—প্রতীকী চিত্র।
বছর দশেক আগের কথা। বিশ্ব জুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। জিন পরীক্ষায় তাঁর শরীরে ব্রাকা-১ জিনের উপস্থিতি ধরা পড়ে। জোলির মা মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ডিম্বাশয়ের ক্যানসারে মারা যান। এই দু’টি বিষয়কে মাথায় রেখে চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, জোলির ক্যানসার হওয়া প্রায় অবশ্যম্ভাবী। তাই সেই মারণরোগ প্রতিরোধে ২০১৩ সালে ‘প্রোফাল্যাকটিক ডাবল ম্যাসটেকটোমি’ করান জোলি। অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করে বাদ দেন দু’টি স্তনই। সেই নতুন করে ‘ম্যাসটেকটোমি’ শব্দটির সঙ্গে পরিচয় ঘটে বিশ্বের। অভিনেত্রী মিডিয়ার সামনে বিষয়টি প্রকাশ্যেও এনেছিলেন খুব ভেবেচিন্তে। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মহিলাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। গত এক দশকে সেটাই ঘটেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানও ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় আমেরিকার ‘ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট’ (এনসিআই)-এর একদল বিজ্ঞানী দাবি করলেন, ম্যাসটেকটোমির পরে স্তন পুনর্গঠনের পথ আবিষ্কার করেছেন তাঁরা। গবেষণাগারে ম্যাম্যারি গ্ল্যান্ড তৈরি করছেন তাঁরা, যা আসল মানবঅঙ্গের মতোই কাজ করবে।
স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন বা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাঁরা ম্যাসটেকটোমি করান, তার পরের সফরটাও তাঁদের জন্য মসৃণ হয় না। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অনেক সময় রোগীর শরীর থেকে কোষ নিয়ে কৃত্রিম ভাবে স্তন তৈরি করা হয়, অনেক সময় সিলিকন জেলের সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু তা কখনও আসল অঙ্গের মতো কাজ করে না। এনসিআই-এর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তাঁরা ইঁদুরের এমব্রায়ো কোষ ব্যবহার করে গবেষণাগারে ক্ষুদ্র (মিনিয়েচার) ম্যামারি গ্ল্যান্ড তৈরি করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, গবেষণাগারের পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই ক্ষুদ্র অঙ্গটি স্তনের মতোই আচরণ করেছে, এমনকি হরমোনের প্রভাবে দুধ নিঃসরণও করেছে। বিজ্ঞানী দলের নেতৃত্বে রয়েছেন এনসিআই-এর গবেষক শৌনক সাহু এবং শ্যাম শরন। গবেষণাপত্রটি ‘ডেভেলপমেন্টাল সেল’ নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শুধু ক্যানসার নয়, গর্ভাবস্থায় হরমোনের প্রভাবে মহিলাদের শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে, স্তনের নানা ব্যাধি দেখা দেয়। এ সব ক্ষেত্রেও চিকিৎসার রাস্তা দেখাতে পারে তাঁদের গবেষণা। শৌনক জানান, ‘আলনার ম্যামারি সিন্ড্রোম’-এর জন্য দায়ী টিবিএক্স৩ জিন মিউটেশন। এই অসুখে স্তন ঠিকমতো তৈরি হয় না। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের তৈরি মডেলের সাহায্যে এ ক্ষেত্রেও সমাধান মিলতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, গবেষণাগারে এ ভাবে মানব-অঙ্গের সদৃশ অঙ্গ (অর্গানয়েড) তৈরি চিকিৎসা বিজ্ঞানে একপ্রকার বিপ্লব। এর সাহায্যে এক দিকে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কলাকোষ প্রতিস্থাপণ করা সম্ভব হবে, অন্য দিকে রোগীবিশেষে নির্দিষ্ট চিকিৎসার (পার্সোনালাইজ়ড ট্রিটমেন্ট) সন্ধান মিলবে। ‘রিজেনারেটিভ মেডিসিন’ (মানবকোষ পুনর্গঠন ও তার কাজ অক্ষত রাখা)-ও তৈরি করা যাবে। সেই সঙ্গে, জোলির মতো কারও শরীরে ব্রাকা জিনে মিউটেশন ঘটে থাকলে, তাঁর সত্যিই ভবিষ্যতে ক্যানসার হবে কি না, অর্গানয়েডের সাহায্যে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে অ্যানিমাল ট্রায়ালে এই গবেষণা সফল হলেও মানবদেহে পরীক্ষা বাকি রয়েছে। শৌনক বলেন, ‘‘আমাদের থেরাপিতে, রোগীর কোষ থেকে ম্যামারি গ্ল্যান্ড পুনর্গঠন করা হবে। ফলে মানবদেহে ‘ইমিউন রিজেকশন’-এর ভয় কম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy