সোজা আঙুলে ঘি তোলার চেষ্টা দীর্ঘ দিন হয়েছে। কিন্তু লাভ হচ্ছে না। এ বার কি তাই আঙুল বাঁকানোর কথা ভাবছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন? সম্প্রতি তাঁর দেশে পর পর দু’টি পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা সফল হয়েছে। তার পরেই এই জল্পনা শুরু হয়েছে। কেন এই সময় হঠাৎ এই ধরনের অস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করতে গেল ক্রেমলিন? ট্রাম্পকে কি পরোক্ষে কোনও বার্তা দেওয়ার চেষ্টা চলছে? নাকি সবটাই কাকতালীয়?
আমেরিকার কাছে দূরপাল্লার শক্তিশালী টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র অনেক দিন ধরে চেয়ে এসেছে ইউক্রেন। ওই অস্ত্র হাতে পেলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ আরও সহজ, আরও ধ্বংসাত্মক হবে। ট্রাম্প এখনও তাতে সায় দেননি। তবে সম্প্রতি পেন্টাগন টমাহকে ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়া হলে আমেরিকার কোনও সমস্যা হবে না। যদিও রাজনৈতিক দিক বিশ্লেষণ করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্পই। অনেকের মতে, টমাহক নিয়েই আসলে ট্রাম্পকে চাপে রাখতে চান পুতিন। তাই এই নয়া কৌশল।
আরও পড়ুন:
রাশিয়া কিছু দিন আগে বুরেভেস্টনিক ক্ষেপণাস্ত্র সফল ভাবে পরীক্ষা করেছে। এটি একটি পরমাণু অস্ত্রবাহী রাশিয়ান ক্রুজ় ক্ষেপণাস্ত্র, যা খুব কম উচ্চতায় উড়ে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে পারে। এর পর গত বুধবার পোসেইডন-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণও সফল হয়েছে। পোসেইডন একটি দূরপাল্লার পরমাণু অস্ত্রবাহী ড্রোন, যা সমুদ্রের নীচ দিয়ে লক্ষ্যবস্তু পর্যন্ত পৌঁছোতে পারে। উভয় অস্ত্রের সফল পরীক্ষার কথাই ঘোষণা করেছেন পুতিন নিজে। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে দাবি, এই ধরনের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ আসলে অনেক আগেই পরিকল্পিত ছিল। সময় বুঝে তা কার্যকর করল মস্কো। ট্রাম্পকে বিশেষ বার্তা দিতে চাওয়ার জল্পনাও তাতে জোরদার হল। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, আসলে রাশিয়া হঠাৎ এই ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা করে আমেরিকাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছে তাদের ক্ষমতা। তারাও যে পরমাণু শক্তিধর, তা বোঝানো হচ্ছে।
টমাহক নিয়ে অবশ্য পৃথক বার্তা দিয়েছে ক্রেমলিন। রাশিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম তাস-এ রাশিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মারিয়া জ়াখারোভা জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র দিলে আদতে তাতে কোনও লাভ হবে না। যুদ্ধের কোনও সমাধান হবে না।
আমেরিকার কুর্সিতে বসার আগে থেকেই ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তিনি অনায়াসে থামিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এখনও তার কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। একাধিক বৈঠক, ফোনালাপ ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাম্প প্রকাশ্য়েই জানিয়েছেন, তিনি হতাশ। কিছু দিন আগে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের সাক্ষাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠক আয়োজন করা যায়নি। ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধ থামার বিষয়ে ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি মিললে তবেই তিনি আবার পুতিনের মুখোমুখি বসবেন। তা না হলে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনও আমেরিকা-সহ পশ্চিমি দুনিয়ার বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ রয়েছে। এর মাঝেই পরমাণু অস্ত্রবাহী ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের পরীক্ষা জল্পনা বাড়িয়ে দিল।