E-Paper

কেন ফিরে আসে স্তন ক্যানসার, রহস্যভেদের দাবি

গবেষণা শুরু করেছিলেন কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’ (এনআইবিএমজি)-এর বিজ্ঞানীরা। দু’বছরের লাগাতার চেষ্টায় রহস্যভেদ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:৫৫
বিজ্ঞানীরা জানান, স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে পরিচিত ধরন— ইআর/পিআর (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) পজ়িটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ।

বিজ্ঞানীরা জানান, স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে পরিচিত ধরন— ইআর/পিআর (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) পজ়িটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ। —প্রতীকী চিত্র।

কেউ কেউ ওষুধ পড়তেই একেবারে সুস্থ হয়ে যান, যে মারণ রোগ শরীরে বাসা বেঁধেছিল, তা আর ফিরে আসে না। কারও ক্ষেত্রে কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন করে দেখা দেয় উপসর্গ। ফিরে আসে ক্যানসার। স্তন ক্যানসারের ক্ষেত্রে প্রায়শই এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। অনেকে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটে। এর কারণ জানতে গবেষণা শুরু করেছিলেন কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’ (এনআইবিএমজি)-এর বিজ্ঞানীরা। দু’বছরের লাগাতার চেষ্টায় রহস্যভেদ হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা। তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘কমিউনিকেশন বায়োলজি’ জার্নালে।

এই গবেষণায় যুগ্ম ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক নিধান বিশ্বাস এবং টাটা মেমোরিয়াল সেন্টারের ডিরেক্টর সুদীপ গুপ্ত। এ ছাড়াও যুক্ত ছিলেন ‘ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউট’ (আইএসআই)-এর বিজ্ঞানী পার্থপ্রতিম মজুমদার, এনআইবিএমজি-র অধ্যাপক বিজ্ঞানী অরিন্দম মৈত্র।

বিজ্ঞানীরা জানান, স্তন ক্যানসারের সবচেয়ে পরিচিত ধরন— ইআর/পিআর (ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন) পজ়িটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ। এই ক্যানসারে অ্যান্টি-ইস্ট্রোজেন বা অ্যারোমাটিজ় ইনহিবিটরের মতো হরমোন থেরাপির সাহায্যে রোগীর চিকিৎসাও সম্ভব। কিন্তু বহু রোগী ক্যানসার-মুক্ত হয়ে গেলেও কিছু রোগীর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা কাজ দেয় না। ঘনঘন ক্যানসার ফিরে আসে। এই ‘ড্রাগ রেজ়িসস্ট্যান্স’ বা ওষুধে কাজ না দেওয়ার জিনগত কারণ রয়েছে কি না, তা স্পষ্ট ছিল না এত দিন। নিধান জানান, রহস্যের সমাধান করতে তাঁরা প্রথমেই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে জিনোমিক সিকোয়েন্সিং করেন।

গবেষকদলের অন্যতম সদস্য পিএইচডি ছাত্র অর্ণব ঘোষ জানান, তাঁরা ইআর/পিআর পজ়িটিভ এবং এইচইআর নেগেটিভ রোগীদের বেছে নিয়েছিলেন গবেষণার জন্য, যে হেতু এই ধরনের স্তন ক্যানসারই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। দু’ধরনের রোগীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এক দল, যাঁরা হরমোন থেরাপিতে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন (পাঁচ-ছ’বছর হয়ে গিয়েছে ক্যানসার ফিরে আসেনি, কোনও উপসর্গও নেই)। অন্য দলটি হল, যাঁদের অল্প সময়ের মধ্যে ক্যানসার ফিরে এসেছে।

অর্ণব জানান, যাঁদের শরীরে ক্যানসার ফিরে এসেছে, তাঁদের তিনটি জিনে ‘রেজ়িসট্যান্স মিউটেশন সিগনেচার’ দেখা গিয়েছে। টিপি৫৩, পিআইকে৩সিএ, ইএসআর১— এই তিনটি জিনে মিউটেশন ঘটেছে ওই সব রোগীর। এঁদের ‘জিনোম ইনস্টেবিলিটি’-ও রয়েছে। অর্থাৎ এঁদের টিউমার কোষে ডিএনএ খন্ডবিখণ্ড হয়ে ক্রোমোজ়োম এর পুনর্বিন্যাস ঘটেছে। ডিএনএ মেরামতির কাজ শরীরে হচ্ছে না। তৃতীয় ‘সিগনেচার’ হচ্ছে টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য কমে যাওয়া।

নিধান জানান, তাঁদের গবেষণায় অনেকটাই স্পষ্ট, এই সাব-টাইপের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত কিছু রোগী চিকিৎসায় কেন সুস্থ হচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘‘টিউমার অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়ার পরে যদি জেনেটিক পরীক্ষা করে দেখা যায় যে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলি রয়েছে, তা হলে রোগীকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। সামান্য উপসর্গ দেখা গেলেই তা চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ করা যাবে, দরকারে ফের অস্ত্রোপচার করা যাবে।’’

ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানান, ইআর/পিআর পজ়িটিভ এবং এইচইআর২ নেগেটিভ— এই সাবটাইপের ক্যানসার হলে রোগীর সেরে ওঠার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কিন্তু বেশির ভাগ রোগী সুস্থ হয়ে গেলেও কিছু ব্যতিক্রম লক্ষণীয়। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা চিকিৎসায় সুস্থ হচ্ছেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে যদি ওই জিনগুলি দায়ী হয়, জিনোম ইনস্টেবিলিটি কাজ করে, সেই তথ্য জানতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভবিষ্যতে চিকিৎসায় উপকার হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cancer Cancer treatment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy