিন তাঁর কর্তব্য পালন করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু, ছোট্ট আয়লানের কাছে এক জন বাবা হিসেবেই যে ছুটে গিয়েছিলেন সে কথা স্বীকার করেছেন সিপ্লাক। প্রার্থনা করেছিলেন শিশুটি যেন বেঁচে থাকে।