তৈলস্ফটিকে আবদ্ধ ব্যাঙের ফসিল।
একটু ট্যারাবাঁকা দেখতে হলুদ রঙের পাথর মনে হবে প্রথমে। খুব কাছ থেকে দেখলে বোঝা যাবে,হলুদ রঙের তৈলস্ফটিক বা অ্যাম্বার। তার মধ্যে দুটো পায়ের মতো অংশ। পায়ের মধ্যে আবার চারটে হাড় উঁকি দিচ্ছে। উপরের দিকে একটা গোলাকার কালো রঙের দাগ। ওটা মাথার খুলি। দুটো চোখের গর্ত একেবারে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এটি অ্যাম্বারে জড়ানো অবস্থায় একটা ব্যাঙের জীবাশ্ম (ফসিল)। এক ইঞ্চির চেয়েও কম লম্বা ৯.৯ কোটি বছরের প্রাচীন একটি ব্যাঙের জীবাশ্ম মিলেছিল উত্তর মায়ানমার থেকে। মিলেছিল মোট চারটি তৈলস্ফটিক। তবে একটি থেকেই আস্ত জীবাশ্মটি নিয়ে গবেষণা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এটি বর্ষা অরণ্যের ব্যাঙের প্রাচীনতম জীবাশ্ম। নেচার পত্রিকায় এই সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
ফ্লোরিডার ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের তরফে এই আবিষ্কার সম্পর্কে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রাচীনতম বর্ষা অরণ্যের ব্যাঙ এটি। ক্রান্তীয় অরণ্যে, ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় থাকত এই ব্যাঙটি। এটি ক্রিটেশিয়াস যুগের প্রাণী। অর্থাৎ ডাইনোসর তখন পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জুরাসিকের পরেই পৃথিবীতে এসেছিল ক্রিটেশিয়াস যুগ। আনুমানিক ৬ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগের সময় এটি।
ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের তরফে সহকারী কিউরেটর ডেভিড ব্ল্যাকবার্ন সংবাদ সংস্থাকে বলেন, ‘‘ক্রিটেশিয়াস যুগের ব্যাঙ খুঁজে পাওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুর্লভ। কারণ পোকামাকড় তৈলস্ফটিকে আবদ্ধ হলেও ব্যাঙের সন্ধান প্রথমবার। এক্ষেত্রে হাড়-সহ গোটা তৈলস্ফটিকটি ছিল ত্রিমাত্রিক। এই জীবাশ্ম থেকে ব্যাঙের নয়া প্রজাতি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও খবর: ডারউইন, নিউটনদের পাশেই অন্তিম শয্যা হকিংয়ের
এক সঙ্গে নগ্ন ২৫০৫ মহিলা, গড়লেন বিশ্বরেকর্ড, কেন জানেন?
ব্ল্যাকবার্নের কথায়, ‘‘অপর একটি তৈলস্ফটিকে ব্যাঙের হাতের দুটি অংশ ও দেহাবশেষের ছাপ ছিল। দেখে মনে হবে গতমাসেই হয়তো মৃত্যু ঘটেছে ব্যাঙটির। এর আগে ডোমিনিকান রিপাবলিক থেকে চার কোটি বছরের পুরনো জীবাশ্ম মিললেও ৯.৯ কোটি বছরের পুরনো জীবাশ্ম, তাও আবার তৈলস্ফটিকে আবদ্ধ, একেবারেই প্রথমবার।’’ বেজিংয়ের ভূবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের লিডা শিং বলেন, ‘‘ব্যাঙ, টিকটিকি কিংবা মাকড়সা তৈলস্ফটিকে আবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া মানে এটি অত্যন্ত বিরল আবিষ্কার।’’
ব্ল্যাকবার্ন বলেন, আধুনিক ব্যাঙের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ নয়া প্রজাতিটি। এতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে, এটির কবজির হাড়ের অংশ, পেলভিস, কান ও পিঠের কিছু অংশ মেলেনি। সেগুলি হয়তো খুদে ব্যাঙটির দেহে তৈরি হয়নি। বা হারিয়ে গিয়েছে প্রকৃতির মাঝে। কিন্তু একটিমাত্র ব্যাঙই মিলেছে। এই প্রজাতির অন্য কোনও ব্যাঙের সন্ধান আগে মেলেনি। এই ব্যাঙের জীবাশ্মটি থেকে তাদের উদ্ভব এবং বিবর্তন সম্পর্কে অনেক তথ্যই জানা যাবে।
অ্যাম্বার হল গাছের ক্ষতস্থান থেকে নিঃসৃত একধরনের রেজিন, যা ক্ষতস্থানের সুরক্ষার জন্য তৈরি হয়। হাওয়ার সংস্পর্শে এলে যা ক্রমশ কঠিন হতে থাকে। তরল অবস্থায় থাকাকালীন ব্যাঙটি হয়তো পোকামাকড় খেতে এসেই এই তৈলস্ফটিকের সংস্পর্শে এসে এর মধ্যে আবদ্ধ হয়ে মারা যায়। অ্যাম্বারটি জমে গেলেও ব্যাঙটি এর ভিতরে নিশ্চল অবস্থায় থেকে যায় এবং জীবাশ্মে পরিণত হয়। সাত হাজার রকমের ব্যাঙের প্রজাতির অস্তিত্বের কথা জানলেও এই ধরনের বর্ষা অরণ্যের ব্যাঙের জীবাশ্ম মিলল প্রথমবার। এটি আধুনিক ব্যাঙের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy