Advertisement
E-Paper

রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইস্তানবুলে বৈঠক! শান্তি আলোচনায় কি ‘অশান্তির’ সম্ভাবনা?

রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার পর এখনও পর্যন্ত মস্কো বা কিভ, কোনও পক্ষের তরফেই বৈঠকে যোগদান না-করার কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। তার পরেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত বৈঠক হবে তো?

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৫ ১৪:০২
(বাঁ দিকে) ভ্লাদিমির পুতিন। ভলোদিমির জ়েলেনস্কি (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) ভ্লাদিমির পুতিন। ভলোদিমির জ়েলেনস্কি (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

রাশিয়ার ৪০টি বিমান ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। তার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই ইস্তানবুলে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছে দুই দেশ, যা পূর্বনির্ধারিত। উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা। রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার পর এখনও পর্যন্ত মস্কো বা কিভ, কোনও পক্ষের তরফেই বৈঠকে যোগদান না-করার কোনও বার্তা দেওয়া হয়নি। তার পরেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত বৈঠক হবে তো? বৈঠক হলেও উদ্দেশ্যসাধন হবে কি? রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে কথা বলেছেন আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো। দুই দেশ যাতে সরাসরি শান্তিপূর্ণ আলোচনা করে, তার উপরও জোর দিয়েছেন। এর পরেও ‘অনমনীয়’ দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক কতটা সফল হবে, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

গত মাসে তুরস্কের রাজধানী ইস্তানবুলেই বৈঠকে বসেছিল রাশিয়া এবং ইউক্রেন। সেখানে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ঐকমত্য হয়নি দু’পক্ষের মধ্যে, তবে বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুই দেশ। এর পরে সোমবার কোনও পূর্বশর্ত এবং তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই আবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকে বসার কথা দুই পক্ষের। স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় ইস্তানবুলের সিরাগান প্রাসাদে বৈঠকে বসার কথা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের। ওই প্রাসাদ এখন বিলাসবহুল হোটেল। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি জানিয়েছিলেন, তাঁর দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ ইস্তানবুলে রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন ক্রেমলিনের সহকারী ভ্লাদিমির মেদিনস্কি।

এই মেদিনস্কি ইস্তানবুলে প্রথম দফার বৈঠকের পরে ফরাসি জেনারেল নেপোলিয়াম বোনাপার্টকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিলেন, যুদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা একই সঙ্গে চলা উচিত। জল্পনা, মেদিনস্কি যদি নিজের এই মন্তব্যে অনড় থাকেন, তা হলে সোমবার মুখোমুখি আলোচনায় বসার কথা রাশিয়া এবং ইউক্রেনের। সে ক্ষেত্রে, রবিবার দুপুরে ইউক্রেন যে ৪০টি রুশ সামরিক বিমান ধ্বংস করেছে, তার প্রভাব সোমবারের বৈঠকে পড়া উচিত নয়। কিন্তু বৈঠকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে দুই দেশ কতটা সহমত হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

রাশিয়া জানিয়েছে, তারা একটি ‘স্মারকলিপি’ আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছে ইউক্রেনকে। তাতে লেখা থাকবে শান্তি নিয়ে তাঁদের শর্ত। অন্য দিকে, জ়েলেনস্কি রবিবারই তাঁর ‘শর্ত’ সমাজমাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রথম, পুরো এবং নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি। দ্বিতীয়, বন্দিদের মুক্তি। তৃতীয়, অপহৃত শিশুদের ফেরত।’’ পাশাপাশি স্মারকলিপি তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন রাশিয়াকে। সে কথা স্বীকার করেছেন ক্রেমলিনের সহকারী মেদিনস্কি। জ়েলেনস্কি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসার ডাকও দিয়েছেন। তাঁর মতে, দুই রাষ্ট্রনেতাই একমাত্র মূল বিষয়গুলির সমাধান করতে পারেন। মস্কোর তরফে যদিও আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিনিধিদল ‘চুক্তি’তে সহমত হলে তবেই জ়েলেনস্কির সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসতে পারেন পুতিন। তার আগে নয়।

প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। বার বার জ়েলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর দাবি তুলেছে রাশিয়া। তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা দাবি তুলেছে, সংঘাতের ‘মূল কারণগুলি’ দূর করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম ছিল, নেটোয় ইউক্রেনের যোগদান, ইউক্রেনে সামরিক বাহিনীর বহরে কাটছাঁট। কিভ এবং পশ্চিমের দেশগুলি স্পষ্টই জানিয়েছে, এ সব করে রাশিয়া আসলে ইউক্রেনের জমি দখল করতে চাইছে। ফলে কিভ এবং মস্কো আলোচনায় বসলেও এই দাবি, পাল্টা দাবির কি সুরাহা হবে, সেই প্রশ্ন কিন্তু থাকছে।

এর মধ্যেই আমেরিকা আবার ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে মুখোমুখি বসে শান্তি আলোচনা করার উপর জোর দিয়েছে। ট্রাম্প এমনটাই চান বলে রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বিদেশসচিব রুবিয়ো। সে কথা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস। ট্রাম্পের দূত কিথ কেলগের ইঙ্গিত, ইস্তানবুলে দুই দেশের আলোচনায় উপস্থিত থাকতে পারেন আমেরিকার প্রতিনিধি। তবে কোন স্তরে, তা জানায়নি।

তিন বছর যুদ্ধের পরে প্রথম বার কোনও মধ্যস্থতাকারী ছাড়াই গত ১৭ মে মুখোমুখি আলোচনায় বসেছিল দু’পক্ষ। যুদ্ধবিরতি নিয়ে ঐকমত্য না-হলেও তুরস্কের ইস্তানবুলের রয়্যাল প্যালেসে আয়োজিত ওই বৈঠকে যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মস্কো এবং কিভ। দু’পক্ষই ১০০০ জন করে যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা গত সপ্তাহে পালিত হয়েছে। তার পরে রুশ সামরিক বিমান ধ্বংস করেছে ইউক্রেন। এই আবহে ইস্তানবুলে দ্বিতীয় বার মুখোমুখি বৈঠকে বসতে চলেছে যুযুধান দুই দেশ। আলোচনায় কি যুদ্ধবিরতি নিয়ে সহমত হবে দুই দেশ? তাকিয়ে বিশ্ব।

Istanbul Russia Ukraine Conflict
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy